রমযান মাসের ৩০ আসর ত্রয়োবিংশ আসর শাইখ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-উসাইমীন (রহঃ) ১ টি

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম জান্নাত সম্পর্কে যেসব বিবরণ দিয়েছেন, নমুনা স্বরূপ তার কিছু নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

* আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، حَدِّثْنَا عَنِ الْجَنَّةِ، مَا بِنَاؤُهَا؟ قَالَ: «لَبِنَةُ ذَهَبٍ وَلَبِنَةُ فِضَّةٍ، وَمِلَاطُهَا الْمِسْكُ الْأَذْفَرُ، وَحَصْبَاؤُهَا اللُّؤْلُؤُ وَالْيَاقُوتُ، وَتُرَابُهَا الزَّعْفَرَانُ، مَنْ يَدْخُلُهَا يَنْعَمُ وَلَا يَبْأَسُ، وَيَخْلُدُ وَلَا يَمُوتُ، لَا تَبْلَى ثِيَابُهُ وَلَا يَفْنَى شَبَابُهُ»

‘আমরা বললাম, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের জান্নাত সম্পর্কে বর্ণনা করুন, তা কিসের তৈরি? উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, স্বর্ণ ও রৌপ্যের ইটের তৈরি, তার গাঁথুনী হবে মিশক আম্বরের। তার নুড়ি বা কংকর হবে মনিমুক্তা ও ইয়াকুত পাথরের। আর তার মাটি যা‘ফরানের। যে তাতে প্রবেশ করবে সে (অশেষ) নিয়ামতপ্রাপ্ত হবে। নিরাশ হবে না, বা অভাব বোধ করবে না, সে তথায় চিরস্থায়ী হবে; মৃত্যুবরণ করবে না। তার পোশাক (কখনও) পুরাতন হবে না। তার যৌবন শেষ হবে না।’[1]

* সহীহ মুসলিমে এসেছে, সাহাবী উৎবাহ ইবন গাযওয়ান একদিন ভাষণ দিতে গিয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও তার স্তুতি প্রকাশ করে বললেন,

أَمَّا بَعْدُ، «فَإِنَّ الدُّنْيَا قَدْ آذَنَتْ بِصَرْمٍ وَوَلَّتْ حَذَّاءَ، وَلَمْ يَبْقَ مِنْهَا إِلَّا صُبَابَةٌ كَصُبَابَةِ الْإِنَاءِ، يَتَصَابُّهَا صَاحِبُهَا، وَإِنَّكُمْ مُنْتَقِلُونَ مِنْهَا إِلَى دَارٍ لَا زَوَالَ لَهَا، فَانْتَقِلُوا بِخَيْرِ مَا بِحَضْرَتِكُمْ، فَإِنَّهُ قَدْ ذُكِرَ لَنَا أَنَّ الْحَجَرَ يُلْقَى مِنْ شَفَةِ جَهَنَّمَ، فَيَهْوِي فِيهَا سَبْعِينَ عَامًا، لَا يُدْرِكُ لَهَا قَعْرًا، وَوَاللهِ لَتُمْلَأَنَّ، أَفَعَجِبْتُمْ؟ وَلَقَدْ ذُكِرَ لَنَا أَنَّ مَا بَيْنَ مِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الْجَنَّةِ مَسِيرَةُ أَرْبَعِينَ سَنَةً، وَلَيَأْتِيَنَّ عَلَيْهَا يَوْمٌ وَهُوَ كَظِيظٌ مِنَ الزِّحَامِ »

‘অতঃপর, দুনিয়া তার সমাপ্তির এবং পশ্চাদাপসারণের ঘোষণা দিচ্ছে। দুনিয়ার কিছুই বাকী থাকবে না, একমাত্র ততটুকু যা পাত্রের নিচে অবশিষ্ট থাকে; যা পাত্রের মালিক গ্রহণ করে থাকে। নিশ্চয়ই তোমরা এমন এক বাড়ীর দিকে অগ্রসর হচ্ছো যা শেষ হওয়ার নয়। অতএব তোমরা উত্তম আমলসহ সেদিকে স্থানান্তরিত হও। আর আমাদের কাছে বর্ণনা করা হয়েছে যে, জান্নাতের দরজার দুই কপাটের মধ্যকার ব্যবধান চল্লিশ বছরের রাস্তার সমপরিমাণ। অথচ এমন একদিন আসবে যেদিন সেখানেও প্রচণ্ড ভীড় থাকবে।’[2]

