নাবীগণের নিদর্শন নিয়ে বাড়িবাড়ি করা

নাবীগণের নিদর্শনকে মাসজিদ হিসাবে গ্রহণ করা। যেমন উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে।

..............................................

ব্যাখ্যা: নাবীগণের নিদর্শনকে মাসজিদ হিসাবে গ্রহণ করা জাহিলী কর্ম। অর্থাৎ নাবীগণের ছ্বলাত আদায়ের জায়গায় জাহিলরা বরকত লাভের উদ্দেশ্যে ছ্বলাত আদায় করতো। পূর্বাপর জাহিলী কর্মের পার্থক্য:

পূর্ববর্তী জাহিলরা ব্যক্তিসত্তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতো আর পরবর্তীরা ব্যক্তিদের কর্মের নিদর্শন নিয়ে বাড়াবাড়ি করে। এখানে (الآثار) আল-আছার শব্দটি (أثر)

আছার এর বহুবচন। আর নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে বসেছেন অথবা ছ্বলাত আদায় করেছেন তা আছার (ছাপ-নিদর্শন) হিসাবে পরিচিত। দেশবাসী ঐ জায়গার অনুসরণ করে সেখানে আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করে।

তারা ধারণা করে যে, সেখানে ছ্বলাত আদায় করা ফযীলতপূর্ণ আমল। যেমন বর্তমানে যারা হেরাগুহায় যায়, তারা সেখানে ছ্বলাত আদায় করে এবং দু‘আ-দরূদ পাঠ করে। কেননা, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াত লাভের পূর্বে হেরাগুহায় ইবাদত করতেন। অথচ নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুয়াত লাভের পর সেখানে ইবাদত করেননি এবং তার কোন ছাহাবীও হেরাগুহায় ইবাদত করতে যাননি। তারা জানতেন, এটা শরী‘আত সম্মত নয়। অনুরূপভাবে জাহিলরা ছাওর গুহায় গমন করে, যেখানে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিজরতের পূর্বে লুকিয়ে ছিলেন। তারা সেখানে ছ্বলাত আদায় করে, ভালকাজ করে এবং কখনো টাকা-পয়সাও দান করে। এসবই জাহিলী দীন।

জাহিলরা নাবীগণের নিদর্শনকে সম্মান করে। এজন্য বাই‘আতের গাছ (যে গাছ তলায় বাই‘আত হয়েছিল) তার দিকে কতিপয় লোককে যেতে দেখে উমার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেছিলেন, তোমাদের পূর্ববর্তীরা নাবীগণের নিদর্শন অনুসরণের কারণে ধ্বংস হয়ে গেছে। অতঃপর তিনি গাছটি কেটে ফেলার নির্দেশ দেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শরী‘আতের জন্য এসব জায়গা নির্ধারণ করেননি। তিনি শরী‘আতের জন্য কতিপয় জায়গা নির্ধারণ করেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলো মাকামে ইবরাহীমে ছ্বলাত আদায় করা। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন:

(وَاتَّخِذُوا مِنْ مَقَامِ إِبْرَاهِيمَ مُصَلّىً) [البقرة : 125]

তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে ছালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর (সূরা আল-বাক্বারাহ ২:১২৫)।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অনুসরণের জন্য মাকামে ইবরাহীমে ছ্বলাত আদায় করা শরী‘আত সম্মত। পক্ষান্তরে, হেরাগুহা, ছাওরগুহা অথবা মক্কা ও মদিনার রাস্তায় বিশ্রামের জন্য বসা শরী‘আত সম্মত, তা কোন আমল বলে গণ্য নয়। কেবল প্রয়োজন অনুসারে এসব জায়গায় বসা যেতে পারে। তাই এসব (আমল ও অভ্যাসের) ব্যাপারে পার্থক্য বুঝা আবশ্যক।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে সব জায়গাকে শরী‘আতের জন্য নির্ধারণ করেননি, কেবল ঐ সব জায়গা অতিক্রম করেছেন অথবা অভ্যাসগতভাবে সেখানে বসেছেন অথবা বিশ্রাম নিয়েছেন অথবা হঠাৎ ছালাতের সময়ে ঐ জায়গায় এসেছেন এবং কোন উদ্দেশ্যে ছাড়াই ছ্বলাত আদায় করেছেন, ঐ সব জায়গাকে তিনি ছ্বলাত আদায়ের জন্য নির্ধারণ করেননি। কোন উদ্দেশ্যে ছাড়াই তিনি এসব কাজ করেছেন। কেননা, ছালাতের সময় হওয়ার কারণেই তিনি ঐ জায়গায় ছ্বলাত আদায় করেছেন। ছ্বলাত আদায়ের এ স্থানসহ পৃথিবীর অন্যান্য স্থানের কোন বিশেষত্ব নেই। কেননা, এসব স্থান অনুসরণ করার মাধ্যমে বরকত লাভের উদ্দেশ্যে মানুষ মূর্তি পূজার প্রচলন ঘটাতে পারে। দূর হতে ঐ সব জায়গার কল্পনা করে সেখানে ভ্রমণ করবে। পূর্ববর্তী জাতি এসব জায়গা কেন্দ্রীক যে শিরক করেছে তারাও হয়তো তাই করবে। আবার কখনো হয়তো সেখানে ভিত্তি নির্মাণ করা হবে। বর্তমানে যারা এসব করতে চায়, তারা বলে, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে স্থান অতিক্রম করেছেন অথবা তিনি যেখানে বসেছেন সেই নিদর্শনের উপর তোমরা ভিত্তি এবং স্মৃতি সৌধ নির্মাণ কর। এসবই বাতিল কথা। নেককার সালাফীরা যা করেননি আমরা তা করবো না। যদি এসব শরী‘আত সম্মত হত তাহলে আমাদের আগে ছাহাবী, তাবেঈ এবং পরবর্তীগণ তা পালন করতেন।

এসব ভ্রান্ত কর্মের কারণেই জাতি ধ্বংস হয়। তাই সম্মানিত ব্যক্তি বর্গের নিদর্শন উজ্জিবীত করার মাধ্যমে মানুষ মূর্তি পূজার দিকে অগ্রসর হয়। যেমন নূহ আলাইহিস সালাম ও পূর্ববর্তী জাতির মাঝে এরূপ ঘটেছিল। আর মানুষ তাদের দীন সম্পর্কে সচেতন; এজন্য তাদের (জাহিলিয়্যাতে লিপ্ত হওয়ার) আশঙ্কা নেই এ কথা বলা যাবে না। কেননা জাহিল জাতির আর্বিভাবের পর শয়তান তাদের সামনে মূর্তিপূজাকে সৌন্দর্যময় করে তুলেছে। এ কারণে কোন ফিতনাকে বিশ্বাস করা যাবে না। যেমন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম দু‘আ করেছেন,

(وَاجْنُبْنِي وَبَنِيَّ أَنْ نَعْبُدَ الْأَصْنَامَ) [إبراهيم: 35]

আর (স্মরণ কর) যখন ইবরাহীম বলল, হে আমার রব, আপনি এ শহরকে নিরাপদ করে দিন এবং আমাকে ও আমার সন্তানদেরকে মূর্তি পূজা হতে দূরে রাখুন (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৫)।