রাহে বেলায়াত তৃতীয় অধ্যায় - দৈনন্দিন যিকর ওযীফা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
প্রথম পর্বঃ সকালের যিকর-ওযীফা - ২. ইস্তিঞ্জার যিকর

যিকর নং ৩৭ (ক) : ইস্তিঞ্জায় পূর্বে যিকর

بسم الله اللهم إني أعوذ بك من الخبث والخبائث


উচ্চারণঃ বিসমিল্লা-হ, আল্লা-হুম্মা, ইন্নী আ‘ঊযু বিকা মিনাল খুবুসি ওয়াল খাবা-ইসি।

অর্থঃ “আল্লাহর নামে। হে আল্লাহ, আমি আপনার আশ্রয় প্রার্থনা করছি - অপবিত্র, অকল্যাণ, খারাপ কর্ম থেকে বা পুরুষ ও নারী শয়তান থেকে।”

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইস্তিঞ্জার জন্য গমন করলে এই দু‘আটি পাঠ করতেন। সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য গ্রন্থের হাদীসে ‘বিসমিল্লাহ’ ছাড়া দু‘আটি বর্ণিত হয়েছে। মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা গ্রন্থে সংকলিত অন্য সহীহ হাদীসে দু‘আটির শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ উল্লেখ করা হয়েছে।[1]

ইস্তিঞ্জার সময় মুখের যিকর অনুচিত :

ইতোপূর্বে আমরা দেখেছি যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) সর্বাবস্থায় আল্লাহর যিকরে রত থাকতেন। এই যিকর বলতে মুখে উচ্চারণের যিকর বুঝান হয়েছে। এই হাদীসের আলোকে মুসলিম উম্মাহর ফকীহগণ সকল অবস্থায় মুখে আল্লাহর যিকর করা সম্ভব ও উচিত বলে মত প্রকাশ করেছেন। তবে দুটি অবস্থায় যিকর না করাই উচিত বলে অধিকাংশ আলিম ও ফকীহ মত প্রকাশ করেছেন। প্রথমত, ইস্তিঞ্জায় রত থাকা অবস্থা। তবে অধিকাংশ ইমাম ও ফকীহ এই অবস্থায় মুখে যিকর মাকরূহ তানযিহী বা অনুচিত বলে মত প্রকাশ করেছেন। ইমাম নববী লিখেছেনঃ প্রাকৃতিক প্রয়োজন সারার সময় কোনো প্রকার আল্লাহর যিকর করা মাকরূহ। তাসবীহ, তাহলীল, সালামের উত্তর প্রদান, হাঁচির উত্তর প্রদান, হাঁচি দিয়ে ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলা, আযানের জবাব দেওয়া ইত্যাদি কোনো প্রকারের যিকর মুমিন এই অবস্থায় এবং স্বামী-স্ত্রীর মিলন অবস্থায় করবেন না। যদি তিনি হাঁচি দেন তাহলে জিহ্বা না নেড়ে মনে মনে ‘আল-হামদু লিল্লাহ’ বলবেন। এছাড়া প্রয়োজন ছাড়া কথাবার্তা বলাও এ সময়ে মাকরূহ। এই দুই অবস্থায় কথাবার্তা বা যিকর মাকরূহ তাহরীমি বা হারাম পর্যায়ের মাকরূহ নয়, বরং মাকরূহ তানযীহী বা “অনুচিত” পর্যায়ের মাকরূহ। এই অবস্থায় যিকর করলে গোনাহ হবে না, তবে যিকর না করাই উচিত। ইস্তিঞ্জায় রত ব্যক্তিকে সালাম প্রদান করাও মাকরূহ। অধিকাংশ ইমাম ও ফকীহের এ মত। ইবনু সীরীন, ইবরাহীম নাখয়ী প্রমুখ এ মতের বিরোধিতা করেছেন। তারা এই অবস্থায় যিকর, তাসবীহ-তাহলীল, সালামের উত্তর ইত্যাদি জায়েয বলেছেন।[2]


যিকর নং ৩৭ (খ) : ইস্তিঞ্জার পরের যিকর :

غفرانك


উচ্চারণঃ গুফরা-নাকা।
অর্থঃ “আপনার ক্ষমা প্রার্থনা করি।”

আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইস্তিঞ্জা শেষে বেরিয়ে আসলে এই দু‘আটি বলতেন। হাদীসটি হাসান। কোনো কোনো যয়ীফ সূত্রে এই বাক্যটির পরে অতিরিক্ত কিছু বাক্য বলা হয়েছে।[3]

[1] সহীহ বুখারি ১/৬৬, নং ১৪২, ৫/২৩৩০, নং ৫৯৬৩, সহীহ মুসলিম ১/২৮৩, নং ৩৭৫, মুসান্নাফ ইবনু আবী শাইবা ১/১১, সুনানু ইবনু মাজাহ ১/১০৯, সহীহুল জামিয়িস সাগীর ২/৮৬০, নং ৪৭১৪।

[2] নাবাবী, শারহু সহীহ মুসলিম ৪/৬৫, আল-আযকার, পৃ. ৫৩, ৫৪।

[3] তিরমিযী ১/১২, নং ৭, আবু দাউদ ১/৮ নং ৩০, হাকিম ১/২৬১, সহীহ ইবনু খুযাইমাহ ১/৪৮।