প্রথম মাসআলা:

বারুকার উপর মাসাহ করার হুকুম: প্রয়োজনে বারুকা পড়া জায়েয। কোনো নারীর মাথায় বারুকা পড়ার প্রয়োজন হলে সে তা পড়তে পরবে; কিন্তু সালাতের জন্য অযু করার সময় তাতে মাসাহ করবে না। কেননা এটি খিমার তথা ঘোমটা নয় এবং ঘোমটার অর্থেও নয়। তাকে সরাসরি আল্লাহর সৃষ্ট মাথা বা মাথার চুল মাসাহ করতে হবে।

দ্বিতীয় মাসআলা:

নখ পালিশ: কিছু মহিলা ইচ্ছাকৃত নখ ও শরীরে পালিশ করেন যা তাদের চামড়ায় পানি পৌঁছতে বাঁধা দেয়। এ ধরণের কাজ করা না জায়েয। বরং পবিত্রতা অর্জনের শর্ত হলো অযুর সময় পানি অযুর অঙ্গে পৌঁছা।

তৃতীয় মাসআলা:

হায়েয: মহিলাদের যৌনাঙ্গ থেকে সুস্থ অবস্থায় প্রসব বা কুমারীত্বে নষ্ট হওয়ার কারণ ছাড়াই যে রক্ত বের হয় তা হলো হায়েয।

অনেক আলেমের মতে, মেয়েদের নয় বছর বয়স থেকে হায়েযের সময় শুরু হয়। এ বয়সের আগে কারো রক্ত দেখা দিলে তা হায়েযের রক্ত নয়; বরং তা কোনো রোগের কারণে হতে পারে। মেয়েদের মৃত্যু পর্যন্ত হায়েয চলতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে পঞ্চাশ বছর পর হায়েয শেষ হয়ে যায়।

হায়েযের রক্ত ছয় ধরণের। তা হলো, কালো, লালচে, হলুদ, কর্দমাক্ত, নীল ও ধূসর বর্ণের।

হায়েযের সর্বনিম্ন সময় একদিন ও একরাত। মধ্যম সময়সীমা হলো পাঁচ দিন আর সর্বোচ্চ সময়সীমা পনেরো দিন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মেয়েদের ছয় বা সাত দিন পর্যন্ত হায়েয হয়ে থাকে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে দু’হায়েযের মধ্যবতী পবিত্ররতার সর্বনিম্ন সময়সীমা তেরো দিন। তবে এর বেশি বা কমও হতে পারে।

হায়েয অবস্থায় সালাত, সাওম, মসজিদে প্রবেশ, কুরআন খুলে তিলাওয়াত করা, কা‘বা তাওয়াফ করা ও সহবাস করা ইত্যাদি নিষেধ। এছাড়াও হায়েয প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার নিদর্শন।

চতুর্থ মাসআলা:

নিফাস: প্রসব বা অকাল প্রসবের (যদি গর্ভপাতে বাচ্চার অবয়ব স্পষ্ট হয়) কারণে স্ত্রীলিঙ্গ থেকে প্রবাহিত রক্তকে নিফাস বলে।

নিফাসের সময়সীমা: সাধারণত সর্বোচ্চ সময়সীমা চল্লিশ দিন, তবে এর নিম্ন সময়সীমা নেই। কেউ যমজ সন্তান প্রসব করলে প্রথম সন্তানের জন্মদিন থেকে নিফাসের সময়সীমা শুরু হবে।

হায়েয অবস্থায় যেসব কাজ নিষিদ্ধ যেমন, সাওম, সালাত ইত্যাদি নিফাস অবস্থায়ও নিষিদ্ধ।

পঞ্চম মাসআলা:

ইসতিহাযা তথা অসুস্থ নারীর বিধান: হায়েয বা নিফাসের সময় ব্যতীত মহিলাদের যে রক্ত প্রবাহিত হয় তাকে ইসতিহাযা বলে। অতএব, হায়েয ও নিফাসের সময়সীমার আগে বা পরে অথবা হায়েয হওয়ার আগের বয়সে অর্থাৎ নয় বছরের আগে যে রক্ত প্রবাহিত হয় তা সবই ইসতিহাযার রক্ত। ইসতিহাযাগ্রস্ত নারীর হুকুম হলো সে সর্বদা তারা সর্বদা ছোট অপবিত্র থাকেন, এ অবস্থা তাদেরকে সালাত, সাওম ও অন্যান্য কাজ করতে নিষেধ করে না।