* অন্য হাদীসে রয়েছে, সাহল ইবন সা‘দ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«فِي الجَنَّةِ ثَمَانِيَةُ أَبْوَابٍ، فِيهَا بَابٌ يُسَمَّى الرَّيَّانَ، لاَ يَدْخُلُهُ إِلَّا الصَّائِمُونَ»

‘জান্নাতের আটটি দরজা আছে, তন্মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়্যান। এ দরজা দিয়ে সিয়াম পালনকারী ছাড়া অন্য কেউ প্রবেশ করবে না।’[3]

* হাদীসে আরও রয়েছে:

عَنْ أُسَامَةَ بْنِ زَيْدٍ، قَالَ: قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ذَاتَ يَوْمٍ لِأَصْحَابِهِ: «أَلَا هَلْ مُشَمِّرٍ لِلْجَنَّةِ، فَإِنَّ الْجَنَّةَ لَا خَطَرَ لَهَا هِيَ، وَرَبِّ الْكَعْبَةِ نُورٌ يَتَلَأْلَأُ، وَرَيْحَانَةٌ تَهْتَزُّ، وَقَصْرٌ مُشَيَّدٌ، وَنَهْرٌ مُطَّرِدٌ، وَفَاكِهَةٌ كَثِيرَةٌ نَضِيجَةٌ، وَزَوْجَةٌ حَسْنَاءُ جَمِيلَةٌ، وَحُلَلٌ كَثِيرَةٌ فِي مَقَامٍ أَبَدًا فِي حَبْرَةٍ وَنَضْرَةٍ فِي دَارٍ عَالِيَةٍ سَلِيمَةٍ بَهِيَّةٍ»، قَالُوا: نَحْنُ الْمُشَمِّرُونَ لَهَا يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «قُولُوا: إِنْ شَاءَ اللَّهُ»

‘উসামা ইবন যায়েদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাবধান! জান্নাতে যাওয়ার ঐকান্তিক আগ্রহ ও প্রচেষ্টাকারী কেউ আছে কী? কেননা জান্নাত এমন এক বস্তু যার অবস্থা সম্পর্কে কল্পনাও উদিত হয় না। কা‘বার রবের কসম! তা হচ্ছে, উজ্জ্বল আলোকে উদ্ভাসিত, চকচককারী, সুগন্ধি সুবাতাস, সুরম্য অট্রালিকা, প্রবাহমান নদী, পাকা বা সুস্বাদু ফল, অনিন্দ্য সুন্দরী স্ত্রী এবং বাহারী পোশাক, তা হবে শান্তির চিরস্থায়ী নীড়। নিরাপদ বাসস্থান, ফল-মূল, চিরসবুজ, নেয়ামতপূর্ণ ও সুউচ্চ সুদৃশ্য মহল্লা। সাহাবাগণ আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমরা তো ওই জান্নাতের প্রতি প্রচণ্ড আকাঙ্ক্ষী ও এর জন্য প্রচেষ্টাকারী। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি সাল্লাম বললেন, তোমরা বল ইন-শাআল্লাহ। অতঃপর উপস্থিত লোকেরা বললেন, ইন-শাআল্লাহ।’[4]

* অনুরূপভাবে আবু সা‘ঈদ আল-খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ فِى الْجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ لَوْ أَنَّ الْعَالَمِينَ اجْتَمَعُوا فِى إِحْدَاهُنَّ لَوَسِعَتْهُمْ».

‘নিশ্চয় জান্নাতের একশ স্তর রয়েছে, যদি পৃথিবীর সকল অধিবাসী তার একটি স্তরে একত্রিত হয়, তবুও তার বিস্তৃতি অক্ষু্ণ্ন থাকবে।’[5]

অন্য এক হাদীসে ‘আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ فِي الجَنَّةِ مِائَةَ دَرَجَةٍ، أَعَدَّهَا اللَّهُ لِلْمُجَاهِدِينَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ، مَا بَيْنَ الدَّرَجَتَيْنِ كَمَا بَيْنَ السَّمَاءِ وَالأَرْضِ، فَإِذَا سَأَلْتُمُ اللَّهَ، فَاسْأَلُوهُ الفِرْدَوْسَ، فَإِنَّهُ أَوْسَطُ الجَنَّةِ وَأَعْلَى الجَنَّةِ - أُرَاهُ - فَوْقَهُ عَرْشُ الرَّحْمَنِ، وَمِنْهُ تَفَجَّرُ أَنْهَارُ الجَنَّةِ»

