প্রথম অধ্যায় - কোনো কোনো হজ পালনকারী কর্তৃক আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট দো‘আ ও সাহায্য প্রার্থনা করা এবং শির্ক মিশ্রিত অযীফা বা দো‘আর ওপর নির্ভর করা

মানুষ যেসব কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়, বিশেষকরে হাজী সাহেবগণ, তন্মধ্যে উপরোক্ত কাজসমূহ খুবই মারাত্মক ও বিপজ্জনক। বিশেষ করে যখন তা সংঘটিত হয়ে থাকে হারামাইন শরীফাইন ও হজের পবিত্র স্থানসমূহে; চাই তা হউক তাদের হজের কর্মকাণ্ডের অন্তর্ভুক্ত কোনো পাঠ এবং তাদের সাথে বহন করা তাদের শির্ক মিশ্রিত দো‘আ বা অযীফাসমূহ, যেমনটি পূর্বের অধ্যায়ে ইঙ্গিত করা হয়েছে, অথবা হউক এগুলো ছাড়া এ জাতীয় অন্য কোনো দো‘আ; কারণ, তা বড় শির্কের অন্তর্ভুক্ত, কারণ তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দীন ইসলাম থেকে খারিজ (বহিষ্কার) করে দেয়।

বস্তুত দো‘আ দুই প্রকার: ইবাদত হিসেবে দো‘আ এবং চাওয়া-পাওয়ার জন্য দো‘আ।

কুরআনে কারীমে দো‘আ দ্বারা কখনও এটাকে বুঝানো হয়েছে, আবার কখনো ঐটাকে বুঝানো হয়েছে। আর তার (দো‘আ) উভয় প্রকারকেই বুঝানো হয়।

সুতরাং চাওয়া-পাওয়ার জন্য দো‘আ (دعاء المسألة) মানে: এমন কিছু তলব করা, যা দা‘ঈ বা প্রার্থনাকারী ব্যক্তির কাজে লাগবে- উপকার লাভের মাধ্যমে হোক অথবা ক্ষতি দূরিকরণের মাধ্যমে হোক, আর এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা ঐ ব্যক্তির নিন্দা বা সমালোচনা করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন কারো কাছে প্রার্থনা করে, যে নাকি কোনো ক্ষতি ও উপকার করার ক্ষমতা রাখে না। যেমন, আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿قُلۡ أَتَعۡبُدُونَ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَمۡلِكُ لَكُمۡ ضَرّٗا وَلَا نَفۡعٗاۚ وَٱللَّهُ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡعَلِيمُ ٧٦﴾ [المائ‍دة: ٧٦]

“বলুন, তোমরা কি আল্লাহ ছাড়া এমন কিছুর ইবাদাত কর, যার কোনো ক্ষমতা নেই তোমাদের ক্ষতি বা উপকার করার? আর আল্লাহ্ তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা আল-মায়েদাহ, আয়াত: ৭৬]

আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,

﴿وَلَا تَدۡعُ مِن دُونِ ٱللَّهِ مَا لَا يَنفَعُكَ وَلَا يَضُرُّكَۖ فَإِن فَعَلۡتَ فَإِنَّكَ إِذٗا مِّنَ ٱلظَّٰلِمِينَ ١٠٦﴾ [يونس: ١٠٦]

“আর আপনি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে ডাকবেন না, যা আপনার উপকারও করে না, অপকারও করে না। কারণ, এটা করলে তখন আপনি অবশ্যই যালিমদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।” [সূরা ইউনূস, আয়াত: ১০৬]

আর ‘ইস্তিগাছা’ (الاستغاثة) মানে: উদ্ধার কামনা করা; আর তা (সাহায্য) হলো কষ্ট বা অসুবিধা দূর করার জন্য কারও দ্বারস্থ হওয়া।[1]

আর উভয় বিষয়, অর্থাৎ মৃত ব্যক্তি অথবা কোনো সৃষ্টির কাছে এমন কোনো ব্যাপারে দো‘আ ও সাহায্যের আবেদন করা, যে ব্যাপারে সাহায্য করার ক্ষমতা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও নেই, তা বড় শির্ক -এর অন্তর্ভুক্ত, যা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে দীন ইসলাম থেকে খারিজ (বহিষ্কার) করে দেয়।

শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহ. বলেন, “শরী‘আত নিষিদ্ধ ‘ইস্তিগাছা’ বা বিপদে সাহায্যের ফরিয়াদ দুই প্রকার:

