(১) العلاقة সম্পর্ক: অর্থাৎ উভয় পক্ষের মধ্যে মনের যে সম্পর্ক তৈরী হয়, তা ভালোবাসা ও বন্ধুত্বের সর্বনিম্ন স্তর।

(২) الإرادة ইচ্ছা: প্রিয় বস্তু পাওয়ার জন্য অন্তর দিয়ে ইচ্ছা করা। এ স্তরে পৌঁছে মানুষের অন্তর প্রিয়বস্তুর দিকে ঝুকে পড়ে এবং তাকে পাওয়ার চেষ্টা করে।

(৩) الصبابة তীব্র আকাঙ্খা: এ স্তরে পৌঁছে বান্দার অন্তর প্রিয় বস্তুর দিকে এমনভাবে ঝুকে পড়ে যে, সে তার অন্তরের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। উপর থেকে নীচু স্থানে পানি যেমন গড়িয়ে পরে ঠিক সেভাবেই বান্দার অন্তর কাম্য বস্তুর দিকে ধাবিত হয়।

(৪) الغرام অনুরাগ ও আসক্তি: এটি এমন ভালোবাসা, যা অন্তরের সাথে সম্পূর্ণ গেঁথে যায় এবং অন্তরকে তার বন্ধনে বেঁধে ফেলে। এখান থেকে الغريم (ঋণগ্রস্ত) শব্দটি গঠন করা হয়েছে। কেননা পাওনাদার যেভাবে ঋণগ্রস্তের পিছনে লেগে থাকে, সে কখনো তার পিছু ছাড়েনা ভালোবাসার এ স্তরে পৌঁছে বান্দাও তার প্রিয় বস্তুকে ছাড়ে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

إِنَّ عَذَابَهَا كَانَ غَرَامًا

নিশ্চয়ই জাহান্নামের আযাব তো তার অধিবাসীকে আকঁড়ে ধরবে। (আল ফুরকান ২৫:৬৫)

(৫) المودة স্নেহ-মমতা: খাঁটি ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ভালোবাসাকে الود বলা হয়। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ سَيَجْعَلُ لَهُمُ الرَّحْمَٰنُ وُدًّا

‘‘নিঃসন্দেহে যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করেছে শীঘ্রই রাহমান তাদের জন্য ভালোবাসা সৃষ্টি করে দেবেন’’। (সূরা মারইয়াম: ৯৬)

(৬) الشغف আকৃষ্ট করা: যে ভালোবাসা হৃৎপিন্ডের আবরণ ঝিল্লি পর্যন্ত পৌঁছে যায় উহাকে শাগাফ বলা হয়।

(৭) العشق প্রেম: ইশক বলা হয় এমন অতিরিক্ত ভালোবাসাকে যাতে লিপ্ত ব্যক্তি পাগল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ভালোবাসার এ পরিমাণ আল্লাহ তা‘আলার জন্য সাব্যস্ত করা যাবে না। বান্দার অন্তরে তার রবের প্রতি যে ভালোবাসা থাকে, তাকেও ইশক নাম দেয়া যাবে না।

যদিও কোনো কোনো সুফী আল্লাহ তা‘আলা ও বান্দার মধ্যে যে ভালোবাসা তৈরী হয়ে থাকে, তাকে ইশ্ক বলে থাকে। ইশক শব্দটি আল্লাহর জন্য ব্যবহৃত না হওয়ার কারণ সম্পর্কে একাধিক কথা বলা হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, এ শব্দটি শরীয়াতে বর্ণিত হয়নি। অন্যরা অন্যান্য কথা বলেছেন। ইশক শব্দটি ব্যবহার করা নিষিদ্ধ হওয়ার কারণ হলো, কামোত্তেজনার সাথে যে ভালোবাসা হয়ে থাকে তাকে ইশক বলা হয়।

(৮) التيم দাসে পরিণত করা বা বশীভূত করা।

(৯) التعبد দাসত্ব করা:

(১০) الخلة বন্ধুত্ব: এটি এমন ভালোবাসা, যা বান্দার অন্তরের সাথে মিশে যায়। ভালোবাসার স্তরগুলোকে অন্যভাবেও বিন্যস্ত করা হয়েছে। তবে এভাবে বিন্যস্ত করাকে অনেকেই সুন্দর বলেছেন। স্তরগুলোর অর্থের মধ্যে গভীরভাবে চিন্তা করা ব্যতীত কেউ তা উপলব্ধি করতে পারবে না।

জেনে রাখা আবশ্যক যে, আল্লাহ তা‘আলাকে মুহাববত বা ভালোবাসা ও খুল্লাত বা বন্ধুত্ব দ্বারা সেভাবেই বিশেষিত করা হবে, যেভাবে বিশেষিত করলে তার বড়ত্ব ও সম্মানের জন্য শোভনীয় হয়। যেমন আল্লাহ তা‘আলার অন্যান্য সিফাতের ব্যাপারে বলা হয়েছে। ভালোবাসার উপরোক্ত স্তরগুলো থেকে দলীল অনুযায়ী আল্লাহ তা‘আলার জন্য কেবল ইচ্ছা, স্নেহ, ভালোবাসা ও বন্ধুত্বই সাব্যস্ত করা হবে। আরো জেনে রাখা আবশ্যক যে, আল্লাহ তা‘আলা ও বান্দার মধ্যকার ভালোবাসাকে الغرام ,العشق ,الصبابة ,العلاقة , التعلق ইত্যাদি শব্দ দ্বারা ব্যাখ্যা করা অশোভনীয় হলেও সুফীরা তাদের কথা-বার্তায় প্রচুর পরিমাণে ব্যবহার করে থাকে।

ভালোবাসার সীমা ও সংজ্ঞা নির্ধারণে আলেমগণ প্রায় ত্রিশটি মত প্রকাশ করেছেন। তবে ভালোবাসা শব্দটি উচ্চারণ করতেই তা থেকে যা বুঝায়, তার চেয়ে অধিক সুস্পষ্ট আর কোনো সংজ্ঞা নেই। সুতরাং এর যত সংজ্ঞা দেয়া হবে, তাকে আরো অস্পষ্ট করে দিবে। এরূপ সুস্পষ্ট বিষয়গুলোর কোনো সংজ্ঞার প্রয়োজন নেই। শিক্ষিত, মূর্খ এমনকি শিশুরাও ভালোবাসা কথাটির অর্থ বুঝে। পানি, বাতাস, মাটি, পিপাসা ইত্যাদি সুস্পষ্ট জিনিসের মতই ভালোবাসা শব্দটি খুবই সুস্পষ্ট।