নবী-রাসূলগণের দা‘ওয়াতী মূলনীতি ৭। আহূতদের বিধান (أحكام المدعوين) মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত-তুওয়াইজিরী ১ টি
ঘ. আহূতদের প্রকার এবং তাদের দা‘ওয়াতের ধরণ (أصناف المدعوين، وكيفية دعوتهم)

মানুষ চিন্তা-চেতনা ও আমলের দিক থেকে বিভিন্ন রকম হয়ে থাকে। তাই তাদের ভিন্নতা অনুযায়ী তাদের দা‘ওয়াত, সৎকাজের আদেশ ও অসৎকাজ থেকেনিষেধের বিধানও ভিন্ন ভিন্ন হবে, আর তা নিম্নরূপ:

১। অপূর্ণ ঈমানের অধিকারী এবং বিধি-বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ।

এসব ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমরা ধৈর্য ধারণসহ তাদেরকে আল্লাহর দিকে আহবান করবো, নরম কথা ও সহানুভূতির সাথে শিক্ষা দেবো। কোমলতার সাথে উত্তম কাজের দিক-নির্দেশনা দিব। যেমন- একজন আগন্তুক বেদুঈন এসে মসজিদে পেশাব করলে রাসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে ধৈর্যের সাথে ভাল আচরণ করেছিলেন।

عَنْ أنَس بن مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قال: بَيْنَمَا نَحْنُ فِي المَسْجِدِ مَعَ رَسُولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - إِذْ جَاءَ أعْرَابِيٌّ، فَقَامَ يَبُولُ فِي المَسْجِدِ، فَقَالَ أصْحَابُ رَسُولِ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -: مَهْ مَهْ. قالَ: قالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -: «لا تُزْرِمُوهُ، دَعُوهُ». فَتَرَكُوهُ حَتَّى بَالَ، ثُمَّ إِنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - دَعَاهُ فَقَالَ لَهُ: «إِنَّ هَذِهِ المَسَاجِدَ لا تَصْلُحُ لِشَيْءٍ مِنْ هَذَا البَوْلِ وَلا القَذَرِ، إِنَّمَا هِيَ لِذِكْرِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ، وَالصَّلاةِ، وَقِرَاءَةِ القُرْآنِ». أوْ كَمَا قالَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -، قالَ: فَأمَرَ رَجُلاً مِنَ القَوْمِ، فَجَاءَ بِدَلْوٍ مِنْ مَاءٍ، فَشَنَّهُ عَلَيْهِ. متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (219) , ومسلم برقم (285)، واللفظ له

আনাস ইবনু মালিক (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন আমরা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সঙ্গে মসজিদে নববীতে ছিলাম। এ সময় হঠাৎ এক বেদুঈন এসে মসজিদের মধ্যে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করতে লাগলেন, তা দেখে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ছাহাবীগণ ‘থামো থামো’ বলে তাকে প্রস্রাব করতে বাধা দিলেন। আনাস (রা.) বলেন, তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: তোমরা তাকে বাধা দিও না, বরং তাকে ছেড়ে দাও। লোকেরা তাকে ছেড়ে দিলেন, তিনি প্রস্রাব সেরে নিলেন। তখন রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে কাছে ডেকে বললেন: এটা হলো মসজিদ। এখানে প্রস্রাব করা কিংবা ময়লা-আবর্জনা ফেলা যায় না। বরং এ হলো আল্লাহর যিকর করা, ছালাত আদায় করা এবং কুরআন পাঠ করার স্থান। অথবা রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কথাটা যেভাবে বলেছেন তাই। আনাস (রা.) বলেন, এরপর রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সবার মধ্য থেকে এক ব্যক্তিতে এক বালতি পানি আনতে আদেশ করলেন। সে এক বালটি পানি আনলে তিনি তা প্রস্রাবের উপর ঢেলে দিলেন (ছহীহ বুখারী, হা/২১৯; ছহীহ মুসলিম, হা/২৮৫)।

২। অপূর্ণ ঈমানের অধিকারী কিন্তু বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞাত।

উত্তম উপদেশ ও হিকমাত (কৌশল জ্ঞান) এর সাথে এ ব্যক্তিকে আল্লাহর দিকে আহবান করতে হবে। তার সামনে বোধগম্য উদাহরণ ও যৌক্তিক দলীল পেশ করতে হবে। তার ঈমান বৃদ্ধির জন্য দু‘আ করতে হবে, যাতে সে আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্যের উপর অটল থাকে।