ইসতিহাযাগ্র্রস্ত নারী প্রত্যেক সালাতের জন্য অযু করবে। তার স্বামী তার সাথে সহবাস করা জায়েয।

গর্ভাবস্থায় নারী যে রক্ত দেখে তাও ইসতিহাযা হিসেবে গণ্য হবে।

ষষ্ঠ মাসআলা:

নারীর শরীরের চুল মুণ্ডন করা নিষেধ, তবে বিশেষ প্রয়োজন হলে করতে পারবে। মহিলাদের ভ্রু-প্ল্যাক (ভ্রু উৎপাটন) করা, হাতে উলকি চিহ্ন দেওয়া[1], পরচুলা লাগানো, রেত দ্বারা দাত সূক্ষ্ম করা যাতে অল্প বয়স্ক ও দাতের সৌর্ন্দয প্রকাশ পায়। কেননা এ ধরণের কাজ যারা করে ও যারা করায় তাদের উভয়কে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লা‘নত করেছেন।[2] (বুখারী, মুসলিমসহ সাত কিতাবের গ্রন্থকারগণ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন।)

নারীদের জন্য স্বামী ও অন্যান্য নারীদের মধ্যে অবস্থান ব্যতীত সুগন্ধি ব্যবহার করা হারাম।

সপ্তম মাসআলা:

নারীর আওরাত তথা সতর: পরপুরুষের সামনে নারীর পুরো শরীরই সতর, সুতরাং পরপুরুষের সামনে তার পুরো শরীর ঢেকে রাখা ফরয যেভাবে পরপুরুষের সাথে নির্জনে থাকা নাজায়েয।

মুহরিম ব্যতীত নারী সফর করবে না। আর মুহরিম হলো যাদের সাথে সর্বদা বিবাহ বন্ধন হারাম, তা বংশগত বা বৈবাহিক সম্পর্ক বা দুধ পানের কারণে হতে পারে।

সালাতে নারীরা তাদের চেহারা, হাতের তালু ও পা ব্যতীত সমস্ত শরীর ঢেকে রাখবে। পরপুরুষের উপস্থিতিতে তাদের সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ওয়াজিব। আর সাধারণত হাতের তালু ও পা ঢেকে রাখা মুস্তাহাব।

সতর রক্ষাকারী পোশাক ঢিলেঢালা ও ঘন হবে, পুরুষের পোশাকের সাদৃশ্য হবে না, এমন সাজ-সজ্জা হতে পারবে না যাতে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে, কাফিরদের জামা-কাপড়ের সাদৃশ্য হতে পারবে না এবং পোশাকটি সুনাম-খ্যাতির জন্যও হতে পারবে না।

অষ্টম মাসআলা:

নারীর সৌন্দর্য: নারীর কিছু হালাল সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য আছে, আবার কিছু হারাম সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য আছে। যেমন, নারীর জন্য সুগন্ধি, স্বর্ণ, রৌপ্য, রেশম ও কৃস্টালের জিনিস ব্যবহার করা জায়েয।

আর তাদের হারাম সাজ-সজ্জা ও সৌন্দর্য বলতে যা সুনাম-সুখ্যাতি ও লোক দেখানোর জন্য পরে থাকে যাতে মানুষ তার দিকে তাকিয়ে থাকে, এমন সুগন্ধি যার গন্ধ গায়রে মুহরিমের কাছে পৌঁছে।

নবম মাসআলা:

নারীর আওয়াজ: সাধারণত নারীর আওয়াজ আওরাত তথা পর্দার অন্তর্ভুক্ত নয়, তবে তাদের আওয়াজ যদি বেশি সংক্ষেপণ, নরম, মানুষকে ফিতনার আশঙ্কা ও এতে অতিরঞ্জিত হলে তা জায়েয নয়। নারীর গান করা হারাম। বর্তমান যুগে মানুষ নারীর গানে খুব আসক্ত। তারা এটাকে মানুষকে আকর্ষণ ও অর্থ উপার্জনের মাধ্যম হিসেবে নিয়েছে। পুরুষের জন্য গান গাওয়া হারাম আর নারীর জন্য তা কঠোরভাবে হারাম। তবে শুধু নারীদের মধ্যে আনন্দ উৎসবে শরী‘আতসম্মত ও মিউজিক ছাড়া বৈধ শব্দের গান করা জায়েয।

