ঞ. আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দেওয়ার সময় (وقت الدعوة إلى الله)

চিন্তা-চেতনা, আমল ও সময়ের সমন্বয়ে ইসলাম পরিপূর্ণ দ্বীন। প্রত্যেকটি ইবাদতের নির্দিষ্ট সময় ও উপলক্ষ্য রয়েছেএবং এর রয়েছে শুরু ও শেষ। যেমন-ছালাত, ছিয়াম, হাজ্জ ইত্যাদি। ।

কিন্তু আল্লাহর দিকে দা‘ওয়াত দান সর্বদা, সর্বাবস্থায় ও সব জায়গায় চালু থাকবে। মুসলিমদের কর্তব্য হলো, এমনভাবে তাদের সময় কাটানো, ঠিক যেমনভাবে রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কাটিয়েছেন- যাতে তারা তাঁর অনুসারীদের মধ্যে গণ্য হতে পারে, যেমনটি ছাহাবায়ে কেরাম করেছিলেন।

সুতরাং তারা আল্লাহ তা‘আলার ফরযসমূহ পালন করবে। সর্বাবস্থায় তাদের রবের নির্দেশ মেনে চলবে।

জীবিকা নির্বাহ ও উপার্জনের জন্য অল্প কিছু সময় ব্যয় করবে। আর অধিকাংশ সময় দা‘ওয়াতী কাজে ব্যয় করবে, যাতে মানুষ এক আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে, যার কোন শরীক নেই।

সময় পেলে অথবা যাকে সে দা‘ওয়াত দিতে চায়, তাকে দা‘ওয়াত দেওয়া কঠিন হলে দ্বীনের জ্ঞান অর্জনে ব্যস্ত থাকবে অথবা মুসলিমদেরকে দ্বীনের বিধি-বিধান শিক্ষা দিবে। যাতে তারা জ্ঞান শিক্ষা করে নিজেদের ও অন্যদের অজ্ঞতা দূর করতে পারে।

আর সময়পেলে অথবা দ্বীন শিক্ষা দেয়া অথবা জ্ঞানার্জন করা কঠিন হলে তার মুসলিম ভাইদের সেবায় নিয়োজিত থাকবে। তাদের প্রয়োজনের দিকে নজর রাখবে। সৃষ্টির প্রতি সদয় হবে এবং ভাল ও তাক্বওয়ার (আল্লাহ ভীতি) কাজে সহযোগিতা করবে।

সময় হলে বা উপরের কাজগুলো করা সম্ভব না হলে নফল ইবাদত করবে। যেমন-সাধারণ সুন্নাত আদায় করা, যিকির করা, কুরআন তিলাওয়াত করা। এরূপ অন্যান্য আমল ও সৎকাজ করা।

তবে, সর্বদা এমন কাজকে অগ্রাধিকার দিবে, যার উপকারিতা মুসলিম ও অন্যান্যদের জন্য তুলনামূলক বেশী ব্যাপক। সুতরাং মুসলিমরা নিজেদের ও অন্যদের সংশোধনের জন্য সর্বদা ব্যস্তথাকবে।

১। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:

(قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي وَسُبْحَانَاللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ (108)) [يوسف: 108].

‘বলুন, ইহাই আমার পথ, আমি ও আমার অনুসারীগণ ডাকি আল্লাহর দিকে জাগ্রত জ্ঞান সহকারে। আল্লাহ পবিত্র এবং আমি শিরককারীদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (সূরা ইউসুফ: ১০৮)।

২। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَوْقُوتًا (103)) ... [النساء: 103]

‘নিশ্চয় ছালাত ছালাত মুমিনদের উপর নির্দিষ্ট সময়ে ফরয’ (সূরা আন-নিসা: ১০৩)।

৩। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(وَلَكِنْ كُونُوا رَبَّانِيِّينَ بِمَا كُنْتُمْ تُعَلِّمُونَ الْكِتَابَ وَبِمَا كُنْتُمْ تَدْرُسُونَ (79)) [آل عمران: 79].

‘বরং তিনি বলবেন, তোমরা রব্বানী হও। যেহেতু তোমরা কিতাব শিক্ষা দিতে এবং তা অধ্যয়ন করতে’ (সূরা আলে ইমরান: ৭৯)।

৪। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(وَابْتَغِ فِيمَا آتَاكَ اللَّهُ الدَّارَ الْآخِرَةَ وَلَا تَنْسَ نَصِيبَكَ مِنَ الدُّنْيَا وَأَحْسِنْ كَمَا أَحْسَنَ اللَّهُ إِلَيْكَ وَلَا تَبْغِ الْفَسَادَ فِي الْأَرْضِ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْمُفْسِدِينَ ) [القصص: 77]

‘আর আল্লাহ তোমাকে যা দান করেছেন তাতে তুমি আখেরাতের নিবাস অনুসন্ধান কর। তবে তুমি দুনিয়া থেকে তোমার অংশ ভুলে যেয়ো না। তোমার প্রতি আল্লাহ যেরূপ অনুগ্রহ করেছেন, তুমিও সেরূপ অনুগ্রহ কর। আর যমীনে ফাসাদ করতে চেয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ ফাসাদকারীদের ভালবাসেন না’ (সূরা আল-ক্বছাছ: ৭৭)।

৫। আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন:

(وَالْعَصْرِ (1) إِنَّ الْإِنْسَانَ لَفِي خُسْرٍ (2) إِلَّا الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَتَوَاصَوْا بِالْحَقِّ وَتَوَاصَوْا بِالصَّبْرِ (3)) [العصر: 1 - 3].

‘মহাকালের শপথ, (১) মানুষ অবশ্যই ক্ষতিতে আছে। (২) তবে তারা ব্যতীত, যারা ঈমান আনে, সৎকাজ করে, পরস্পরকে সত্যের উপদেশ দেয় এবং পরস্পরকে ধৈর্যের উপদেশ দেয়’(সূরা আল-আছর:১-৩)।