عَنْ أَبي أُمَامَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قالَ: إِنَّ فَتًى شَابّاً أَتَى النَّبِيَّ - صلى الله عليه وسلم - فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، ائْذَنْ لِي بِالزِّنَا، فَأَقْبَلَ القَوْمُ عَلَيْهِ فَزَجَرُوهُ، قَالُوا: مَهْ مَهْ، فَقَالَ: «ادْنُهْ»، فَدَنَا مِنْهُ قَرِيباً، قَالَ: فَجَلَسَ، قَالَ: «أَتُحِبُّهُ لأُمِّكَ؟» قَالَ: لاَ وَاللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ، قَالَ: «وَلاَ النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لأُمَّهَاتِهِمْ»، قَالَ: «أَفَتُحِبُّهُ لاِبْنَتِكَ؟» قَالَ: لاَ وَاللهِ يَا رَسُولَ اللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ، قَالَ: «وَلاَ النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِبَنَاتِهِمْ»، قَالَ: «أَفَتُحِبُّهُ لأُخْتِكَ؟» قَالَ: لاَ وَاللهِ، جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ، قَالَ: «وَلاَ النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لأُخَوَاتِهِمْ»، قَالَ: «أَفَتُحِبُّهُ لِعَمَّتِكَ؟» قَالَ: لاَ، وَاللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ، قَالَ: «وَلاَ النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِعَمَّاتِهِمْ»، قَالَ: «أَفَتُحِبُّهُ لِخَالَتِكَ؟» قَالَ: لاَ وَاللهِ جَعَلَنِي اللهُ فِدَاءَكَ، قَالَ: «وَلاَ النَّاسُ يُحِبُّونَهُ لِخَالاَتِهِمْ»، قَالَ: فَوَضَعَ يَدَهُ عَلَيْهِ وَقَالَ: «اللَّهمَّ اغْفِرْ ذَنْبَهُ، وَطَهِّرْ قَلْبَهُ، وَحَصِّنْ فَرْجَهُ». قال: فَلَمْ يَكُنْ بَعْدُ ذَلِكَ الفَتَى يَلْتَفِتُ إِلَى شَيْءٍ. صحيح/ أخرجه أحمد برقم (22564) , انظر «السلسلة الصحيحة» رقم (370)

আবূ উমামাহ (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: একজন যুবক রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর নিকট এসে বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাকে ব্যভিচার করার অনুমতি দিন। লোকজন তাকে ধমক দিলেন এবং বললেন, চুপ করো। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তাকে কাছে আসতে দাও। অতঃপর যুবকটি কাছে আসলেন। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: তুমি কি তোমার মায়ের জন্য যেনা পছন্দ করো? যুবকটি বললেন, আল্লাহর কসম! পছন্দ করি না। কেউই তার মায়ের জন্য যেনা পছন্দ করে না। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: তুমি কি তোমার মেয়ের জন্য যেনা পছন্দ করো? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! পছন্দ করি না, হে আল্লাহর রাসূল! আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। কেউই তার মেয়ের জন্য যেনা পছন্দ করে না। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: তুমি কি তোমার বোনের জন্য যেন পছন্দ করো? তিনি জবাব দিলেন, আল্লাহর কসম! পছন্দ করি না। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। কেউই তার বোনের জন্য যেনা পছন্দ করে না। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: তুমি কি তোমার ফুফুর জন্য যেনা পছন্দ করো? তিনি বললেন, আল্লাহর কসম! পছন্দ করি না। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। কেউই তার ফুফুর জন্য যেনা পছন্দ করে না। রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: তুমি কি তোমার খালার জন্য যেনা পছন্দ করো? তিনি জবাব দিলেন, আল্লাহর কসম! পছন্দ করি না। আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন। কেউই তার খালার জন্য যেনা পছন্দ করে না। তারপর রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর হাত যুবকটির গায়ে রেখে বললেন:

«اللَّهمَّ اغْفِرْ ذَنْبَهُ، وَطَهِّرْ قَلْبَهُ، وَحَصِّنْ فَرْجَهُ»

‘‘হে আল্লাহ! তার গুনাহ মাফ করো, তার অন্তর পবিত্র রাখো, তার লজ্জা স্থানের হিফাযত করো।’’অতঃপর ঐ যুবক আর কখনো এ কাজে লিপ্ত হননি (মুসনাদে আহমাদ, হা/ ২২৫৬৪, ছহীহ, সিলসিলাহ ছহীহাহ, ৩৭০)।

