তিনি সর্বশেষ নাবী, মুত্তাকীদের ইমাম, রসূলগণের নেতা এবং সৃষ্টিকুলের রবের হাবীব।

ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, (وَأَنَّهُ خَاتَمُ الْأَنْبِيَاءِ وَإِمَامُ الْأَتْقِيَاءِ وَسَيِّدُ الْمُرْسَلِينَ وَحَبِيبُ رَبِّ الْعَالَمِينَ) তিনি সর্বশেষ নাবী, মুত্তাকীদের ইমাম, রসূলগণের নেতা এবং সৃষ্টিকুলের রবের হাবীব।

..........................................

ব্যাখ্যা: আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

مَّا كَانَ مُحَمَّدٌ أَبَا أَحَدٍ مِّن رِّجَالِكُمْ وَلَٰكِن رَّسُولَ اللَّهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّينَ وَكَانَ اللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمًا

‘‘মুহাম্মাদ তোমাদের পুরুষদের মধ্য থেকে কারোর পিতা নন। কিন্তু তিনি আল্লাহর রসূল এবং শেষ নাবী। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক অবগত’’। (সূরা আহযাব: ৪০)

নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

مَثَلِي وَمَثَلُ الأنْبِيَاءِ كمثل قصر أحسن بناؤه وترك منه موضع لبنة فطاف به النظار يتعجبون من حسن بنائه إلا موضع تلك اللبنة لايعيبون سواها فَكُنْتُ أَنَا سَدَدْتُ مَوْضِعَ تِلْكَ اللَّبِنَةِ خُتِمَ بِيَ الْبُنْيَانُ وَخُتِمَ بِيَ الرُّسُلُ

‘‘আমার ও আমার পূর্ববর্তী নাবীদের উপমা হচ্ছে যেমন একটি প্রাসাদ, যা অত্যন্ত সুন্দর করে নির্মাণ করা হয়েছে। তবে মাত্র একটি ইটের স্থান খালী রাখা হয়েছে। লোকেরা ঐ একটি ইটের স্থান ব্যতীত প্রাসাদটির সুন্দর নির্মাণ শৈলীর প্রশংসা করতে লাগল। এ ছাড়া তারা আর কোনো দোষ খুঁজে পাচ্ছিল না। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি সে এক ইট পরিমাণ খালী জায়গা পূর্ণ করে দিয়েছি। আমার দ্বারা প্রাসাদটির নির্মাণ কাজ পূর্ণ করে দেয়া হয়েছে। আমার মাধ্যমে রেসালাতের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে’’। ইমাম বুখারী ও মুসলিম এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন।[1]

নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘আমার অনেক নাম রয়েছে। আমি মুহাম্মাদ, আমি আহমাদ এবং আমি আল-মাহী। আমার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা কুফুরীকে মিটিয়ে দিবেন। আমি আল হাশির। আমার দু’পায়ের নিকট সমস্ত মানুষকে একত্র করা হবে। আমি আল আকিব। আকিব হলেন সর্বশেষ নাবী, যার পরে আর কোনো নাবী নেই’’।[2]

ছহীহ মুসলিমে ছাওবান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে, নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

«وَإِنَّهُ سَيَكُونُ في أمتي بَعْدِي ثَلَاثُونَ كذَّابُونَ كُلُّهُمْ يَزعم أَنَّهُ نَبِيٌّ وَأَنَا خَاتَمُ النَّبِيِّينَ لَا نَبِيَّ بَعْدِي»

‘‘আমার উম্মতের মধ্যে আমার পরে ত্রিশজন মিথ্যুকের আগমন ঘটবে। তারা সকলেই নবুওয়াতের দাবী করবে। অথচ আমি সর্বশেষ নাবী। আমার পর কিয়ামতের পূর্বে আর কোনো নাবী নেই’’।[3]

ছহীহ মুসলিমে এসেছে, রসূলুল্লাহ্ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

فُضِّلْتُ عَلَى الْأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ أُعْطِيتُ جوامع الكلم ونُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ، وَجُعِلَتْ لِيَ الْأَرْضُ مَسْجِدًا وَطَهُورًا، وَأُرْسِلْتُ إِلَى الْخَلْقِ كَافَّةً، وَخُتِمَ بِيَ النَّبِيُّونَ

