পঞ্চম অধ্যায় - 'মাকামে ইবরাহীম' দ্বারা বরকত অর্জনের চিন্তা করা এবং হাজীগণ কর্তৃক তাঁর দিকে নজর দেওয়া

১. আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ وَٱتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ مُصَلّٗىۖ ﴾ [البقرة: ١٢٥]

“এবং বলেছিলাম, তোমরা মাকামে ইব্রাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১২৫] ‘মাকামে ইবরাহীম’ প্রসঙ্গে যে আয়াত বর্ণিত হয়েছে, তার লক্ষ্যবস্তু হলো তার পেছনে (তাওয়াফ শেষে) দুই রাকাত তাওয়াফের সালাতকে ইবাদত হিসেবে নির্দিষ্ট করা, যখন তা সহজসাধ্য হয়। সুতরাং ওয়াজিব অথবা মুস্তাহাব হিসেবে নির্দেশ সম্বলিত এমন কোনো ‘নস’ বক্তব্য আসেনি, যাতে তাকে স্পর্শ করা ও তার দ্বারা বরকত অর্জনের কথা রয়েছে।

২. কাতাদা ইবন দি‘আমা আস-সাদুসী রহ. বলেন, (আল্লাহ তা‘আলার বাণী:

﴿ وَٱتَّخِذُواْ مِن مَّقَامِ إِبۡرَٰهِ‍ۧمَ مُصَلّٗىۖ ﴾ [البقرة: ١٢٥]

“এবং বলেছিলাম, তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর।” [সূরা আল-বাকারাহ, আয়াত: ১২৫] শুধুমাত্র তাদেরকে তার নিকট সালাত আদায়ের নির্দেশ প্রদান করেছে, তাদেরকে তা স্পর্শ করার নির্দেশ দেওয়া হয় নি, অথচ এ উম্মত অযথা এমন কিছু কষ্টকর বিষয় নিজেদের জন্য বরাদ্দ করে নিয়েছে, যা তাদের পূর্বেকার উম্মতগণও তাদের নিজেদের জন্য ঠিক করে নিয়েছিল। আর যারা তাঁর কদম ও আঙুলের চিহ্ন দেখেছেন, তাদের কেউ কেউ আমাদেরকে তা জানিয়েছেন যে, লোকেরা সেসব চিহ্ন মাসেহ করতে করতে সেগুলোর চিহ্নকে ধ্বংস ও নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছে”।[1]

৩. ইবন জুরাইজ রহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,

«قلتُ لِعطاءٍ : أرأيتَ أحدًا يُقبِّلُ «المقامَ»، أو يمسُّهُ ؟ قال : «أماَ أحدٌ يُعتَبرُ به فلاَ».

“আমি ‘আতা রহ. কে বললাম: আপনি কি ‘মাকামে ইবরাহীম’-কে চুম্বন অথবা স্পর্শ করতে কাউকে দেখেছেন? জবাবে তিনি বলেন, “গ্রহণযোগ্য কাউকে এরূপ করতে দেখি নি”।[2]

৪. ইবরাহীম আস-সায়েগ রহ. ‘আতা রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন,

«أنه كَرِهَ أن يُقبِّلَ الرَّجُلُ «الْمُقَامَ »، أو يمسحَهُ».

“তিনি (‘আতা রহ.) কোনো ব্যক্তি কর্তৃক মাকামে ইবরাহীমকে চুম্বন করা অথবা তাকে স্পর্শ করাকে হারাম মনে করতেন”।[3]

৫. মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন,

«لَا تُقبِّلْ «الْمُقَامَ »، ولَا تَلمِسْهُ».

“তুমি মাকামে ইবরাহীমকে চুম্বন করো না এবং তাকে স্পর্শও করো না”।[4]

আর ইবন মুফলিহ রহ. বলেন, (মাকামে ইবরাহীমকে চুম্বন ও স্পর্শ করার বিষয়টি শরী‘আতের বিধিবদ্ধ করা হয়নি এবং এ ব্যাপারে ‘ইজমা’ হয়েছে; সুতরাং অপরাপর সকল স্থানের চুম্বন ও স্পর্শ করার বিষয়টি তো আরও উত্তমভাবেই শরী‘আতের বিধিবদ্ধ নয়; যা আমাদের শাইখ ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বর্ণনা করেছেন)।[5]তাছাড়া বরকতের আশায় তা স্পর্শ করার মধ্যে রাসূল ‘আলাইহিমুস্ সালামের হিদায়াতের বিরোধিতার বিষয় রয়েছে, যাঁরা জড়বস্তুকে সম্মান করতে নিষেধ করেছেন; আর সাধারণ জনগণ কর্তৃক স্পর্শ করার বিষয়টি শুধু ‘মাকামে ইবরাহীমে’ই সীমাবদ্ধ থাকে না, যা কিনা বিদ‘আত; বরং তারা তো মাকামে ইবরাহীমের বেড়া ও বেষ্টনীকেও মাসেহ করে থাকে!! (সুতরাং সেটার বিধান কি হতে পারে?)

>
[1] তা বর্ণনা করেছেন: আযরাকী, ‘আখবারু মাক্কা’: (২/২৯-৩০); ইবন জারির, ‘জামে‘উল বায়ান ‘আন তা’বীল আয়িল কুরআন’: (২/৫২৭) এবং শব্দগুলো তাঁর বর্ণনা থেকে নেয়া; আর তাঁর সাথে যোগ হয়েছেন আল্লামা সুয়ূতী, আদ-দুর্রুল মানছুর ফিত্ তাফসীর বিল-মা’ছুর: (১/২৯২)।

[2] তা বর্ণনা করেছেন: আবদুর রাযযাক, ‘আল-মুসান্নাফ’ (৮৯৫৭); আল-ফাকেহী, ‘আখবারু মাক্কা’: (১০০৫); আবদুর রাযযাক রহ. এর বর্ণনাতে এর পরিবর্তে এসেছে।

[3] আল-ফাকেহী রহ. তা বর্ণনা করেছেন, ‘আখবারু মাক্কা’: (১০০৬)

[4] ইবন আবী শায়বা রহ. তা বর্ণনা করেছেন, আল-মুসান্নাফ’ (১৫৫১৩)।

[5] আল-ফুরূ‘উ: (৩/৫০৩); আরও দেখুন: ‘আল-মুবদি‘উ ফী শরহে ‘আল-মুকনি‘উ’: (৩/২২৩); ‘আল-ইনসাফ ফী মা‘রেফাতির রাজেহ মিনাল খিলাফ ‘আলা মাযহাব আল-ইমাম আহমাদ ইবন হাম্বল’: (৯/১২২)।