৩। দৃঢ় ঈমানের অধিকারী কিন্তু বিধান সম্পর্কে অজ্ঞ।

এ ধরণের ব্যক্তিকে সরাসরি শরী‘আতের বিধান ও অবাধ্যতার কুফল বর্ণনার মাধ্যমে এবং তার ঘটিত অসৎকাজ দূরীকরণে সঠিক দিশা প্রদানের মাধ্যমে দা‘ওয়াত দিতে হবে।

عَنْ عَبْدالله بْنِ عَبّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ أَنّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - رَأَىَ خَاتِماً مِنْ ذَهَبٍ فِي يَدِ رَجُلٍ، فَنَزَعَهُ فَطَرَحَهُ وَقَالَ: «يَعْمِدُ أَحَدُكُمْ إِلَىَ جَمْرَةٍ مِنْ نَارٍ فَيَجْعَلُهَا فِي يَدِهِ» فَقِيلَ لِلرّجُلِ، بَعْدَ مَا ذَهَبَ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -: خُذْ خَاتَمَكَ انْتَفِعْ بِهِ،قَالَ: لاَ، وَالله لاَ آخُذُهُ أَبَداً، وَقَدْ طَرَحَهُ رَسُولُ اللهِ - صلى الله عليه وسلم -. أخرجه مسلم برقم (2090)

আব্দুল্লাহ ইবনু আববাস (রা.) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জনৈক লোকের হাতে একটি সোনার আংটি লক্ষ্য করে সেটি খুলে ফেলে দিলেন এবং বললেন, তোমাদের মাঝে কেউ কেউ আগুনের টুকরা জোগাড় করে তার হাতে রাখে। রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সে স্থান ত্যাগ করলে ব্যক্তিটিকে বলা হলো, আপনার আংটি উঠিয়ে নিন। এটি দিয়ে উপকার হাছিল করুন। তিনি বললেন, না। আল্লাহ কসম! আমি কÿনো ওটা নিব না। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তো ওটা ফেলে দিয়েছেন’ (ছহীহ মুসলিম, হা/২০৯০)।

৪। দৃঢ় ঈমানের অধিকারী ও বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞাত।

এ ধরনের ব্যক্তির ব্যাপারে কোন আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। আগের ব্যক্তিদের তুলনায় এ ধরনের ব্যক্তির পাপ থেকে তাকে শক্তভাবে নিষেধ করতে হবে এবং কঠিন আচরণ করতে হবে, যাতে সে পাপকাজে অন্যের আদর্শ না হয়।

كما اعتزل النبي - صلى الله عليه وسلم - الثلاثة الذين خُلِّفوا في غزوة تبوك خمسين ليلة، وأمر الناس بهجرهم لما تركوا الخروج مع الرسول والناس لغزوة تبوك مع كمال إيمانهم وعلمهم ولا عذر لهم، ثم تاب الله عليهم، وهم هلال بن أمية، وكعب بن مالك، ومرارة بن الربيع رضي الله عنهم.والقصة مفصلة في الصحيحين (متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (4418) , ومسلم برقم (2769)

যেমন, রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাবূক যুদ্ধে না যাওয়ার অপরাধে তিন ব্যক্তি থেকে ৫০ দিন মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন এবং মানুষদেরকে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অথচ তাদের পূর্ণ ঈমান ও জ্ঞান ছিল, কোন অজুহাত ছিল না। অবশ্য পরবর্তীতে আল্লাহ তাদের তাওবা কবুল করেন। তারা হচ্ছেন, হিলাল ইবনু উমাইয়াহ, কা‘ব ইবনু মালেক ও মুরারা ইবনুর-রবী‘। ছহীহ বুখারী ও ছহীহ মুসলিমে ঘটনাটি বিস্তারিত বর্ণিত হয়েছে।[1] আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَعَلَى الثَّلَاثَةِ الَّذِينَ خُلِّفُوا حَتَّى إِذَا ضَاقَتْ عَلَيْهِمُ الْأَرْضُ بِمَا رَحُبَتْ وَضَاقَتْ عَلَيْهِمْ أَنْفُسُهُمْ وَظَنُّوا أَنْ لَا مَلْجَأَ مِنَ اللَّهِ إِلَّا إِلَيْهِ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ لِيَتُوبُوا إِنَّ اللَّهَ هُوَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُ (118)) ... [التوبة: 118]

‘এবং সে তিন জনের (তাওবা কবুল করলেন), যাদের বিষয়টি স্থগিত রাখা হয়েছিল। এমনকি পৃথিবী প্রশস্ত হওয়া সত্ত্বেও তাদের জন্য সংকীর্ণ হয়ে গিয়েছিল এবং তাদের নিকট তাদের জীবন দুর্বিসহ হয়ে উঠেছিল। আর তারা নিশ্চিত বুঝেছিল যে, আল্লাহর আযাব থেকে কোন আশ্রয়স্থল নেই। অতঃপর তিনি তাদের তওবার তাওফীক্ব দিলেন, যাতে তারা তাওবা করে। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুলকারী, দয়ালু’ (সূরা আত-তাওবা: ১১৮)।