দশম মাসআলা:

নারীদের জন্য ছোট বাচ্চাদের ও তাদের স্বামীকে গোসল দেওয়া জায়েয। এমনিভাবে পুরুষের মতো তারাও জানাযায় অংশগ্রহণ করা জায়েয; তবে জানাযার সাথে তাদের চলা ও জানাযা বিদায় দেওয়া জায়েয নেই। তাদের কবর যিয়ারত করাও জায়েয নেই। তাদের বিলাপ, শোকগাঁথা, গালে চড় দেওয়া, জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলা ও শরীরের চুল উৎপাটন করা নিষেধ। এসব কাজ জাহেলী যুগের কাজ এবং কবীরা গুনাহ। নারীর জন্য স্বামী ছাড়া অন্যের জন্য তিনদিনের বেশি শোক পালন করা জায়েয নেই, আর স্বামীর জন্য চারমাস দশদিন শোক পালন করা ওয়াজিব। এ সময় সে স্বামীর ঘরে বাস করবে এবং সৌন্দর্য ও সুগন্ধি পরিত্যাগ করবে। শোকের ইদ্দত পালনের সময় কোনো নির্দিষ্ট পোশাক নেই।

একাদশ মাসআলা:

নারীর অলংকার: নারীর জন্য বৈধ অলংকার যেমন সোনা, রুপা ও প্রচলিত অন্যান্য পরিধান করা জায়েয। তবে তাদেরকে এ ক্ষেত্রে অপচয় ও অহংকার পরিহার করতে হবে।

নারীর নিত্য ব্যবহৃত বা বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষ্যে পরিহিত অলংকার সোনা-রূপায় যাকাত ওয়াজিব হবে না।

দ্বাদশ মাসআলা:

স্ত্রীর জন্য স্বামীর অনুমতি ব্যতীত তার সম্পদ থেকে প্রথা অনুযায়ী দান সদকা করা জায়েয, যদি তিনি এতে সম্মত থাকেন। স্বামী যাকাতের হকদার হলে স্ত্রী তার সম্পদের যাকাত স্বামীকে দিতে পারবে। স্বামী যদি কৃপণ হয় যে, স্ত্রীর প্রাপ্য ভরণ-পোষণ আদায় করতে কৃপণতা করে তাহলে স্ত্রীর জন্য স্বামীর অনুমতি ব্যতীত ন্যায়-সঙ্গতভাবে যতটুকু তার ও তার সন্তানের জন্য প্রয়োজন ততটুকু সম্পদ নেওয়া জায়েয।

ত্রয়োদশ মাসআলা:

গর্ভবতী ও দুগ্ধপানকারী নারীর সাওম পালনে নিজের ও তার সন্তানের অথবা দুজনের যেকোনো একজনের ক্ষতির আশঙ্কা করলে তাদের জন্য সাওম ভঙ্গ করা জায়েয। তারা উক্ত সাওমের কাযা আদায় করবে, ফিদিয়া দিতে হবে না। তবে তারা যদি শুধু তাদের সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা করে তাহলে উক্ত সাওমের কাযা ও ফিদিয়া উভয়টি আদায় করতে হবে। আর দুগ্ধদানকারী নারীর সন্তান যদি অন্য নারীর দুধ গ্রহণ করে এবং তারা যদি দুগ্ধদানকারী নারীকে ভাড়া করতে সক্ষম হয় অথবা উক্ত সন্তানের যদি সম্পদ থাকে তাহলে তারা দুগ্ধদানকারীকে ভাড়া করবে এবং নিজে সাওম ভঙ্গ করবে না। দুগ্ধদানকারী নারীর হুকুম সন্তানের মায়ের হুকুমের মতোই।

স্বামী উপস্থিত থাকলে তার অনুমতি ব্যতীত নারীর নফল সাওম পালন করা জায়েয নেই।

চতুর্দশ মাসআলা:

