إِنَّ الْـحَمْدُ للهِ، نَحْمَدُهُ وَنَسْتَعِيْنُهُ وَنَسْتَغْفِرُهُ، وَنَعُـوْذُ بِاللهِ مِنْ شُرُوْرِ أَنْفُسِنَا، وَمِنْ سَيِّئَاتِ أَعْمَالِنَا، مَنْ يَّهْدِهِ اللهُ فَلاَ مُضِلَّ لَهُ، وَمَنْ يُّضْلِلِ اللهُ فَلاَ هَادِيَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنْ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيْكَ لَهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ

নিশ্চয় সকল প্রশংসা আল্লাহ তা‘আলার জন্য। আমরা সবাই তাঁরই প্রশংসা করছি, তাঁরই নিকট সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং তাঁরই নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি প্রবৃত্তির অনিষ্ট ও খারাপ আমল থেকে। যাকে আল্লাহ তা‘আলা হিদায়াত দিবেন তাকে পথভ্রষ্ট করার আর কেউ নেই এবং যাকে আল্লাহ তা‘আলা পথভ্রষ্ট করবেন তাকে হিদায়াত দেওয়ারও আর কেউ নেই। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সত্য কোনো মা’বূদ নেই। তিনি একক, তাঁর কোনো শরীক নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয় মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ তা‘আলার বান্দা ও একমাত্র তাঁরই প্রেরিত রাসূল।

বর্তমান বস্তুবাদী মুসলিম সমাজে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার ব্যাপারটি খুব একটা ব্যাপকতা পেয়েছে। পরস্পরকে ভালো কাজের পরামর্শ দেওয়া এবং পরস্পরের মধ্যকার পবিত্র সুসম্পর্কটুকু অটুট রাখার জন্য পরস্পর দেখা-সাক্ষাৎ চালু রাখা খুব একটা বেশি চোখে পড়ে না। যা কিছু রয়েছে তাও দুনিয়ার ক্ষুদ্র স্বার্থ উদ্ধারের লক্ষ্যে।

আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নের আবার কয়েকটি ধরনও রয়েছে। আত্মীয়-স্বজনদের কেউ তো এমনও রয়েছেন যে, তার আত্মীয়ের কোনো খবরই রাখেন না। মাসের পর মাস, বছরের পর বছর চলে যাচ্ছে; অথচ পরস্পরের মধ্যে কোনো দেখা-সাক্ষাতই হচ্ছে না। একে অন্যের মধ্যে কোনো দান বা উপঢৌকন আদান-প্রদান হচ্ছে না, তাদের কোনো বিশেষ প্রয়োজন পূরণ করা হচ্ছে না, একে অপরকে কোনো বিপদ থেকে উদ্ধার করছেন না, ভালো ব্যবহার দেখিয়ে তাদেরকে সন্তুষ্ট করা হচ্ছে না; বরং তাদেরকে সময় সময় কথা বা কাজে কষ্ট দেওয়া হচ্ছে।

আবার আত্মীয়-স্বজনদের কেউ তো এমনও রয়েছেন যে, তার আত্মীয়-স্বজনের কোনো অনুষ্ঠানেই তিনি যোগ দেন না। তাদের কোনো দুঃখ-বেদনার তিনি শরীক হন না। বরং তাদেরকে কোনো কিছু দান না করে অন্যকে দান করেন; অথচ তারাই তার দানের সর্বপ্রথম হকদার।

আবার আত্মীয়-স্বজনদের কেউ তো এমনও রয়েছেন যে, তার আত্মীয়-স্বজনের সাথে তিনি তখনই সুসম্পর্ক বজায় রাখেন যখন তারাও তার সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে। আর যখনই তারা তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে তখন তিনিও তাদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এমন আচরণকে বাস্তবার্থে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা বলা যায় না। কারণ, সমপ্রতিদান তো যে কোনো কারোর সাথেই হতে পারে। এতে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার বিশেষ কোনো বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান নেই। বস্তুতঃ আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করা মানে আপনি একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্যই আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করবেন। তারা আপনার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করুক বা নাই করুক।

আবার আত্মীয়-স্বজনদের কেউ তো এমনও রয়েছেন যে, তার আত্মীয়-স্বজনকে তিনি দীন-ধর্মের সঠিক আকীদা-বিশ্বাস ও যাবতীয় প্রয়োজনীয় জ্ঞান শিক্ষা দেন না এবং তাদেরকে ইসলামের সকল ধর্মীয় অনুশাসন নিজ জীবনে বাস্তবায়নের প্রতি দাওয়াতও দেন না; অথচ তিনি সর্বদা অন্যদেরকে ইসলামের খাঁটি আকীদা-বিশ্বাস ও যাবতীয় ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা দিতে এতটুকুও কোতাহী করেন না। বস্তুতঃ এরাই তো উক্ত দাওয়াতের সর্বপ্রথম হকদার।

পক্ষান্তরে অনেক বংশে ইসলামের সঠিক আকীদা-বিশ্বাস ও খাঁটি ধর্মীয় জ্ঞান বহনকারী অনেক আলিমে দীন, ধর্ম প্রচারক ও সমাজ সংস্কারক রয়েছেন যাদের সাথে তাদের বংশের লোকেরা পারতপক্ষে ভালো ব্যবহার দেখায় না। তাদেরকে যথাযোগ্য সম্মান দেয় না। তাদের কাছ থেকে আল্লাহ প্রদত্ত ইসলামের খাঁটি জ্ঞানের আলো তারা আহরণ করে না। যা তাদের সাথে শুধু আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করারই শামিল নয় বরং এতে করে মানুষের মাঝে তাদের সম্মান ধীরে ধীরে হ্রাস পায় এবং সমাজে তাদের প্রভাবও কমে যায়।

আবার আত্মীয়-স্বজনদের কেউ তো এমনও রয়েছেন যে, তিনি নিজেই তার আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে ফাটল ধরাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন। যে কোনো ছুতা-নাতা নিয়েই একেক জনকে অন্যের ওপর ক্ষেপিয়ে তোলেন।

আত্মীয়তার পরম বন্ধনটুকু ছিন্ন করার উপরোক্ত ধরনসমূহ ও অন্যান্য নব উদ্ভাবিত ধরন সমষ্টির মূলোৎপাটনের জন্যই আমাদের এ ক্ষুদ্র প্রয়াস।