‘নিশ্চয়ই জান্নাতের একশতটি স্তর রয়েছে। আল্লাহ তার রাস্তায় জিহাদকারীদের জন্য তা তৈরি করেছেন। প্রতি দু’ স্তরের মধ্যে আসমান ও জমিনের ব্যবধান রয়েছে। সুতরাং তোমরা যখন আল্লাহর কাছে জান্নাত প্রার্থনা করবে, তখন জান্নাতুল ফিরদাউস প্রার্থনা করবে। কারণ তা জান্নাতের মাঝখানে অবস্থিত এবং সর্বোচ্চ জান্নাত, সেখান থেকেই জান্নাতের নদীসমূহ প্রবহিত হয়, এর ওপরই আল্লাহর আরশ অবস্থিত।’[6]

* অন্য হাদীসে আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ أَهْلَ الجَنَّةِ يَتَرَاءَوْنَ أَهْلَ الغُرَفِ مِنْ فَوْقِهِمْ، كَمَا يَتَرَاءَوْنَ الكَوْكَبَ الدُّرِّيَّ الغَابِرَ فِي الأُفُقِ، مِنَ المَشْرِقِ أَوِ المَغْرِبِ، لِتَفَاضُلِ مَا بَيْنَهُمْ» قَالُوا يَا رَسُولَ اللَّهِ تِلْكَ مَنَازِلُ الأَنْبِيَاءِ لاَ يَبْلُغُهَا غَيْرُهُمْ، قَالَ: «بَلَى وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ، رِجَالٌ آمَنُوا بِاللَّهِ وَصَدَّقُوا المُرْسَلِينَ»

‘জান্নাতবাসীরা পরস্পর পরস্পরকে কক্ষে অবস্থানরত উপরের দিকে দেখতে পাবে, যেমন- তোমরা দূর আকাশের প্রান্তদেশে পূর্ব বা পশ্চিমে মোতির ন্যায় উজ্জ্বল তারকারাজী দেখে থাকো। আর এটা হবে তাদের পরস্পরের মর্যাদার ভিত্তিতে। সাহাবীগণ বলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ ওই স্থান কি নবীদের? তথায় তাঁরা ছাড়া আর কেউ কি পৌঁছতে পারবে না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, হ্যাঁ, ওই সত্তার কসম যার হাতে আমার জীবন! তারা হচ্ছে এমন লোক যারা আল্লাহর উপর ঈমান এনেছে এবং রাসূলদের যথাযথ সত্য বলে বিশ্বাস করেছে।’[7]


* অনুরূপভাবে আবূ মালেক আশ‘আরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

« إِنَّ فِي الْجَنَّةِ غُرَفًا يُرَى ظَاهِرُهَا مِنْ بَاطِنِهَا، وَبَاطِنُهَا مِنْ ظَاهِرُهَا» ، فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ تِلْكَ مَنَازِلُ الْأَنْبِيَاءِ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «أَعَدَّهَا اللَّهُ لِمَنْ أَطْعَمَ الطَّعَامَ، وَأَفْشَى السَّلَامَ، وَأَدَامَ الصِّيَامَ، وَصَلَّى بِاللَّيْلِ، وَالنَّاسُ نِيَامٌ» .

‘নিশ্চয়ই জান্নাতের মাঝে অনেকগুলো কামরা থাকবে। যার ভেতর থেকে বাইরে এবং বাইরে থেকে ভেতরে দেখা যাবে। আল্লাহ তা তৈরি করেছেন ওই সকল ব্যক্তির জন্য, যারা মানুষকে খাদ্য দেয়, সিয়াম পালন করে এবং মানুষ যখন ঘুমায়, তখন তারা সালাতে মগ্ন থাকে।’[8]