৫। যে ব্যক্তি ঈমান ও বিধি-বিধান উভয় সম্পর্কে অজ্ঞ।

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা মানুষগুলোর অধিকাংশ কাফেরই এ শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত। তাদেরকে প্রথমত আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের দা‘ওয়াত দিতে হবে। তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলা ও তার নামসমূহ, গুণাবলী, তার সীমাহীন দয়া এবং মহা নেয়ামত সম্পর্কে জানাতে হবে। আল্লাহর শান্তির অঙ্গীকার ও শাস্তির ভয় স্মরণ করাতে হবে, জান্নাত লাভে উৎসাহ প্রদান এবং জাহান্নাম সম্পর্কে ভীতি প্রদর্শন করতে হবে। তারা ঈমানে অটল হলে পর্যায়ক্রমে আল্লাহর বিধানাবলী জানাতে হবে। যেমনঃ ছালাত এবং ছালাতের আবশ্যকীয় বিষয় পবিত্রতা ও অযূ ইত্যাদি; তারপর যাকাত...এভাবে।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ وَلِلْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنَاتِوَاللَّهُ يَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَمَثْوَاكُمْ ) [محمد: 19]

‘অতএব, জেনে রাখ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই। তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর তোমার এবং মুমিন নারী-পুরুষদের ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য। আল্লাহ তোমাদের গতিবিধি এবং নিবাস সম্পর্কে অবগত রয়েছেন’ (সূরা মুহাম্মাদ: ১৯)।

وَعَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا: أنَّ رَسُولَ اللهِ - صلى الله عليه وسلم - لَمَّا بَعَثَ مُعَاذاً رَضيَ اللهُ عَنْهُ عَلَى اليَمَنِ، قال: «إِنَّكَ تَقْدَمُ عَلَى قَوْمٍ أهْلِ كِتَابٍ، فَلْيَكُنْ أوَّلَ مَا تَدْعُوهُمْ إِلَيْهِ عِبَادَةُ اللهِ، فَإِذَا عَرَفُوا اللهَ، فَأخْبِرْهُمْ: أنَّ اللهَ قَدْ فَرَضَ عَلَيْهِمْ خَمْسَ صَلَوَاتٍ فِي يَوْمِهِمْ وَلَيْلَتِهِمْ، فَإِذَا فَعَلُوا، فَأخْبِرْهُمْ أنَّ اللهَ فَرَضَ عَلَيْهِمْ زَكَاةً مِنْ أمْوَالِهِمْ، وَتُرَدُّ عَلَى فُقَرَائِهِمْ، فَإِذَا أطَاعُوا بِهَا، فَخُذْ مِنْهُمْ، وَتَوَقَّ كَرَائِمَ أمْوَالِ النَّاسِ» متفق عليه، أخرجه البخاري برقم (1458) , واللفظ له، ومسلم برقم (19)

২। ইবনু আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। মু‘আয ইবনু জাবাল (রা.) বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে (ইয়ামানের প্রশাসক নিযুক্ত করে) পাঠালেন। তিনি বললেন, তুমি এমন এক সম্প্রদায়ের নিকট যাচ্ছো, যারা কিতাবধারী। সুতরাং তাদেরকে আহবান জানাবে এ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য যে, আল্লাহ ব্যতীত প্রকৃত কোন ইলাহ (উপাস্য) নেই আর আমি আল্লাহর রাসূল। যদি তারা তোমার এ কথা মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, প্রত্যেক দিন ও রাতে আল্লাহ তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত ফরয করেছেন। যদি তারা তোমার এ কথাও মেনে নেয়, তবে তাদেরকে জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন- যা তাদের ধনীদের থেকে আদায় করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হবে। যদি তারা এ কথাও মেনে নেয়, তবে তাদের ভালো সম্পদ গ্রহণ করা থেকে বিরত থেকো। আর মাযলূমের অভিশাপকে ভয় কর, কেননা তার ও আল্লাহর মাঝে কোন আড়াল নেই’ (ছহীহ বুখারী, হা/১৪৫৮;ছহীহ মুসলিম, হা/১৯)।

>
[1]. মুত্তাফাকুন আলাইহি। ছহীহ বুখারী, হা/৪৪১৮; ছহীহ মুসলিম, হা/২৭৬৯।