নবী-রাসূলগণের দা‘ওয়াতী মূলনীতি ৭। আহূতদের বিধান (أحكام المدعوين) মুহাম্মাদ ইবনে ইবরাহীম আত-তুওয়াইজিরী ১ টি

কুরআনে আল্লাহ তা‘আলা তিন ধরণের মানুষের পরিচয় উল্লেখ করেছেনঃ

১. মুমিন (المؤمنون)
২. কাফের (الكفار)
৩. মুনাফিক (المنافقون)

১। মুমিনরা ঈমান ও সৎ আমল বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ آيَاتُهُ زَادَتْهُمْ إِيمَانًا وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ (2) الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ (3) أُولَئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا لَهُمْ دَرَجَاتٌ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ (4)) . [الأنفال: 2 - 4]

‘মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয়, তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে। (২) যারা ছালাত কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিযক দিয়েছি, তা হতে ব্যয় করে। (৩) তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের জন্য রয়েছে তাদের রবের নিকট উচ্চ মর্যাদাসমূহ এবং ক্ষমা ও সম্মানজনক রিযক’ (সূরা আল-আনফাল: ২-৪)।

মুমিনরা উচ্চ মর্যাদার অধিকারী, যারা দুনিয়াতে হবে সৌভাগ্যবান আর আখেরাতে জান্নাত লাভ করবে।

২। কাফেররা কুফর, আল্লাহর অবাধ্যতা ও কু-প্রবৃত্তির উপভোগ বৃদ্ধির জন্য কাজ করে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(وَالَّذِينَ كَفَرُوا يَتَمَتَّعُونَ وَيَأْكُلُونَ كَمَا تَأْكُلُ الْأَنْعَامُ وَالنَّارُ مَثْوًى لَهُمْ (12)) [محمد: 12]

‘কিন্তু যারা কুফরী করে, তারা ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকে এবং তারা আহার করে যেমন চতুষ্পদ জন্তুরা আহার করে। আর জাহান্নামই তাদের বাসস্থান’ (সূরা মুহাম্মাদ: ১২)।

কাফেররা হবে নিকৃষ্টতম স্তরের বাসিন্দা, তারা সবাই দুনিয়াতে হবে হতভাগা আর আখেরাতে জাহান্নামী।

৩। মুনাফিকরা কাফেরদের চেয়েও বেশী বিপদজনক। তারা মুখে মুসলিমদের সাথে অবস্থান করলেও তাদের অন্তর কাফেরদের সাথেই থাকে। তারা ভেতর থেকে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে। যেমন- আল্লাহ বলেন:

(وَإِذَا رَأَيْتَهُمْ تُعْجِبُكَ أَجْسَامُهُمْ وَإِنْ يَقُولُوا تَسْمَعْ لِقَوْلِهِمْ كَأَنَّهُمْ خُشُبٌ مُسَنَّدَةٌ يَحْسَبُونَ كُلَّ صَيْحَةٍ عَلَيْهِمْ هُمُ الْعَدُوُّ فَاحْذَرْهُمْ قَاتَلَهُمُ اللَّهُ أَنَّى يُؤْفَكُونَ (4)) [المنافقون: 4]

‘আর যখন তুমি তাদের দিকে তাকিয়ে দেখবে, তখন তাদের শরীর তোমাকে মুগ্ধ করবে। আর যদি তারা কথা বলে, তুমি তাদের কথা (আগ্রহ নিয়ে) শুনবে। তারা দেয়ালে ঠেস দেয়া কাঠের মতই। তারা মনে করে, প্রতি আওয়াজই তাদের বিরুদ্ধে। এরাই শত্রু, অতএব এদের সম্পর্কে সতর্ক হও। আল্লাহ এদেরকে ধ্বংস করুন। তারা কিভাবে সত্য থেকে ফিরে যাচ্ছে’ (সূরা আল-মুনাফিকবুন: ৪)।

তারা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। দুনিয়াতে হতভাগা ও শঙ্কায় থাকবে। আর সব ধরনের আওয়াযই তারা তাদের বিরুদ্ধে মনে করবে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(إِنَّ الْمُنَافِقِينَ فِي الدَّرْكِ الْأَسْفَلِ مِنَ النَّارِ وَلَنْ تَجِدَ لَهُمْ نَصِيرًا ) [النساء: 145]

‘নিশ্চয় মুনাফিকরা জাহান্নামের সর্বনিম্ন স্তরে থাকবে। আর তুমি কখনও তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী পাবে না’ (সূরা আন-নিসা: ১৪৫)।

মুমিনদের উচিত, আল্লাহর দিকে কাফের ও মুনাফিকদের দা‘ওয়াত দেয়ার চেষ্টা করা।