* অন্য হাদীসে আবূ মুসা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

«إِنَّ لِلْمُؤْمِنِ فِي الْجَنَّةِ لَخَيْمَةً مِنْ لُؤْلُؤَةٍ وَاحِدَةٍ مُجَوَّفَةٍ، طُولُهَا سِتُّونَ مِيلًا، لِلْمُؤْمِنِ فِيهَا أَهْلُونَ، يَطُوفُ عَلَيْهِمِ الْمُؤْمِنُ فَلَا يَرَى بَعْضُهُمْ بَعْضًا»

‘নিশ্চয়ই মুমিনদের জন্য জান্নাতে একটি সুরক্ষিত মোতির তাবু থাকবে। আসমানের দিকে তার দৈর্ঘ্য হবে ষাট মঞ্জিল। আর মুমিনদের জন্য সেখানে এমন পরিবারসমূহ থাকবে, মুমিন সে তাঁবুগুলোর চারপাশে ঘোরাফেরা করবে অথচ তাদের কেউ কাউকে দেখতে পাবে না।’[9]

* অনুরূপভাবে আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ أَوَّلَ زُمْرَةٍ يَدْخُلُونَ الجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ عَلَى أَشَدِّ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ إِضَاءَةً، لاَ يَبُولُونَ وَلاَ يَتَغَوَّطُونَ، وَلاَ يَتْفِلُونَ وَلاَ يَمْتَخِطُونَ، أَمْشَاطُهُمُ الذَّهَبُ، وَرَشْحُهُمُ المِسْكُ، وَمَجَامِرُهُمْ الأَلُوَّةُ الأَنْجُوجُ، عُودُ الطِّيبِ وَأَزْوَاجُهُمُ الحُورُ العِينُ، عَلَى خَلْقِ رَجُلٍ وَاحِدٍ، عَلَى صُورَةِ أَبِيهِمْ آدَمَ، سِتُّونَ ذِرَاعًا فِي السَّمَاءِ»

‘সর্বপ্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে, তাদের চেহারা হবে পুর্ণিমার চাঁদের ন্যায়। তারপর যে দলটি প্রবেশ করবে তারা হবে আকাশের সবচেয়ে আলোকিত তারকার চেয়ে উজ্জ্বল। যারা জান্নাতে যাবে তারা পেশাব করবে না, পায়খানা করবে না, থুতু আসবে না, কফ-শ্লেষাও আসবে না। তাদের চিরুনী হবে স্বর্ণের, ঘাম হবে মেশকের ন্যায় সুগন্ধিযুক্ত। তাদের সুগন্ধি কাঠ হবে মুল্যবান আলাঞ্জুজ (সুগন্ধিযুক্ত কাঠ) সকলের গঠন হবে আদি পিতা আদম ‘আলাইহিস সালামের ন্যায় লম্বায় ঘাট হাত লম্বা।’[10]

অন্য বর্ণনায় আছে,

« لاَ اخْتِلاَفَ بَيْنَهُمْ وَلاَ تَبَاغُضَ، قُلُوبُهُمْ قَلْبٌ وَاحِدٌ، يُسَبِّحُونَ اللَّهَ بُكْرَةً وَعَشِيًّا»

‘তাদের মধ্যে কোনো মতনৈক্য থাকবে না। তারা পরস্পর হিংসা করবে না, তারা সকলে এক আত্মা সদৃশ হবে এবং সকাল-সন্ধ্যায় আল্লাহর প্রশংসা করবে।’[11]

অন্য বর্ণনায় এসেছে,

«وَأَزْوَاجُهُمُ الحُورُ العِينُ»

“আর তাদের স্ত্রীগণ হবেন ডাগর নয়না হূরীগণ”[12]।


* অন্য হাদীসে রয়েছে, জাবের রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ أَهْلَ الْجَنَّةِ يَأْكُلُونَ فِيهَا وَيَشْرَبُونَ، وَلَا يَتْفُلُونَ وَلَا يَبُولُونَ وَلَا يَتَغَوَّطُونَ وَلَا يَمْتَخِطُونَ» قَالُوا: فَمَا بَالُ الطَّعَامِ؟ قَالَ: «جُشَاءٌ وَرَشْحٌ كَرَشْحِ الْمِسْكِ، يُلْهَمُونَ التَّسْبِيحَ وَالتَّحْمِيدَ، كَمَا تُلْهَمُونَ النَّفَسَ»

