এ মাসআলার ভিত্তি হলো মৃতদের শুনার সঠিকতার ওপর, না শুনার ওপর নয়। অর্থাৎ মৃতরা কি তাদের ওপর সালামকারীর সালাম এবং কথা শুনতে পায়? উলামায়ে কেরামের মধ্যে এ ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে।[1]

প্রমাণের মাধ্যমে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ও শক্তিশালী মত হয়তো সেটাই যিনি বলেছেন যে, মৃতদের শ্রবণশক্তি রয়েছে। আর তা সেই অবস্থাসমূহে যার ওপর কুরআন ও সহীহ হাদীস প্রমাণ করে। যেমন, তার থেকে ফিরে যাওয়া আত্মীয় স্বজনদের জুতার আওয়াজ শুনা ও কোনো মুসলিমের সালাম দেওয়া ইত্যাদি।

অনেক মুহাকিক উলামা ঐক্যমত পোষণ করেছেন। যেমন, শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়া, আল্লামা ইবনু কাইয়্যেম, হাফেয ইবন কসীর ও হাফেয কুরতুবীসহ অন্যান্য উলামায়ে কেরাম।[2] কিন্তু শোনার পদ্ধতি কেবল আল্লাহ তা‘আলাই ভালো জানেন।

মোটকথা, যদি এমনও বলা হয় যে, মৃত ব্যক্তিগণ সাধারণত শুনে থাকে, তবুও তাদের কবরে তাদের রূহ এবং শরীরের আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা ইহকালীন জীবন থেকে ভিন্নতর। যেমন, তাদের মৃত্যুতে তাদের নড়াচড়া বা পিছনে ফেলে আসা কাজ কর্মের ওপর কোনো প্রতিক্রিয়া করা, এগুলো বন্ধ হয়ে যায়।

এ পরিপেক্ষিতে বলা যায় যে, একথা বিশ্বাস করা প্রত্যেক নর-নারীর ওপর একান্ত কর্তব্য যে, মৃতদের নিকট দো‘আ চাওয়া, তাদের নিকট কোনো কিছু চাওয়া, তাদেরকে মাধ্যম মানা ও তাদের জন্য কোনো মান্নত করা শরী‘আত পরিপন্থী এবং জ্ঞানের অজ্ঞতা প্রকাশ করার নামান্তর।

শরী‘আত পরিপন্থী হলো এতে আল্লাহর সাথে অংশিদার করা হয়, যা ইসলাম থেকে বহিষ্কার করে দেয় অথবা এর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [الجن: ١٨]

“এবং সকল মসজিদ আল্লাহর জন্যই। বিধায় তোমরা তাঁর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না”। [সূরা আল-জিন্ন, আয়াত: ১৮]

তিনি আরো বলেন,

﴿وَمَن يَدۡعُ مَعَ ٱللَّهِ إِلَٰهًا ءَاخَرَ لَا بُرۡهَٰنَ لَهُۥ بِهِۦ فَإِنَّمَا حِسَابُهُۥ عِندَ رَبِّهِۦٓۚ إِنَّهُۥ لَا يُفۡلِحُ ٱلۡكَٰفِرُونَ ١١٧﴾ [المؤمنون: ١١٧]

“যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অন্য উপাস্যকে ডাকে, যার কোনো সনদ তার নিকট নেই, তার হিসাব-নিকাশ তার পালনকর্তার নিকট রয়েছে, নিশ্চয় কাফিরগণ সফলকাম হবে না।” [সূরা আল-মুমিনূন, আয়াত: ১১৭]

তিনি আরো বলেন,

﴿ذَٰلِكُمُ ٱللَّهُ رَبُّكُمۡ لَهُ ٱلۡمُلۡكُۚ وَٱلَّذِينَ تَدۡعُونَ مِن دُونِهِۦ مَا يَمۡلِكُونَ مِن قِطۡمِيرٍ ١٣ إِن تَدۡعُوهُمۡ لَا يَسۡمَعُواْ دُعَآءَكُمۡ وَلَوۡ سَمِعُواْ مَا ٱسۡتَجَابُواْ لَكُمۡۖ وَيَوۡمَ ٱلۡقِيَٰمَةِ يَكۡفُرُونَ بِشِرۡكِكُمۡۚ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثۡلُ خَبِيرٖ ١٤﴾ [فاطر: ١٣، ١٤]

“তিনিই আল্লাহ, তোমাদের রব, তাঁর জন্য সাম্রাজ্য, তাঁর পরিবর্তে তোমরা যাদেরকে ডাক তারা সামান্য একটি খেজুর আঁটির অধিকারীও নয়। যদি তোমরা তাদেরকে ডাক তারা তোমাদের ডাক শুনবে না, শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দিবে না আর কিয়ামতের দিন তোমাদের শির্ককে অস্বীকার করবে। বস্তুতঃ আল্লাহর ন্যায় তোমাকে কেউ অবহিত করবে না।” [সূরা ফাতির, আয়াত: ১৩-১৪]

আর অজ্ঞতা হলো যে ব্যক্তি কবরবাসী এবং তাদের মাজারে গিয়ে প্রার্থনা করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের নিকট সেই জিনিস চেয়ে বসে, যা তার সাধ্যের বাহিরে অথচ তারা (প্রশ্নকারী) জীবিত অথবা তাদের নিকট এমন জিনিস চায়. যা সে নিজেই করার ক্ষমতা রাখে। কেননা সে জীবিত উপস্থিত এবং তার পছন্দ রয়েছে। কিন্তু (তারা মৃত) পৃথিবী এবং তাদের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, পৃথিবীর কোনো ব্যাপারে এদিক সেদিক করার কোনো সুযোগ তাদের নেই।মৃতদের শুনার মাসআলার পর তা একটি সতন্ত্র সতর্কতা বর্ণনা করার একান্ত আবশ্যকীয়তার চাহিদা রাখে, কেননা বহু লোক এতে ভুল করে থাকে। উপরন্তু শির্কের মধ্যে পতিত হওয়ার জন্য তা একটি তৈরিকৃত দরজা হওয়ার কারণ এ মাসআলা। বিস্তারিত বর্ণনার নির্দিষ্ট স্থান রয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তাওফীক দান করুন।

>
[1] মাজমু‘আ ফাতাওয়া ২৪/৩৬৩, আর রূহ পৃষ্ঠা নং ৫৩, তাফসীর ইবন কাসীর ৩/৪৮২-৪৮৪, সূরা রূমের তাফসীর, আয়াত নং ৫২।

[2] দেখুন: পূর্বোল্লিখিত কিতাব ও আর রূহ পৃষ্ঠা নং ৭৮ (কিছু রদবদল করে) মাজমূ‘আ ফাতাওয়া ২৪/৩৬৮-৩৬৯।