উসূলে ফিক্বহ (ফিক্বহের মূলনীতি) ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ (العام) শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি

عام এর শব্দরূপ ৭ টি। যথা:

(১) মৌলিকগত ভাবে শব্দ ব্যাপক অর্থের উপর প্রমাণ করে। যেমন:

كل وجميع، وكافة، وقاطبة، وعامة؛

كل- সব, সবাই, جميع - সবাই, كافة - সকল, قاطبة - সমস্ত, عامة - ব্যাপক।

আল্লাহর বাণী:

إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ

আমি সব কিছু পরিমিত করে সৃষ্টি করেছি (সূরা আল-ক্বামার ৫৪:৪৯)।

(২) أسماء الشرط শর্তের অর্থ জ্ঞাপক বিশেষ্য। যেমন: আল্লাহর বাণী:

مَنْ عَمِلَ صَالِحاً فَلِنَفْسِه

যে কেউ ভালো কাজ করে, সে তার নিজের জন্যই করে (সূরা আল-জাছিয়া ৪৫:১৫)।

فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ

তোমরা যে দিকেই মুখ ফেরাও সে দিকেই আল্লাহর চেহারা রয়েছে (সূরা আল-বাক্বারা ২:১১৫)।

أسماء الاستفهام প্রশ্নবোধক বিশেষ্য: আল্লাহর বাণী:

فَمَنْ يَأْتِيكُمْ بِمَاءٍ مَعِينٍ

কে তোমাদের নিকট পৌছে দিবে প্রবাহমান পানি? (সূরা আল-মূলক ৬৭:৩০)।

مَاذَا أَجَبْتُمُ الْمُرْسَلِينَ

তোমরা রসূলদের কি জবাব দিয়েছিলে? (সূরা আল-ক্বাছাছ ২৮:৬৫)।

فأين تذهبون

তোমরা যাচ্ছো কোথায়? (সূরা আত-তাকভীর ২৯:২৬)।

(৪) (الأسماء الموصولة) সম্বন্ধ সূচক বিশেষ্য: আল্লাহ বলেন,

وَالَّذِي جَاءَ بِالصِّدْقِ وَصَدَّقَ بِهِ أُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ) [الزمر:33]

যারা সত্য এনেছে এবং সত্যকে সত্য বলে মেনে নিয়েছে তারাইতো আল্লাহভীরু (সূরা আয-যুমার ৩৯:৩৩)।

তিনি আরো বলেন,

وَالَّذِينَ جَاهَدُوا فِينَا لَنَهْدِيَنَّهُمْ سُبُلَنَا

যারা আমার পথে সাধনায় আত্ন নিয়োগ করে অবশ্যই আমি তাদেরকে আমার পথে পরিচালিত করবো (সূরা আল-আনকাবূত ২৯:৬৯)।

إِنَّ فِي ذَلِكَ لَعِبْرَةً لِمَنْ يَخْشَى

যারা ভয় করে, তাদের জন্য এতে উপদেশ রয়েছে (সূরা আন-নাযি‘আত ৭৯:২৬)।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَلِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْض

আসমান সমূহ ও জমিনের মাঝে যা কিছু রয়েছে সব কিছু আল্লাহর জন্যই (সূরা আলে ইমরান ৩:১২৯)।

(৫) النكرة في سياق النفي أو النهي أو الشرط أو الاستفهام الإنكاري (না বোধক অথবা নিষেধ সূচক অথবা শর্ত কিংবা অস্বীকৃতিজ্ঞাপক প্রশ্নবোধক শব্দের প্রেক্ষাপটে অনির্দিষ্ট বিশেষ্য ব্যবহৃত হওয়া। আল্লাহর বাণী:

وما من اله الا الله

আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন ইলাহ নেই (সূরা আলে-ইমরান ৩:৬২)। তিনি আরোও বলেন,

وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئاً

আল্লাহর ইবাদত করো, তার সাথে কাউকে শরীক করো না (সূরা আন-নিসা ৪:৩৬)।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

إِنْ تُبْدُوا شَيْئاً أَوْ تُخْفُوهُ فَإِنَّ اللَّهَ كَانَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيماً

তোমরা কোন বিষয় প্রকাশ করো অথবা গোপন করো আল্লাহ সর্ব বিষয়ে জ্ঞাত (সূরা আল-আহযাব ৩৩:৫৪)।

مَنْ إِلَهٌ غَيْرُ اللَّهِ يَأْتِيكُمْ بِضِيَاءٍ أَفَلا تَسْمَعُونَ

আল্লাহ ব্যতীত এমন কোন ইলাহ আছে কি যে তোমাদেরকে আলো এনে দিতে পারে? তবুও কি তোমরা শুনবে না? (সূরা ক্বাছাছ ২৮:৭১)।

(৬) المعرّف بالإضافة তথা বিশেষ্যপদ إضافة- সম্বন্ধ সূচক পদের মাধ্যমে নির্দিষ্ট হওয়া হোক তা একবচন অথবা বহুবচন। যেমন: আল্লাহর বাণী:

وأذكروا نعمة الله عليكم

তোমরা ঐ নি‘আমতের কথা স্মরণ করো যা আল্লাহ তোমাদের দান করেছেন (সূরা আ‘রাফ ৭:৭৪)।

(৭) المعرف بأل الاستغراقية সমুদয় অর্থ জ্ঞাপক أل এর মাধ্যমে বিশেষ্যপদ নির্দিষ্ট হওয়া। হোক তা একবচন বা বহুবচন। যেমন: আল্লাহর বাণী:

وَخُلِقَ الْإِنْسَانُ ضَعِيفاً

মানুষকে দুর্বল করে সৃষ্টি করা হয়েছে (সূরা নিসা ৪:২৮)।

আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَإِذَا بَلَغَ الْأَطْفَالُ مِنْكُمُ الْحُلُمَ فَلْيَسْتَأْذِنُوا كَمَا اسْتَأْذَنَ الَّذِينَ مِنْ قَبْلِهِم

তোমাদের সন্তান-সন্ততিরা বয়ঃপ্রাপ্ত হলে তারাও যেন তাদের পূর্ববর্তীদের ন্যায় অনুমতি প্রার্থনা করে (সূরা আন-নূর ২৪:৫৯)।কোন বিষয়ে বক্তা ও শ্রোতার অবগত হওয়া অনুসারে أل العهدية দ্বারা মা‘রেফা বা নির্দিষ্ট হয়। যদি তাদের জ্ঞাত বিষয়টি عام হয় তাহলে এ أل দ্বারা মা‘রেফা বা নির্দিষ্ট শব্দটি عام হবে। আর শব্দের জ্ঞাত বিষয়টি خاصًّ হলে أل দ্বারা নির্দিষ্ট বিশেষ্য পদটিও خاصًّ হবে।[1]

[1]. ال তিন প্রকার। العهدية -الجنسية- الاستغراقية এর মধ্যে শুধুমাত্র ال الاستغراقية - عام এর ফায়দা দেয়। এই ال চেনার উপায় হলো: ال এর স্থলে كل শব্দ ব্যবহৃত করা শুদ্ধ হবে। যেমন: আয়াতের الانسان শব্দটির ال হলো الاستغراقية । কাজেই উক্ত ال এর স্থলে كل শব্দ ব্যবহার করলেও অর্থের কোন পরিবর্তন হবে না। আবার অন্য ভাবেও এটাকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়।

যেমন: ১. ذكري -যেখানে উদ্দেশ্যপুর্ণ বিষয়টি পূর্বে উল্লেখ করা থাকে। যেমন: فعصى فرعون الرسول -আয়াতে الرسول দ্বারা উদ্দেশ্য মুসা আ: যার উলে­খ পূর্বে করা হয়েছে।

২.حضوري -উদ্দেশ্যপূর্ণ বিষয়টি উপস্থিত থাকে। যেমন বলা: أكرم الرجل

৩. ذهني -উদ্দেশ্যপূর্ণ জিনিস বক্তা ও শ্রোতার মস্তিস্কে থাকে। যেমন: তুমি বলবে, قال الامام এর দ্বারা উদ্দেশ্য হলো ইমাম আহমাদ।