‘নিশ্চয় জান্নাতীগণ পানাহার করবে অথচ থুতু ফেলবে না, পেশাব-পায়খানাও করবে না, নাকও ঝাড়বে না। সাহাবীগণ বললেন, তাহলে খাদ্যের কি হবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তারা ঢেকুর দেবে এবং মিশকের ন্যায় ঘাম বের হবে। তাদের তাসবীহ ও তাহমীদ শিখিয়ে দেয়া হবে যেমনি তাদেরকে শ্বাস-প্রশ্বাসের ইলহাম হবে।’[13]

* অন্য হাদীসে রয়েছে, যায়েদ ইবন আরকাম থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ ، إِنَّ أَحَدَهُمْ لَيُعْطَى قُوَّةَ مِئَةِ رَجُلٍ فِي الْمَطْعَمِ وَالْمَشْرَبِ وَالشَّهْوَةِ وَالْجِمَاعِ . حَاجَةُ أَحَدِهِمْ عَرَقٌ يَفِيضُ مِنْ جُلُودِهِمْ مِثْلُ رِيحِ الْمِسْكِ، فَإِذَا الْبَطْنُ قَدْ ضَمُرَ».

‘শপথ ওই সত্তার! যার হাতে মুহাম্মাদের জীবন, নিশ্চয়ই তাদের মধ্য হতে অর্থাৎ জান্নাতবাসীদের মধ্য হতে প্রত্যেককে একশত ব্যক্তির ন্যায় পানাহার, সহবাস শক্তি ও চাহিদা প্রদান করা হবে। তাদের শরীরের প্রয়োজন (পয়ঃনিস্কাষণের ব্যবস্থা) হবে শরীরের চামড়ার উপর থেকে বের হওয়া ঘাম, যা মিশকের ন্যায় সুগন্ধিযুক্ত হবে। অতঃপর তাদের পেট আবার খালি হয়ে যাবে।’[14]

* অন্য হাদীসে রয়েছে, আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَلَقَابُ قَوْسِ أَحَدِكُمْ، أَوْ مَوْضِعُ قَدَمٍ مِنَ الجَنَّةِ، خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا، وَلَوْ أَنَّ امْرَأَةً مِنْ نِسَاءِ أَهْلِ الجَنَّةِ اطَّلَعَتْ إِلَى الأَرْضِ لَأَضَاءَتْ مَا بَيْنَهُمَا، وَلَمَلَأَتْ مَا بَيْنَهُمَا رِيحًا، وَلَنَصِيفُهَا - يَعْنِي الخِمَارَ - خَيْرٌ مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا»

“জান্নাতে তোমাদের কারও ধনুক অথবা কারও পা রাখার স্থান দুনিয়া ও তাতে যা আছে তা থেকেও উত্তম। যদি কোনো জান্নাতি মহিলা যমীনের দিকে তাকাতো তবে যমীন পর্যন্ত সকল স্থান আলোকিত হয়ে যেতো, আর তার সুগন্ধে এ সকল স্থান পূর্ণ হয়ে যেতো। জান্নাতি মহিলার একটি উড়না দুনিয়া ও তার মধ্যে যা আছে তা থেকে উত্তম।’[15]

* অন্য হাদীসে রয়েছে, আনাস ইবন মালেক রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِنَّ فِى الْجَنَّةِ لَسُوقًا يَأْتُونَهَا كُلَّ جُمُعَةٍ فَتَهُبُّ رِيحُ الشَّمَالِ فَتَحْثُو فِى وُجُوهِهِمْ وَثِيَابِهِمْ فَيَزْدَادُونَ حُسْنًا وَجَمَالاً فَيَرْجِعُونَ إِلَى أَهْلِيهِمْ وَقَدِ ازْدَادُوا حُسْنًا وَجَمَالاً فَيَقُولُ لَهُمْ أَهْلُوهُمْ وَاللَّهِ لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمَالاً. فَيَقُولُونَ وَأَنْتُمْ وَاللَّهِ لَقَدِ ازْدَدْتُمْ بَعْدَنَا حُسْنًا وَجَمَالاً».