প্রথম প্রকার: প্রত্যেক ব্যাপারে সাধারণভাবে মৃত ব্যক্তির নিকট সাহায্য প্রার্থনা করা।

দ্বিতীয় প্রকার: সৃষ্টির কাছে এমন কোনো ব্যাপারে সাহায্যের আবেদন করা, যে ব্যাপারে স্রষ্টা ব্যতীত সাহায্য করার ক্ষমতা অন্য কারও নেই। সুতরাং কারও জন্য কোনো অধিকার নেই আল্লাহ ছাড়া অন্যের নিকট এমন কিছু চাওয়া, যা দেওয়ার ক্ষমতা আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নেই, সে চাওয়াটা নবীর কাছেও নয় এবং অন্যের কাছেও নয়, আর কোনো সৃষ্টির নিকট সাহায্যের ফরিয়াদ করবে না এমন কোনো বিষয়ে, যে ব্যাপারে স্রষ্টা ব্যতীত সাহায্য করার ক্ষমতা অন্য কারও নেই। আর কারও জন্য কোনো অধিকার নেই মৃত ব্যক্তির নিকট কোনো কিছুর ব্যাপারে আবেদন করা অথবা তার কাছে কোনো বিষয়ে সাহায্যের ফরিয়াদ করা, চাই তিনি নবী হউন অথবা অন্য কেউ”।[2] আর এ জাতীয় কবীরা গুনাহ, এমনকি দীন থেকে খারিজ করে দেওয়ার মত এ শির্কের ভয়াবহতা সত্ত্বেও হজের উদ্দেশ্যে সম্মানিত বাইতুল্লাহতে গমনে ইচ্ছুকদের কারও কারও নিকট থেকে তাদের হজের কর্মসূচীতে এমন সব অযীফা, দো‘আ ও যিকিরের ওপর নির্ভর করতে দেখা যায়, যাতে নবীগণ ও সৎব্যক্তিবর্গের মতো সম্মানিত ব্যক্তিগণের নিকট দো‘আ ও সাহায্য প্রার্থনা করার মত বিষয় রয়েছে, বিশেষ করে যে ব্যক্তির সাথে শি‘আ ও সুফী সম্প্রদায়ের সম্পর্ক রয়েছে, তাদের এমন সব দো‘আ ও ফরিয়াদ রয়েছে, যার সবগুলোই মহান আল্লাহর সাথে শির্কের নামান্তর। কারণ, তার কিছু অংশের মধ্যে রয়েছে ইমাম ও সৎকর্মশীল শাইখগণের নিকট এমন সব প্রয়োজন পূরণের আবেদন, যা পূরণের ক্ষমতা আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারও নেই। যেমন, উপকার লাভ ও ক্ষতি দূর করার আবেদন, রোগমুক্ত করার আবেদন, রিযিক বৃদ্ধির আবেদন এবং সমস্যা ও অসুবিধা দূর করার আবেদন ইত্যাদি। আর এ কথা সবার জানা যে, এ বিষয়গুলো আরও বেশি প্রকট আকার ধারণ করে বিশেষ কোনো সময় ও স্থানে, যেমন, সম্মানিত হজের মাসে এবং মক্কার হারাম বা ক্যাম্পাসে (আল্লাহ তাকে সম্মানিত ও মর্যাদাবান করুন)।[3]

>
[1] দেখুন: ‘ফাতহুল মাজীদ’’: (পৃ. ১৭০-১৭১)।

[2] ‘আল-ইসতিগাছাতু ওয়ার রাদ্দু ‘আলাল বাকরী’: (১/৩৫৯-৩৬০)। ‘শিফা আস-সুদুর ফী যিয়ারাত আল-মাশাহেদ ওয়াল কুবূর’: (১২৩-১৩৭)।

[3] দেখুন: ‘আদ-দো‘আ ওয়া মানযিলাতুহু ফিল ‘আকীদা আল-ইসলামিয়্যা’: (২/৫১৭-৫২৭); ‘উসূলু মাযহাব আশ-শী‘আ’: (২/৪৪১-৪৫৩), (৩/১১৪৪-১১৪৮); ‘মাযাহেরুল ইনহিরাফাত আল-‘আকদিয়্যা ‘ইন্দাস্ সূফিয়্যা’: (১/১৪৮ -১৭২, ৪২৪-৪৪৫)।