স্বামী তার স্ত্রীকে ফরয হজ পালনে বাধা দেওয়ার অধিকার নেই। স্ত্রী স্বামীর অনুমতি চাইলে তাকে অনুমতি দেওয়া এবং তার ফরয হজ পালনে সহযোগিতা করা স্বামীর জন্য ফরয। তবে নফল হজের ক্ষেত্রে স্বামী কোনো অসুবিধা দেখলে বা তার সন্তানের অসুবিধা দেখলে স্ত্রীকে নিষেধ করার অধিকার আছে।

পঞ্চদশ মাসআলা:

মহিলারা ইহরাম অবস্থায় তাদের স্বাভাবিক পোশাকই পরিধান করবে। তবে ইহরাম অবস্থায় নিম্নোক্ত বিষয় পরিহার করবে। তা হলো:

১- সুগন্ধিযুক্ত কাপড়।

২- হাতমোজা পরিধান করা।

৩- নিকাব পড়া।

৪- হলদে কাপড় পরিধান করা।

ষোড়শ মাসআলা:

হায়েয ও নিফাসগ্রস্তরা গোসল করে ইহরামের কাপড় পরিধান করবে, তবে তারা পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত বাইতুল্লাহর তাওয়াফ করবে না।

সপ্তদশ মাসআলা:

হজে তালবিয়্যাহ শরী‘আতসম্মত। এতে পুরুষেরা উচ্চ আওয়াজে তালবিয়্যাহ বলবে আর নারীরা আস্তে আস্তে বলবে। নারীরা তাওয়াফ ও সা‘ঈর সময় রমল তথা হেলেদুলে চলবে না। দো‘আ পড়ার সময় উঁচু আওয়াজে দো‘আ পড়বে না। হাজরে আসওয়াদ ও অন্যান্য ভিড়ের স্থানে ভিড় করবে না।

অষ্টাদশ মাসআলা:

মাথা মুণ্ডানো ও চুল ছোট করা হজ ও উমরা একটি বিধান। তবে মহিলারা মাথা মুণ্ডানোর পরিবর্তে মাথার চুল ছোট করবে; কেননা তাদের জন্য মাথা মুণ্ডানো জায়েয নেই।

তারা চুলে বেণী করলে প্রত্যেক বেণী থেকে এক আঙ্গুলের মাথা পরিমাণ কেটে ছোট করবে, আর বেণী না করলে পুরো চুলের আগা থেকে এক আঙ্গুলের মাথা পরিমাণ ছোট করবে।

উনবিংশ মাসআলা:

নারীর জন্য কুরবানীর দিনে দ্রুত তাওয়াফে ইফাদা করা মুস্তাহাব; যদি তাদের হায়েয শুরু হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা মহিলাদের হায়েযের আশঙ্কায় কুরবানীর দিনেই তাদেরকে তাওয়াফে ইফাদা সেরে ফেলতে নির্দেশ দিতেন। হায়েযগ্রস্তরা মক্কা থেকে হায়েয অবস্থায় বের হলে তাওয়াফে ইফাদা আদায় করলে তাদের বিদায়ী তাওয়াফ নেই।

বিশতম মাসআলা:

মুসলিম নারীকে অমুসলিম পুরুষের সাথে বিবাহ দেওয়া হারাম, চাই সে মুশরিক হোক বা সমাজতান্ত্রিক বা হিন্দু বা অন্য ধর্মের অনুসারী বা আহলে কিতাব; কেননা নারীর ওপর পুরুষের দায়িত্ব-কর্তৃত্ব রয়েছে এবং স্বামীর আনুগত্য করা স্ত্রীর ওপর ফরয। আর এটি অভিভাবকত্বের অর্থে। অথচ যে ব্যক্তি লা ইলাহা ইল্লাহ ও মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহর সাক্ষ্য দেয় তার ওপর কোনো কাফির বা মুশরিকের কোনো অভিভাবকত্ব ও কর্তৃত্ব নেই।

একবিংশ মাসআলা:

ছোট শিশু বা নির্বোধ বালক বালিকার লালনপালন ও রক্ষণাবেক্ষেণকে হাদানা বা নার্সারি বলে।