‘নিশ্চয় জান্নাতে একটি বাজার রয়েছে। জান্নাতীগণ প্রতি শুক্রবার সে বাজারে আসবেন। অতঃপর উত্তরের বাতাস তাদের মুখমণ্ডল ও কাপড়ের উপর প্রবাহিত হবে। এতে তাদের সৌন্দর্য আরও বৃদ্ধি পাবে। অতঃপর তারা যখন নিজ পরিবারের কাছে প্রত্যাবর্তন করবে, তখন তাদের স্ত্রীরা বলবে, আল্লাহর শপথ! আমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর তোমাদের সৌন্দর্য ও চিত্তাকর্ষকতা আরো বেড়ে গেছে।’[16]

* তাছাড়া অন্য হাদীসে রয়েছে, ‘আবূ সাঈদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«يُنَادِي مُنَادٍ: إِنَّ لَكُمْ أَنْ تَصِحُّوا فَلَا تَسْقَمُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَحْيَوْا فَلَا تَمُوتُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَشِبُّوا فَلَا تَهْرَمُوا أَبَدًا، وَإِنَّ لَكُمْ أَنْ تَنْعَمُوا فَلَا تَبْأَسُوا أَبَدًا» فَذَلِكَ قَوْلُهُ عَزَّ وَجَلَّ: (وَنُودُوا أَنْ تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنْتُمْ تَعْمَلُونَ) [الأعراف: 43]

জান্নাতীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন একজন আহ্বানকারী ঘোষণা করবেন: জেনে রাখ! তোমরা সর্বদা সুস্থ্য থাকবে; অসুস্থ হবে না। জীবিত থাকবে; কখনও মরবে না; সর্বদা যুবক থাকবে; কখনও বৃদ্ধ হবে না। নিয়ামত প্রাপ্ত হবে; কখনও বঞ্চিত হবে না। এটাই হচ্ছে মহান আল্লাহর বাণী: “তোমরা যে (ভালো) আমল করতে, তারই জন্য তোমাদেরকে এই জান্নাতের উত্তরাধিকারী করা হয়েছে।’ (সূরা আল-‘আরাফ, আয়াত: ৪৩)’[17]

* অন্য হাদীসে রয়েছে, আবূ হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

قَالَ اللَّهُ «أَعْدَدْتُ لِعِبَادِي الصَّالِحِينَ مَا لاَ عَيْنٌ رَأَتْ، وَلاَ أُذُنٌ سَمِعَتْ، وَلاَ خَطَرَ عَلَى قَلْبِ بَشَرٍ، فَاقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ» قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ: اقْرَءُوا إِنْ شِئْتُمْ: (فَلاَ تَعْلَمُ نَفْسٌ مَا أُخْفِيَ لَهُمْ مِنْ قُرَّةِ أَعْيُنٍ) [السجدة: 17]

‘আল্লাহ তা‘আলা বলছেন: আমি আমার পুণ্যবান বান্দাদের জন্য এমন সব নিয়ামত প্রস্তুত করে রেখেছি, যা কখনও কোনো চক্ষু দেখে নি, কোনো কান শুনে নি এবং কোনো অন্তকরণ কল্পনাও করে নি। (তিনি বলেন) এর সত্যতা প্রমাণে তোমরা ইচ্ছা করলে এই আয়াতটি পাঠ করতে পার। “কোনো প্রাণী জানে না, কৃতকর্মের প্রতিদানস্বরূপ চক্ষু শীতলকারী আনন্দদায়ক কী ধরনের নিয়ামত তাদের জন্য সংরক্ষিত রয়েছে।” (সূরা আস-সাজদাহ, আয়াত: ১৭)’[18]

* অন্য হাদীসে রয়েছে, সুহাইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

«إِذَا دَخَلَ أَهْلُ الْجَنَّةِ الْجَنَّةَ، وَأَهْلُ النَّارِ النَّارَ، نَادَى مُنَادٍ: يَا أَهْلَ الْجَنَّةِ، إِنَّ لَكُمْ عِنْدَ اللَّهِ مَوْعِدًا يُرِيدُ أَنْ يُنْجِزَكُمُوهُ، فَيَقُولُونَ: وَمَا هُوَ؟ أَلَمْ يُثَقِّلْ مَوَازِينَنَا، وَيُبَيِّضْ وُجُوهَنَا، وَيُدْخِلْنَا الْجَنَّةَ، وَيُجِرْنَا مِنَ النَّارِ " قَالَ: «فَيُكْشَفُ لَهُمُ الْحِجَابُ فَيَنْظُرُونَ إِلَيْهِ» قَالَ: «فَوَاللَّهِ مَا أَعْطَاهُمْ شَيْئًا أَحَبَّ إِلَيْهِمْ مِنَ النَّظَرِ إِلَيْهِ، وَلَا أَقَرَّ لِأَعْيُنِهِمْ»

