শারহুল আক্বীদা আত্-ত্বহাবীয়া ৪৩. মিরাজ সত্য ...... ইমাম ইবনে আবীল ইয আল-হানাফী (রহিমাহুল্লাহ) ১ টি
মিরাজের রাতে নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা‘আলাকে দেখার ব্যাপারে ছাহাবীদের মতভেদ

মিরাজের রাতে নাবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ তা‘আলাকে কপালের চোখ দিয়ে দেখেছেন কিনা, সে ব্যাপারে ছাহাবীদের মতভেদ ইতিপূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে। এ ব্যাপারে সঠিক কথা হলো, তিনি অন্তরের মাধ্যমে দেখেছেন। কপালের চোখ দিয়ে দেখেননি। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

مَا كَذَبَ الْفُؤَادُ مَا رَأَى

‘‘তিনি যা দেখেছেন তার অন্তর তা মিথ্যা বলেনি’’। (সূরা নাজম: ১১) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,

وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَىٰ عِندَ سِدْرَةِ الْمُنتَهَىٰ عِندَهَا جَنَّةُ الْمَأْوَىٰ

‘‘তিনি তাকে আরেকবার দেখেছেন। সিদরাতুল মুনতাহার কাছে। যার সন্নিকটেই জান্নাতুল মাওয়া অবস্থিত’’। (সূরা নাজম: ১৩-১৫)

নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ছহীহ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, এখানে জিবরীলকে দেখার কথা বলা হয়েছে।[1] জিবরীলকে আল্লাহ তা‘আলা যে আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন, সে আকৃতিতে তিনি তাকে দুইবার দেখেছেন।

সূরা নাজমের যেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন, ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى ‘‘অতঃপর তিনি নিকটবর্তী হলেন। অতঃপর ঝুলে গেলো’’, সেখানে মিরাজের ঘটনায় উল্লেখিত নিকটবর্তী হওয়া ও ঝুলে যাওয়া উদ্দেশ্য নয়। সুতরাং সূরা নাজমে যে নিকটবর্তী হওয়া ও ঝুলে পড়ার কথা বলা হয়েছে, তা দ্বারা জিবরীলের নিকটবর্তী হওয়া ও ঝুলে যাওয়া উদ্দেশ্য। যেমনটি বর্ণিত হয়েছে আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের হাদীছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

عَلَّمَهُ شَدِيدُ الْقُوَى ذُو مِرَّةٍ فَاسْتَوَى وَهُوَ بِالْأُفُقِ الْأَعْلَى ثُمَّ دَنَا فَتَدَلَّى

‘‘তাকে মহাশক্তির অধিকারী একজন শিক্ষা দিয়েছে, যে অত্যন্ত জ্ঞানী। সে সামনে এসে দাঁড়ালো। তখন সে উঁচু দিগমেত্ম ছিল। তারপর কাছে এগিয়ে এলো এবং উপরে শূণ্যে ঝুলে রইলো’’। (সূরা নাজম: ৫-৮)

ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, উপরোক্ত আয়াতগুলোর প্রত্যেকটি সর্বনাএ মহাশক্তিশালী শিক্ষক জিবরীলের দিকে প্রত্যাবর্তন করেছে। আর মিরাজের ঘটনায় যেই নিকটবর্তী হওয়ার কথা বলা হয়েছে, তা দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই আল্লাহ তা‘আলার নিকটবর্তী হওয়া এবং ঝুলে যাওয়া উদ্দেশ্য। আর সূরা নাজমে বলা হয়েছে, ‘‘তিনি তাকে আরেকবার দেখেছেন। সিদরাতুল মুনতাহার কাছে৷ এখানে নিকটবর্তী হওয়া ও ঝুলে পড়া বলতে জিবরীলের নিকটবর্তী হওয়া ও ঝুলে যাওয়া উদ্দেশ্য। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে দুইবার দেখেছেন। একবার যমীনে আরেকবার সিদরাতুল মুনতাহার নিকটে।

[1]. আল্লাহ তা‘আলাকে কপালের চোখ দিয়ে দেখার কথাটি সঠিক নয়। ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহি.) আল্লাহকে দেখার ব্যাপারে আলেমদের মতবিরোধ বর্ণনা করেছেন। তবে বিশুদ্ধ কথা হলো, তিনি আল্লাহকে স্বচক্ষে দেখেননি। কারণ কোন ছাহাবী স্বচক্ষে দেখার পক্ষে কোন বর্ণনা উল্লেখ করেননি। ইবনে আববাস (রা.) থেকে যে বর্ণনা এসেছে, তার অর্থ হলো অন্তর চক্ষু দিয়ে দেখা। কপালের চক্ষু দিয়ে দেখা উদ্দেশ্য নয়। তিরমিযী শরীফে আয়েশা হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি বলেন, তিনটি এমন বিষয় রয়েছে, সে ব্যাপারে যে কথা বলবে, সে আল্লাহর উপর বিরাট এক অপবাদ আরোপকারী বলে গণ্য হবে। যে ব্যক্তি বলল যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্কে দেখেছেন সে আল্লাহর উপর বিরাট এক মিথ্যারোপ করল। যে ব্যক্তি বলল যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর কিতাবের কোন অংশ গোপন করেছেন, সে বিরাট এক মিথ্যা রচনা করল। আল্লাহ্ তাআলা বলেন,

يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنْزِلَ إِلَيْكَ مِنْ رَبِّكَ وَإِنْ لَمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ

‘‘হে আল্লাহর রসূল! আপনার প্রভুর পক্ষ হতে আপনার উপর যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, আপনি তা মানুষের নিকট পৌঁছিয়ে দিন। আপনি যদি তা না করেন, তাহলে আপনার প্রভুর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। (সূরা মায়িদা: ৬৭) তিনি আরো বলেন, যে ব্যক্তি মনে করবে যে, মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম গায়েবের খবর জানতেন, তাহলে সে আল্লাহর উপর সবচেয়ে বড় মিথ্যা রচনা করলো। আল্লাহ্ তাআলা বলেন,

قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ

‘‘হে নাবী! তুমি বলে দাও, আসমান ও যমীনে আল্লাহ ছাড়া গায়েবের খবর আর কেউ জানে না। (সূরা নামল: ৬৫) (সুনানে তিরমিযী, ২৯৯৪)