৩২। কাফের-মুশরিকদের জন্য হেদায়াতের দু‘আ করা (الدعاء للكفار والمشركين بالهداية)

আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(رَبَّنَا افْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِالْحَقِّ وَأَنْتَ خَيْرُ الْفَاتِحِينَ (89)) [الأعراف: 89].

‘হে আমাদের রব! আমাদের ও আমাদের কওমের মধ্যে যথার্থ ফয়সালা করে দিন। আর আপনি শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী’ (সূরা আল-আ‘রাফ: ৮৯)।

وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: قَدِمَ الطُّفَيْلُ وَأَصْحَابُهُ فَقَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ دَوْساً قَدْ كَفَرَتْ وَأَبَتْ، فَادْعُ اللهَ عَلَيْهَا، فَقِيلَ: هَلَكَتْ دَوْسٌ فَقَالَ: «اللَّهُمَّ اهْدِ دَوْساً وَائْتِ بِهِمْ». متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (2937)، ومسلم برقم (4524)، واللفظ له

আবূ হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, তুফায়েল ও তার সঙ্গীরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! দাওস সম্প্রদায় কুফরী অবলম্বন করেছে এবং ইসলাম কবূলে স্বীকৃতি দেয়নি। অতএব, আপনি তাদের বিপক্ষক্ষে বদ্দু‘আ করুন। তখন বলা হলো, দাওস ধ্বংস হৌক। তিনি বললেন, اللَّهُمَّ اهْدِ دَوْساً وَائْتِ بِهِمْ “হে আল্লাহ! দাওসকে হেদায়াত দান করো এবং তাদেরকে (আমার নিকট) এনে দাও” (ছহীহ বুখারী, হা/২৯৩৭; ছহীহ মুসলিম, হা/২৫২৪/৪৫২৪)।

وَعَنْ أَبي هُرَيْرَة رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: كُنْتُ أَدْعُو أُمِّي إِلَى الإِسْلاَمِ وَهِيَ مُشْرِكَةٌ، فَدَعَوْتُهَا يَوْماً فَأَسْمَعَتْنِي فِي رَسُولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - مَا أَكْرَهُ، فَأَتَيْتُ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - وَأَنَا أَبْكِي، قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ! إِنِّي كُنْتُ أَدْعُو أُمِّي إِلَى الإِسْلاَمِ فَتَأْبَى عَلَيَّ، فَدَعَوْتُهَا اليَوْمَ فَأَسْمَعَتْنِي فِيكَ مَا أَكْرَهُ، فَادْعُ اللهَ أَنْ يَهْدِيَ أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -: «اللَّهُمَّ اهْدِ أُمَّ أَبِي هُرَيْرَةَ». فَخَرَجْتُ مُسْتَبْشِراً بِدَعْوَةِ نَبِيِّ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -، فَلَمَّا جِئْتُ فَصِرْتُ إِلَى البَابِ، فَإِذَا هُوَ مُجَافٌ، فَسَمِعَتْ أُمِّي خَشْفَ قَدَمَيَّ، فَقَالَتْ: مَكَانَكَ! يَا أَبَا هُرَيْرَةَ! وَسَمِعْتُ خَضْخَضَةَ المَاءِ، قَالَ: فَاغْتَسَلَتْ وَلَبِسَتْ دِرْعَهَا وَعَجِلَتْ عَنْ خِمَارِهَا، فَفَتَحَتِ البَابَ، ثُمَّ قَالَتْ، يَاأَبَا هُرَيْرَةَ! أَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّداً عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، قَالَ: فَرَجَعْتُ إِلَى رَسُولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -، فَأَتَيْتُهُ وَأَنَا أَبْكِي مِنَ الفَرَحِ، قَالَ قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللهِ! أَبْشِرْ قَدِ اسْتَجَابَ اللهُ دَعْوَتَكَ وَهَدَى أُمَّأَبِي هُرَيْرَةَ! فَحَمِدَ اللهَ وَأَثْنَى عَلَيْهِ وَقَالَ خَيْراً. أخرجه مسلم برقم (2491)