‘যখন জান্নাতবাসী জান্নাতে প্রবেশ করবে, তখন এক ঘোষক ঘোষণা করে বলবে, হে জান্নাতীগণ! আল্লাহ তোমাদের জন্য যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা তিনি পূর্ণ করতে চাও। তারা উত্তরে বলবে সেটা আবার কী? তিনি কি আমাদের আমলের পাল্লাকে ভারী করে দেন নি? আমাদের চেহারা উজ্জ্বল করে দেন নি? আমাদেকে জান্নাতে প্রবেশ করান ন? জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করেন নি? তিনি বলেন, তখন তাদের জন্য পর্দা উম্মোচন করা হবে। তখন তারা তাঁর (আল্লাহর) দিকে তাকাবেন। আল্লাহর কসম! তাঁর দর্শনের চেয়ে অধিক প্রিয় এবং চক্ষু শীতলকারী কোনো প্রিয় বস্তুই তিনি মানুষকে দান করেন নি।’[19]

* অন্য হাদীসে রয়েছে, আবূ সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى يَقُولُ لِأَهْلِ الجَنَّةِ: أُحِلُّ عَلَيْكُمْ رِضْوَانِي، فَلاَ أَسْخَطُ عَلَيْكُمْ بَعْدَهُ أَبَدًا»

‘আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জান্নাতীদের বলবেন, আমি তোমাদের ওপর চির দিনের জন্য সন্তুষ্ট হয়ে গেলাম। আর কখনও অসন্তুষ্ট হব না।’[20]


হে আল্লাহ! আমাদের জান্নাতের স্থায়ী বাসিন্দা করে দিন এবং আমাদের ওপর সন্তুষ্টির অবারিত ঝর্ণাধারা বর্ষণ করুন। আর আপনার দর্শন ও সাক্ষাৎ লাভে ধন্য হবার তাওফীক দান করুন; যে দর্শনে থাকবে না কোনো ধরণের ক্ষতি ও ক্ষতিকারী এবং ভ্রষ্টকারী ফিতনা। হে আল্লাহ! সালাত ও সালাম বর্ষণ করুন আপনার বান্দা ও নবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার-পরিজন ও সকল সাহবীর ওপর।

[1] আহমাদ: ২/৩০৫, ৪৪৫; তিরমিযী: ২৫২৬।

[2] মুসলিম: ২৯৬৭।

[3] বুখারী: ১৮৯৬; মুসলিম: ১১৫২।

[4] ইবন মাজাহ: ৪৩৩২ ইবন হিব্বান: ৭৩৮১। তবে এর সনদ দুর্বল।

[5] আহমাদ ৩/২৯; তিরমিযী: ২৫৩২; তবে সনদ দুর্বল।

[6] বুখারী: ২৭৯০, ৭৪২৩।

[7] বুখারী: ৩২৫৬; মুসলিম: ২৮৩১।

[8] মুসনাদে আহমাদ ৫/৩৪৩; ইবন আবী শাইবাহ্‌: ৩৩৯৭২; সহীহ ইবন হিব্বান: ৫০৯।

[9] বুখারী: ৩২৪৩, ৪৮৭৮; মুসলিম: ২৮৩৮।

[10] বুখারী; ৩৩২৭; মুসলিম: ২৮৩৪।

[11] বুখারী: ৩২৪৫; মুসলিম: ২৮৩৪।

[12] মুসলিম: ২৮৩৪।

[13] মুসলিম: ২৮৩৫।

[14] আহমাদ ৪/৩৬৭; সহীহ ইবন হিব্বান: ৭৪২৪।

[15] বুখারী : ৬৫৬৮।

[16] মুসলিম: ২৮৩৩।

[17] মুসলিম: ২৮৩৭।

[18] বুখারী: ৩২৪৪; মুসলিম: ২৮২৪।

[19] মুসলিম: ১৮১; আহমাদ: ১৮৯৪১।

[20] বুখারী: ৬৫৪৯; মুসলিম: ২৮২৯।