১- তায়াম্মুমেম শাব্দিক ও পারিভাষিক পরিচিতি:

ক- তায়াম্মুমেম শাব্দিক অর্থ: ইচ্ছা করা, কামনা করা, মনস্থ করা।

খ- তায়াম্মুমেম পারিভাষিক অর্থ: পবিত্র মাটি দ্বারা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে মুখ ও দু হাত মাসাহ করা।

আল্লাহ এ উম্মতের জন্য যেসব বিশেষ বৈশিষ্ট্য ও মর্যাদা দান করেছেন তায়াম্মুম সেসব বৈশিষ্ট্যের অন্যতম। এটি পানির পরিবর্তে পবিত্র হওয়ার মাধ্যম।

২- কার জন্য তায়াম্মুম করা বৈধ:

ক- পানি পাওয়া না গেলে বা পানি দূরে থাকলে।

খ- কারো শরীরে ক্ষত থাকলে বা অসুস্থ হলে এবং সে পানি ব্যবহার করলে ক্ষত বা অসুস্থতা বেড়ে যাওয়ার আশংকা থাকলে।

গ- পানি অতি ঠাণ্ডা হলে এবং গরম করতে সক্ষম না হলে।

ঘ- যদি মজুদ পানি ব্যবহারের কারণে নিজে বা অন্য কেউ পিপাসায় নিপতিত হওয়ার আশঙ্কা করে।

৩- তায়াম্মুম ফরয হওয়ার শর্তাবলী:

ক- বালেগ বা প্রাপ্ত বয়ষ্ক হওয়া।

খ- মাটি ব্যবহারে সক্ষম হওয়া।

গ- অপবিত্রতা নষ্টকারী কোনো কিছু ঘটা।

৪- তায়াম্মুম শুদ্ধ হওয়ার শর্তাবলী:

ক- ইসলাম।

খ- হায়েয বা নিফাসের রক্ত শেষ হওয়া।

গ- আকল বা বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া।

ঘ- পবিত্র মাটি পাওয়া।

৫- তায়াম্মুমের ফরযসমূহ:

ক- নিয়ত।

খ- পবিত্র মাটি।

গ- একবার মাটিতে হাত মারা।

ঘ- মুখমণ্ডল ও হাতের তালু মাসাহ করা।

৬- তায়াম্মুমের সুন্নাতসমূহ:

ক- বিসমিল্লাহ বলা।

খ- কিবলামুখী হওয়া।

গ- সালাতের আদায়ের ইচ্ছা করার আগে করা

ঘ- দ্বিতীয়বার মাটিতে হাত মারা।

ঙ- ধারাবাহিকতা বজায় রাখা।

চ- এক অঙ্গের সাথে বিরতিহীন অন্য অঙ্গ মাসাহ করা।

ছ- আঙ্গুল খিলাল করা।

৭- তায়াম্মুম ভঙ্গের কারণসমূহ:

ক- পানি পাওয়া গেলে।

খ- উল্লিখিত অযু ও গোসল ভঙ্গের কারণসমূহ পাওয়া গেলে তায়াম্মুম ভঙ্গ হয়ে যাবে। কেননা তায়াম্মুম হলো অযু ও গোসলের স্থলাভিষিক্ত, আর মূল পাওয়া গেলে তার স্থলাভিষিক্তের কাজ শেষ হয়ে যায়।

৮- তায়াম্মুমের পদ্ধতি:

প্রথমে তায়াম্মুমের নিয়ত করবে, অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে দুহাত মাটিতে মারবে, অতঃপর এর দ্বারা মুখমণ্ডল ও হাতের কব্জি ধারাবাহিক ও বিরতিহীনভাবে মাসাহ করবে।

৯- ব্যান্ডেজ ও ক্ষতস্থানে তায়াম্মুম:

কারো হাড় ভেঙ্গে গেলে বা শরীরে ক্ষত বা জখম হলে পানি ব্যবহারে ক্ষতির আশংকা করলে ও কষ্ট হলে তবে ব্যান্ডেজ ও ক্ষতস্থানে তায়াম্মুম করবে এবং বাকী অংশ ধুয়ে ফেলবে।

কেউ পানি ও মাটি কোনটিই না পেলে যে অবস্থায় আছে সে অবস্থায়ই সালাত আদায় করে নিবে। তাকে উক্ত সালাত পুনরায় আদায় করতে হবে না।

মোজা ও বন্ধ ফলকের উপর মাসাহ:

১- ইবন মুবারক বলেছেন, মোজার উপর মাসাহর ব্যাপারে কোনো মতানৈক্য নেই। ইমাম আহমাদ বলেছেন, মোজার উপর মাসাহর ব্যাপারে আমার অন্তরে কোনো সংশয় নেই। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে চল্লিশটি হাদীস বর্ণিত আছে। পা ধোয়ার চেয়ে মোজার উপর মাসাহ করা উত্তম। কেননা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীগণ উত্তমটিই তালাশ করতেন।

২- সময়সীমা:

মুকিমের জন্য একদিন ও একরাত এবং মুসাফিরের জন্য তিনদিন ও তিনরাত মাসাহ করা জায়েয। মোজা পরিধান করার পরে প্রথম বার অপবিত্র হওয়া থেকে সময়সীমা শুরু হয়।

৩- মোজার উপর মাসাহর শর্তাবলী:

পরিধেয় মোজা বৈধ ও পবিত্র হওয়া। ফরয পরিমাণ অংশ ঢেকে থাকা এবং মোজা পবিত্র অবস্থায় পরিধান করা।

৪- মোজার উপর মাসাহর পদ্ধতি:

পানিতে হাত ভিজিয়ে পায়ের উপরিভাগের আঙ্গুলের অগ্রভাগ থেকে নলা পর্যন্ত একবার মাসাহ করা। পায়ের নিচে ও পিছনে মাসাহ নয়।

৫- মোজার উপর মাসাহ ভঙ্গের কারণসমূহ:

নিচের চারটির যে কোনো একটি কারণে মোজার উপর মাসাহ নষ্ট হয়ে যায়:

১- পায়ের থেকে মোজা খুলে ফেললে।

২- মোজা খুলে ফেলা অত্যাবশ্যকীয় হলে, যেমন গোসল ফরয হলে।

৩- পরিহিত মোজা বড় ছিদ্র বা ছিড়ে গেলে।

৪- মাসাহের মেয়াদ পূর্ণ হলে।

সব ধরণের পট্টি বা ব্যান্ডেজ খুলে না ফেলা পর্যন্ত তার উপর মাসাহ করা জায়েয, এতে মেয়াদ যতই দীর্ঘ হোক বা জানাবত তথা বড় নাপাকী লাগুক।