আবূ কাছীর হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আবূ হুরায়রাহ্ (রা.) বর্ণনা করেছেন যে, আমি আমার মা মুশরিক থাকা অবস্থায় আমি তাকে ইসলামের দিকে আহবান করতাম। একদা আমি তাকে ইসলাম গ্রহণের জন্য আহবান জানালে তিনি রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এ ব্যাপারে আমাকে এমন কথা শুনালেন, যা আমার নিকট অপছন্দনীয় মনে হচ্ছিল। আমি কাঁদতে কাঁদতে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট আসলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমি আমার মাকে ইসলামের দা‘ওয়াত দিয়েছিলাম আর তিনি আমার দা‘ওয়াত অস্বীকার করে আসছেন। তারপর আমি তাকে আজ দা‘ওয়াত দেওয়াতে তিনি আমাকে আপনার ব্যাপারে এমন কথা শুনালেন, যা আমি অপছন্দ করি। অতএব, আপনি আল্লাহর নিকট দু‘আ করুন যেন তিনি আবূ হুরায়রার মাকে হেদায়াত দান করেন।

তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: হে আল্লাহ! আবূ হুরায়রার মাকে হেদায়াত দান করো। তারপর রাসূলুল্লাহ-এর দু‘আর কারণে আমি খুশি মনে বেরিয়ে এলাম। যখন আমি ঘরে পৌঁছলাম, তখন তার দরজা বন্ধ দেখতে পেলাম। আমর মা আমার পায়ের আওয়াযশুনতে পেলেন। তারপর তিনি বললেন, আবূ হুরায়রা! একটু দাঁড়াও (থামো)। তখন আমি পানির কলকল শব্দ শুনছিলাম। তিনি বলেন, এরপর তিনি (আমার মা) গোসল করলেন এবং শরীরে চাদর দিলেন। আর তাড়াতাড়ি করে ওড়না জড়িয়ে নিলেন, তারপর বাড়ির দরজা খুলে দিলেন। অতঃপর বললেন, হে আবূ হুরায়রা! আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃতপক্ষক্ষে কোন ইলাহ নেই; আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার বান্দা ও রাসূল। তিনি বলেন, তখন আমি রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর খিদমতে উপস্থিত হলাম। তারপর তার নিকট গেলাম এবং আমি তখন আনন্দে আত্মহারা হয়ে কাঁদছিলাম। তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! সুখবর শুনুন। আল্লাহ আপনার দু‘আ কবুল করেছেন এবং আবূ হুরায়রার মাকে হেদায়াতপ্রাপ্ত করেছেন। তারপর তিনি আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করলেন ও তার প্রশংসা করলেন। আর বললেন, উত্তম (ছহীহ মুসলিম, হা/২৪৯১)।

وَعَنْ عَبْداللهِ بنِ مَسْعُودٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ: كَأَنّي أَنْظُرُ إلَى رَسُولِ الله - صلى الله عليه وسلم -.يَحْكِي نَبِيّا مِنَ الأَنْبِيَاءِ ضَرَبَهُ قَوْمُهُ، وَهُوَ يَمْسَحُ الدّمَ عَنْ وَجْهِهِ وَيَقُولُ: «رَبّ اغْفِرْ لِقَوْمِي فَإِنّهُمْ لاَ يَعْلَمُونَ». متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (3477) , واللفظ له، ومسلم برقم (1792)

আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘ঊদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: আমি যেন এখনো নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে দেখছি, যখন তিনি একজন নবীর অবস্থা বর্ণনা করছিলেন যে, তার স্বজাতিরা তাকে প্রহার করে রক্তাক্ত করে দিয়েছে আর তিনি তার চেহারা হতে রক্ত মুছে ফেলছেন এবং বলছেন, হে আল্লাহ! আমার জাতিকে ক্ষমা করে দাও, যেহেতু তারা জানে না (ছহীহ বুখারী, হা/৩৪৭৭; (ছহীহ মুসলিম, হা/১৭৯২)।