‘‘আমাকে ছয়টি জিনিস দ্বারা অন্যান্য নাবীদের উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করা হয়েছে। (১) আমাকে এমন সংক্ষিপ্ত বাণী প্রদান করা হয়েছে, যার মর্মার্থ খুবই ব্যাপক। (২) শত্রু পক্ষের অন্তরে ভয় ঢুকিয়ে দেয়ার মাধ্যমে আমাকে সাহায্য করা হয়েছে। (৩) আমার জন্য গণীমতের মাল হালাল করা হয়েছে। আমার পূর্বে কারো জন্য তা হালাল করা হয়নি। (৪) সমগ্র যমীনের মাটি আমার জন্য পবিত্র এবং মসজিদ স্বরূপ করা হয়েছে। (৫) আমার পূর্বেকার নাবীগণ প্রেরিত হতেন তাদের গোত্রের লোকদের নিকট। আর আমি প্রেরিত হয়েছি সমগ্র মানব জাতির জন্য’’ (৫) আমার মাধ্যমে নবুওয়াত খতম করা হয়েছে’’।[4]

ইমাম ত্বহাবী রাহিমাহুল্লাহু বলেন, তিনি হলেন, মুত্তাকীদের ইমাম। যার অনুসরণ করা হয়, তিনি হলেন ইমাম। অর্থাৎ যাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করা হয়। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ জন্য প্রেরণ করা হয়েছে, যাতে তাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করা হয়। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন,

قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ

‘‘হে নাবী! তুমি বলো: তোমরা যদি আল্লাহকে ভালবেসে থাক, তাহলে আমার অনুসরণ কর। তবেই আল্লাহ্ তোমাদেরকে ভালবাসবেন’’। (সূরা আলে-ইমরান: ৩১)

সুতরাং যারাই তার অনুসরণ করবে এবং তাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করবে, তারাই মুত্তাকী হিসাবে পরিগণিত হবে। মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রসূলদের নেতা। তিনি বলেন,

أَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ وَلاَ فَخْرَ وأول شافع وأول مشفع

‘‘আমি আদম সন্তানের নেতা। তবে এটি কোন অহংকারের বিষয় নয়। আএি সর্বপ্রথম শাফা‘আতকারী এবং আমার শাফা‘আতই সর্বপ্রথম গৃহীত হবে’’। ইমাম মুসলিম হাদীছটি বর্ণনা করেছেন।[5] শাফা‘আতের দীর্ঘ হাদীছের শুরুর দিকে এসেছে, নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

أَنَا سَيِّدُ النَّاسِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

‘‘আমি কিয়ামতের দিন সকল মানুষের নেতা হবো’’[6]।

[1]. ইমাম আলবানী রহিমাহুল্লাহ বলেন, হাদীছটি সহীহ। তবে সহীহ বুখারী ও মুসলিমে তা নেই। দেখুন, শাইখের তাহকীকসহ শারহুল আকীদাহ্ আত্ তাহাবীয়া, টিকা নং- ১১৯।

[2]. ইমাম বুখারী ও মুসলিম জুবাইর বিন মুতইম রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে এ হাদীছ বর্ণনা করেছেন।

[3]. আবু দাউদ, তিরমিযী, অধ্যায়: কিতাবুল ফিতান। ইমাম আলবানী সহীহ বলেছেন, মিশকাতুল মাসাবীহ, হা/৫৪০৬।

[4]. ছহীহ: ছহীহ মুসলিম, হা/৫২৩, তিরমিযী হা/১৫৫৩।

[5]. তিরমিযী, অধ্যায়: কিতাবুত তাফসীর, হাদীছ নং- ৩১৪৮। ইবনে মাজাহ, অধ্যায়: কিতাবুশ শাফাআহ, হাদীছ নং- ৪৩৬৩। ইমাম তিরমিযী বলেন, হাদীছটি সহীহ।

[6]. ছহীহ মুসলিম ১৯৪, ছহীহ বুখারী ৪৭১২।