যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সে কাজ তার জন্য সহজ করে দেয়া হয়। শেষ কর্ম দ্বারাই ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। সৌভাগ্যবান সে ব্যক্তি যে আল্লাহর ফায়সালায় ভাগ্যবান বলে সাব্যস্ত হয়েছে। আর হতভাগ্য সে ব্যক্তি যে আল্লাহর ফায়সালায় হতভাগ্য বলে নির্ধারিত হয়েছে।

ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,

وَكُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خُلِقَ لَهُ، وَالْأَعْمَالُ بِالْخَوَاتِيمِ، وَالسَّعِيدُ مَنْ سَعِدَ بِقَضَاءِ اللَّهِ، وَالشَّقِيُّ مَنْ شَقِيَ بِقَضَاءِ اللَّهِ

যাকে যে কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, সে কাজ তার জন্য সহজ করে দেয়া হয়। শেষ কর্ম দ্বারাই ফলাফল নির্ধারণ করা হয়। সৌভাগ্যবান সে ব্যক্তি যে আল্লাহর ফায়সালায় ভাগ্যবান বলে সাব্যস্ত হয়েছে। আর হতভাগ্য সে ব্যক্তি যে আল্লাহর ফায়সালায় হতভাগ্য বলে নির্ধারিত হয়েছে।

........................................................

ব্যাখ্যা: ইতিপূর্বে আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হাদীছ অতিক্রান্ত হয়েছে। সেখানে নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

اعْمَلُوا فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ لِمَا خُلِقَ لَهُ"، وَعَنْ زُهَيْرٍ عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: جَاءَ سُرَاقَةُ بْنُ مَالِكِ بْنِ جُعْشُمٍ، فَقَالَ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، بَيِّنْ لَنَا دِينَنَا كَأَنَّا خُلِقْنَا الْآنَ، فِيمَ الْعَمَلُ الْيَوْمَ؟ أَفِيمَا جَفَّتْ بِهِ الْأَقْلَامُ وَجَرَتْ بِهِ الْمَقَادِيرُ، أَمْ فِيمَا يُسْتَقْبَلُ؟ قَالَ : "لَا، بَلْ فِيمَا جَفَّتْ بِهِ الْأَقْلَامُ وَجَرَتْ بِهِ الْمَقَادِيرُ"، قَالَ: فَفِيمَ الْعَمَلُ؟ قَالَ زُهَيْرٌ: ثُمَّ تَكَلَّمَ أَبُو الزُّبَيْرِ بِشَيْءٍ لَمْ أَفْهَمْهُ، فَسَأَلْتُ. مَا قَالَ؟ فَقَالَ: اعْمَلُوا فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ

তোমরা আমল করতে থাকো। প্রত্যেক মানুষকে যেই কাজের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সেই আমল সহজ করে দেয়া হবে। যুহাইর রহিমাহুল্লাহ আবু যুবাইর থেকে বর্ণনা করেন যে, জাবের বিন আব্দুল্লাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, সুরাকা বিন মালেক জু’শুম এসে বলল, ইয়া রসূলাল্লাহ! আমাদের জন্য দ্বীনের মাসআলাসমূহ এভাবে বর্ণনা করুন যেন আমরা এখন সৃষ্টি হয়েছি। আমরা আজ কীসের জন্য আমল করবো? আমরা কি এমন জিনিস অর্জনের জন্য আমল করবো, যা লিখার পর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে এবং তাকদীরে নির্ধারিত হয়ে গেছে? না কি এমন জিনিসের জন্য আমল করবো, যা ভবিষ্যতে আমল অনুযায়ী নির্ধারণ করা হবে? জবাবে তিনি বললেন যে, না। বরং তোমরা এমন জিনিস অর্জনের জন্য আমল করবে, যা লিখার পর কলমের কালি শুকিয়ে গেছে এবং তাকদীরে নির্ধারিত হয়ে গেছে? বর্ণনাকারী বলেন, অতঃপর জিজ্ঞাসা করা হলো, তাহলে আমল করে লাভ কী? যুহাইর বলেন, অতঃপর আবু যুবাইর এমন কিছু কথা বললেন, যা আমি বুঝতে পারিনি। তাই আমি জিজ্ঞাসা করলাম। তিনি কী বলেছেন? তিনি বললেন, রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, اعملوا فكل ميسر لما خلق له ‘‘তোমরা আমল করতে থাকো। প্রত্যেক মানুষকে যেই জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, তার জন্য সেই আমল সহজ করে দেয়া হবে’’।[1] ইমাম মুসলিম হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।

সাহল বিন সা’দ আস্-সা’দী (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

إِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ الْجَنَّةِ فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهْوَ مِنْ أَهْلِ النَّارِ وَإِنَّ الرَّجُلَ لَيَعْمَلُ عَمَلَ أَهْلِ النَّارِ فِيمَا يَبْدُو لِلنَّاسِ وَهْوَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ

‘‘মানুষ বাহ্যিক দৃষ্টিতে জান্নাতবাসীদের আমলের ন্যায় আমল করে। অথচ সে জাহান্নামী। আবার অনেক সময় বাহ্যিক দৃষ্টিতে কেউ জাহান্নামীদের আমলের ন্যায় আমল করে। অথচ সে জান্নাতী’’।[2] ইমাম বুখারী ও মুসলিম হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।

ইমাম বুখারী আরেকটু বাড়িয়ে বলেন যে, وإنما الأعمال بالخواتيم ‘‘শেষ কর্ম দ্বারাই মানুষের সফলতা কিংবা ব্যর্থতা নির্ধারিত হয়’’।[3]

ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন,

حَدَّثَنَا رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَهُوَ الصَّادِقُ الْمَصْدُوقُ «إِنَّ أَحَدَكُمْ يُجْمَعُ خَلْقُهُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا نطفة، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يرسل إليه الملك فينفخ فيه الروح وَيُؤْمَرُ بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ يكتب رزقه وَأَجَلَهُ وعَمَلَهُ وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ، فوالذي لاإله غيره إن أحدكُمْ لَيَعْمَلُ بعَمَلَ أَهْلِ الْجَنَّةِ حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الْجَنَّةِ إِلا ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ النَّارِفيدخلها وَ إن أحدكُمْ لَيَعْمَلُ بعَمَلَ أَهْلِ بعمل أهل النار حَتَّى مَا يَكُونُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ النَّارِ إِلا ذِرَاعٌ فَيَسْبِقُ عَلَيْهِ الْكِتَابُ فَيَعْمَلُ بِعَمَلِ أَهْلِ الْجَنَّةِ فيدخلها

‘‘রসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের নিকট বর্ণনা করেন, তিনি সত্যবাদী এবং সত্যবাদী হিসাবে সমর্থিত তোমাদের কারো সৃষ্টি তার মাতৃগর্ভে প্রথমে চল্লিশ দিন বীর্য আকারে সঞ্চিত থাকে। পরবর্তী চল্লিশ দিনে তা জমাট রক্তে পরিণত হয়। এরপর আরো চল্লিশ দিন তা মাংস পিন্ডে রূপান্তরিত হয়। অতঃপর আল্লাহ্ তা‘আলা একজন ফেরেশতা প্রেরণ করেন। তিনি তাতে রূহ ফুঁকে দেন। এসময় তাকে চারটি বিষয় লিখার নির্দেশ দেয়া হয়: ( ১) সে কী পরিমাণ রিযিক পাবে। (২) বয়স কত হবে। (৩) কর্ম কি হবে এবং (৪) সে সৌভাগ্যবান হবে না হতভাগ্য হবে। সে সত্তার শপথ! যিনি ব্যতীত আর কোনো সত্য মাবুদ নেই! তোমাদের মধ্যে একজন জান্নাতে যাওয়ার আমল করতে থাকে, এমনকি তার মাঝে এবং জান্নাতের মাঝে মাত্র এক হাতের দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে, এমন সময় তাক্দীরের লিখন সামনে চলে আসে। অতঃপর সে জাহান্নামবাসীদের মতো আমল করে। অতঃপর জাহান্নামে প্রবেশ করে। এমনিভাবে তোমাদের একজন জাহান্নামে যাওয়ার আমল করতে থাকে, এমনকি তার মাঝে এবং জাহান্নামের মাঝে মাত্র এক হাতের দূরত্ব অবশিষ্ট থাকে, এমন সময় তাক্দীরের লিখন সামনে চলে আসে। অতঃপর সে জান্নাতবাসীদের মতো আমল করে। পরিণামে সে জান্নাতে প্রবেশ করে’’।[4]তাকদীরের এ বিষয়ে অনেক হাদীছ বর্ণিত হয়েছে এবং সালাফে সালেহীন থেকে বহু আছারও রয়েছে। ইমাম ইবনে আব্দিল বার ‘তামহীদ’ গ্রন্থে বলেন, তাকদীর সম্পর্কে আলেমগণ অনেক হাদীছ বর্ণনা করেছেন। কালাম শাস্ত্রবিদগণ এ বিষয়ে অনেক কথা বলেছেন। আহলে সুন্নাতের আলেমগণ এ হাদীছগুলো সম্পর্কে ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক হওয়ার উপর ইজমা পোষণ করেছেন। সেই সঙ্গে তাকদীর নিয়ে ঝগড়া ও বিতর্ক বর্জন করার উপরও আলেমদের ইজমা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য ও তাওফীক ছাড়া দ্বীনের ব্যাপারে বিভ্রান্তি থেকে বাঁচা অসম্ভব।

[1]. ছহীহ মুসলিম হা/২৬৪৮।

[2]. মুত্তাফাকুন আলাইহি, ছহীহ বুখারী হা/২৮৯৮, ছহীহ মুসলিম হা/১১২।

[3]. ছহীহ বুখারী হা/৬৬০৭। সুতরাং যে ব্যক্তি সারা জীবন কুফুরী অবস্থায় জীবন যাপন করে, অতঃপর সে যদি মৃত্যুর পূর্বে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনয়ন করে তাহলে পূর্বেকার কুফুরী জীবনের কোনো হিসাব-নিকাশ হবে না। এ ব্যক্তি ঈমানের উপর মৃত্যু বরণ করার কারণে জান্নাতী হবে।

পক্ষান্তরে যদি কোনো ব্যক্তি সারা জীবন ঈমানী হালতে থাকে এবং ঈমানের উপরই জীবন যাপন করে, কিন্তু মৃত্যুর কিছুক্ষণ পূর্বে কুফুরী অবস্থায় ফিরে যায় এবং সে অবস্থায় মৃত্যু বরণ করে, তাহলে তার পূর্বেকার ঈমানী জীবন যাপনের কোনো প্রতিদান পাবে না। বরং তার শেষ পরিণতি কুফুরীর উপর হয়েছে বলে সে জাহান্নামী। আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে হেফাযত করুন।

[4]. মুত্তাফাকুন আলাইহি, বুখারী ৬৫৯৪, মুসলিম ২৬৪৩।