ছোট শিশু বা নির্বোধ বালক বালিকার লালনপালন ও রক্ষণাবেক্ষেণ করা মায়ের দায়িত্ব। তিনি এ কাজ করতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে এ কাজে বাধ্য করা হবে। মায়ের অবর্তমানে এ কাজের অধিক হকদার সন্তানের নানী, অতঃপর মায়ের দিকের নিকটতম মায়েরা, অতঃপর বাবা, অতঃপর বাবার মায়েরা (দাদীরা), অতঃপর দাদা, অতঃপর দাদীরা, অতঃপর সহোদর বোনেরা, অতঃপর বৈপিত্রীয় বোনেরা, অতঃপর বৈমাত্রীয় বোনেরা, অতঃপর চাচারা, অতঃপর ফুফুরা, অতঃপর খালারা, অতঃপর চাচীরা, অতঃপর ভাইয়ের মেয়েরা, অতঃপর আপন চাচাতো বোনেরা, অতঃপর বৈমাত্রীয় চাচাতো বোনেরা, অতঃপর বৈপিত্রীয় চাচাতো বোনেরা, অতঃপর নিকটতম বংশীয় আত্মীয়-স্বজনরা অতঃপর রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়রা, অতঃপর দেশের দায়িত্বরত শাসকদের ওপর তার লালনপালনের দায়িত্ব বর্তাবে।

সন্তান লালনপালনের খরচাদি পিতাকে বহন করতে হবে। সন্তানের লালনপালনকারীর শর্ত হলো সে বালেগ তথা প্রাপ্ত বয়স্ক, জ্ঞানসম্পন্ন, শিক্ষাদীক্ষা প্রদানে সক্ষম, আমানতদার, সচ্চরিত্রবান, মুসলিম ও অবিবাহিতা হতে হবে। তিনি বিবাহিতা হলে তার ওপর থেকে লালনপালনের দায়িত্বভার রহিত হয়ে যাবে। শিশু সাত বছর বয়স হলে (বাবা-মা আলাদা হলে) তাকে বাবা ও মা যেকোন কারে সাথে থাকার ইখতিয়ার দেওয়া হবে। শিশু যার সাথে থাকতে পছন্দ করে তাকে তার সাথে থাকার সুযোগ দিতে হবে। মেয়ে শিশুর ক্ষেত্রে সাত বছর পরে বিবাহ দেওয়া পর্যন্ত বাবার সাথে থাকার অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

দ্বাবিংশ মাসআলা:

চার মাযহাবের সকল আলেম একমত যে, পরপুরুষের সামনে নারীর সমস্ত শরীর ঢেকে রাখা ফরয। তাদের মধ্যে যারা চেহারা ও দুহাতের তালুকে নারীর সতরের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন অথবা যারা এ অংশকে সতরের অন্তর্ভুক্ত মনে করেন না তারা সকলেই মনে করেন, বর্তমানে মানুষের মধ্যে ফিতনা ফাসাদ বেড়ে যাওয়ায়, দীনদারীতা কমে যাওয়ায় ও পরনারীর দিকে তাকানোর ক্ষেত্রে পরহেজগারিতা না থাকায় নারীর সমস্ত শরীরই পর্দার অন্তর্ভুক্ত ও সতর। আমার জন্য যতটুকু সংকলন ও একত্রিত করা সম্ভব হয়েছে তা সংক্ষিপ্ত পরিসরে উপরে আলোচনা করেছি। সর্বশক্তিমান সুমহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন এর দ্বারা আমাদেরকে উপকৃত করেন। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনই আমার এ কাজের একমাত্র উদ্দেশ্য। তিনিই সরল সঠিক পথের পথ প্রদর্শক।

>
[1] শরীরে সুঁই দিয়ে ফুটা করে রক্ত প্রবাহিত করা অতঃপর খতস্থানে রঙিন কিছু দিয়ে ভরাট করা।

[2] সহীহ মুসলিমে এসেছে, «لَعَنَ اللهُ الْوَاشِمَاتِ وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ، وَالنَّامِصَاتِ وَالْمُتَنَمِّصَاتِ، وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللهِ». “মানবদেহে চিত্র অঙ্কনকারিণী ও অঙ্কনপ্রার্থিণী নারী, কপাল ভুরুর চুল উৎপাটনকারিনা ও উৎপাটনকামী নারী এবং সৌন্দর্য সুষমা বৃদ্ধির মানসে দাঁতের মাঝে (সদৃশ্য) ফাঁক সৃষ্টিকারিনা, যারা আল্লাহর সৃষ্টিতে বিকৃতি সাধনকারিনী, এদেরকে আল্লাহ তা’আলা লা‘নত করেন। [অনুবাদক]