কুরআন ও হাদীছের আলোকে হজ্জ, উমরাহ ও মদীনা যিয়ারত সপ্তম অধ্যায় শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি

৯ যিলহাজ্জ সূর্য অস্তমিত হওয়ার পরে আরাফায় অবস্থানকারী হাজী মুযদালিফার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবে। অতঃপর সেখানে মাগরিব ও ইশা (জমা তা’খীর) বিলম্বে একত্রিত করে আদায় করবে। মাগরিব তিন রাকা‘আত এবং ইশা দুই রাকা‘আত কসর করে আদায় করবে।

উসামাহ্ বিন যায়দ (রা.) থেকে বর্ণিত হাদীস, তিনি বলেন, নাবী (সা.) আরাফা হতে (মুযদালিফার উদ্দেশ্যে) রওয়ানা হলেন, অতঃপর এক ঘাঁটিতে নেমে পেশাব করলেন তারপর মুখ হাত ধৌত করলেন। তখন আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সলাত আদায় করবেন না? তিনি বললেন, সলাত আরো সামনে গিয়ে আদায় করব।[1]

অতঃপর মুযদালিফা এসে পূর্ণরূপে উযূ করলেন তারপর সলাতের ইকামাত দেয়া হলে মাগরিবের সলাত আদায় করেন। তারপর প্রত্যেকে নিজ নিজ সাওয়ারীর উঁট তাঁবুর নিকটেই বসিয়ে দিল অতঃপর ইশার ইকামাত দেয়া হলে সলাত আদায় করেন।[2]

তাই হাজীর জন্য মুযদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও ইশার সলাত আদায় করা সুন্নাত। তবে অর্ধেক রাত অতিবাহিত হয়ে ইশার সময় পার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা হলে সময় শেষ হওয়ার পূর্বে পথে যে কোন স্থানে সলাত আদায় করে নেয়া ওয়াজিব। তারপর মুযদালিফায় রাত যাপণ করবে কিন্তু সেখানে নফল সলাত বা অন্য কোন আমলের মাধ্যমে রাত জাগরণ করবে না। কারণ, নাবী (সা.) এখানে তা করেননি।

আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) হতে বর্ণিত, নাবী (সা.) মুযদালিফায় মাগরিব ও ইশার সলাত একত্রিত করেছেন। তবে এ দুই সলাতের মাঝে বা পরে কোন সুন্নাত সলাত আদায় করেননি।[3]

আর জাবির (রা.) হতে বর্ণিত রয়েছে যে, নাবী (সা.) মুযদালিফায় এসে সেখানে এক আযান এবং দুই ইকামাতে মাগরিব ও ইশার সলাত আদায় করলেন। তবে এর মাঝে কোন সুন্নাত বা নফল পড়লেন না। তারপর ফজর হওয়া পর্যন্ত শুয়ে রইলেন।[4]

আর দুর্বল পুরুষ ও নারীদের জন্য রাতের শেষভাগে মুযদালিফা থেকে প্রস্থান করা জায়েয। কারণ ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল (সা.) আমাকে তাঁর পরিবারের দুর্বল সদস্যদের সঙ্গে মুযদালিফা থেকে ভোর রাত্রেই পঠিয়ে দেন।[5]

আর আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি নিজ পরিবারের দুর্বলদের সময়ের পূর্বেই পাঠিয়ে দিতেন। অতঃপর মাশআরুল হারামের নিকট (মুযদালিফা) রাত্রে অবস্থান করতেন এবং সেখানে যথাসাধ্য মহান আল্লাহর যিকির ও দু‘আ করতেন। অতঃপর সেখান থেকে (শেষ রাত্রে) রওয়ানা হয়ে যেতেন। যার ফলে কেউ কেউ ফজরের সলাতেই মিনা পৌঁছে যেতেন, আবার কেউ তার কিছু পরে পৌঁছাতেন। তারা মিনা পৌঁছে (বড়) জামরায় কংকর নিক্ষেপ করে নিতেন।[6]

আর আব্দুল্লাহ বিন উমার (রা.) বলতেন এধরণের দুর্বলদের ক্ষেত্রে আল্লাহর রসূল (সা.) ছাড় দিয়েছেন।[7] তবে যারা দুর্বলও নয় এবং দুর্বলের সঙ্গীও নয় তারা রসূল (সা.) এর সুন্নাত মুতাবেক ফজর সলাত আদায় করা পর্যন্ত মুযদলিফায় অবস্থান করবে।

আর আয়িশা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) এর নিকট সাওদাহ্ (রা.) মুযদালিফার রাতে লোকজনের ভীড় থেকে বাঁচার জন্য নাবী (সা.) এর রওনা হওয়ার আগেই মিনা চলে যাওয়ার অনুমতি চাইলেন, কারণ, তিনি মোটা মানুষ ছিলেন। তখন নাবী (সা.) তাঁকে অনুমতি দিয়ে দেন। আর আমরা সকাল পর্যন্ত মুযদালিফাতেই থেকে গেলাম, অতঃপর নবী (সা.) এর সঙ্গে মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। তবে আমি যদি সাওদাহ্ (রা.)-এর মতই আল্লাহর রাসূল (সা.) এর নিকট অনুমতি নিয়ে রাত্রেই মিনা চলে যেতাম তাহলে তা যে কোন খুশীর চাইতে প্রিয় হত।[8]

অপর একটি বর্ণনায় আছে, সাওদাহ্ (রা.) যেমন নাবী (সা.) এর নিকট অনুমতি নিয়ে রাত্রেই মিনা চলে গিয়েছিলেন তাঁর মত আমিও যদি তাঁর নিকট অনুমতি নিয়ে চলে যেতাম তা কতই না ভাল হত।[9]

অতঃপর ফজর সলাত সমাপ্ত হলে মাশ‘আরে হারামে এসে ক্বিবলামুখী হয়ে আল্লাহর একত্ব ঘোষণা করবে, তাকবীর পাঠ করবে, কালিমা তাওহীদ পাঠ করবে এবং পূর্ব আকাশ ফর্সা হওয়া পর্যন্ত নিজ পছন্দ মত দু‘আ করতে থাকবে। তবে যদি কেউ মাশ‘আরে হারামে যেতে না পারে তাহলে নিজ স্থানেই দু‘আ করতে থাকবে। কারণ, নাবী (সা.) বলেছেন:

وَوَقَفْتُ هَاهُنَا وَجَمْعٌ كُلُّهَا مَوْقِفٌ

আর আমি (মুযদালিফায়) এখানে অবস্থান করলাম। তবে মুযদালিফার সব জায়গায় হচ্ছে অবস্থান স্থল।[10]

[1]. সহীহ বুখারী ১৬৬৭

[2]. সহীহ বুখারী ১৬৭২

[3]. সহীহ বুখারী ১৬৭৩

[4]. সহীহ মুসলিম ১২১৮

[5]. সহীহ মুসলিম ১২৯৩

[6]. সহীহ বুখারী ১৬৭৬

[7]. সহীহ বুখারী ১৬৭৬

[8]. সহীহ মুসলিম ১২৯০।

[9]. সহীহ মুসলিম ১২৯০।

[10]. মুসনাদে আহমাদ ও সহীহ মুসলিম ১২১৮।