উপদেশ ৩৮. বিদ্যায় ত্রুটি জাতির ধ্বংস আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১ টি

عَنْ عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: إِنَّ اللهَ عَزَّ وَجَلَّ أَوْحَى إِلَيَّ أَنَّهُ مَنْ سَلَكَ مَسْلَكًا فِيْ طَلَبِ الْعِلْمِ سَهَّلْتُ لَهُ طَرِيْقَ الْجَنَّةِ وَمَنْ سَلَبْتُ كَرِيمَتَيْهِ أَثَبْتُهُ عَلَيْهِمَا الْجَنَّةَ. وَفَضْلٌ فِيْ عِلْمٍ خَيْرٌ مِنْ فَضْلٍ فِي عِبَادَةٍ وَمِلاَكُ الدِّيْنِ الْوَرَعُ.

আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ আমার নিকট অহী পাঠিয়েছেন যে ব্যক্তি ইলম অন্বেষণের উদ্দেশ্যে কোন পথ অবলম্বন করবে, তার জন্য আমি জান্নাতের পথ সহজ করে দিব এবং যে ব্যক্তির দুই চক্ষু আমি নিয়ে গিয়েছি, তাকে তার পরিবর্তে আমি জান্নাত দান করব। ইবাদত অধিক হওযা অপেক্ষা ইলম অধিক হওয়া উত্তম। দ্বীনের (তথা ইলম ও আলেমের) সাথে হচ্ছে সন্দেহের জিনিস হতে বেঁচে থাকা’ (বায়হাক্বী, শু‘আবুল ঈমান, মিশকাত হা/২৩৮)।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ قَالَ: لَوْ أَنَّ أَهْلَ الْعِلْمِ صَانُوا الْعِلْمَ وَوَضَعُوهُ عِنْدَ أَهْلِهِ لَسَادُوا بِهِ أَهْلَ زَمَانِهِمْ وَلَكِنَّهُمْ بَذَلُوهُ لِأَهْلِ الدُّنْيَا لِيَنَالُوا بِهِ مِنْ دُنْيَاهُمْ فَهَانُوا عَلَيْهِمْ سَمِعْتُ نَبِيَّكُمْ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ: مَنْ جَعَلَ الْهُمُومَ هَمًّا وَاحِدًا هَمَّ آخِرَتِهِ كَفَاهُ اللهُ هَمَّ دُنْيَاهُ وَمَنْ تَشَعَّبَتْ بِهِ الْهُمُومُ فِي أَحْوَالِ الدُّنْيَا لَمْ يُبَالِ اللهُ فِيْ أَيِّ أَوْدِيَتِهَا هَلَكَ.

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেছেন, যদি আলেমগণ ইলমের মর্যাদা রক্ষা করতেন এবং উপযুক্ত লোকদের হাতে তা সোপর্দ করতেন, তাহলে নিশ্চয়ই তাঁরা তা দ্বারা নিজেদের যুগের লোকদের নেতৃত্ব দিতে পারতেন। কিন্তু তাঁরা তা দুনিয়াদারদের বিলিয়ে দিয়েছেন, যাতে তাঁরা তাদের নিকট হতে দুনিয়ার কিছু লাভ করতে পারেন। ফলে তাঁরা দুনিয়াদারের নিকট মর্যাদাহীন হয়ে গেছেন। আমি তোমাদের নবী করীম (ছাঃ)-কে একথা বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি নিজের সব চিন্তাকে এক চিন্তায় অর্থাৎ আখিরাতের চিন্তায় পরিনথ করবে, আল্লাহ তার দুনিয়ার (সমস্ত) চিন্তার জন্য যথেষ্ট হবেন। অপরপক্ষে যাকে দুনিয়ার নানা চিন্তা নানা দিকে ব্যতিব্যস্ত করে রাখবে, তার জন্য আল্লাহ কোন পরওয়াই করবেন না, সে দুনিয়ার যে কোন ময়দানে ধ্বংস হয়ে যাক না কেন’ (ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/২৪৬)।

عَنْ زِيَادِ بْنِ حُدَيْرٍ قَالَ قَالَ لِيْ عُمَرُ: هَلْ تَعْرِفُ مَا يَهْدِمُ الْإِسْلاَمَ؟ قَالَ: قُلْتُ: لاَ. قَالَ: يَهْدِمُهُ زَلَّةُ الْعَالِمِ وَجِدَالُ الْمُنَافِقِ بِالْكِتَابِ وَحُكْمُ الْأَئِمَّةِ الْمُضِلِّيْنَ-

তাবেঈ যিয়াদ ইবনু হুদাইর (রহঃ) বলেন, একদা আমাকে ওমর (রাঃ) জিজ্ঞেস করলেন, তুমি বলতে পার কি, ইসলামকে কিসে ধ্বংস করবে? যিয়াদ বলেন, আমি বললাম, না। তখন তিনি বললেন, আলেমদের পদস্খলন, মুনাফিকদের আল্লাহর কিতাব নিয়ে বাদ-প্রতিবাদে লিপ্ত হওয়া এবং গোমরাহ শাসকদের শাসনই ইসলামকে ধ্বংস করবে (দারেমী, মিশকাত হা/২৫১)।

عَنِ ابْنِ سِيْرِيْنَ قَالَ: إِنَّ هَذَا الْعِلْمَ دِيْنٌ فَانْظُرُوْا عَمَّنْ تَأْخُذُوْنَ دِيْنَكُمْ.

তাবেঈ মুহাম্মাদ ইবনু সিরীন (রহঃ) বলেন, নিশ্চয়ই এ (কিতাব ও সুন্নাতের) ইলম হচ্ছে দ্বীন (অর্থাৎ দ্বীনের ভিত্তি)। সুতরাং লক্ষ্য রাখবে যে, তোমাদের দ্বীন কার নিকট হতে গ্রহণ করছ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৫৫)।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ قَالَ: يَا أَيُّهَا النَّاسُ مَنْ عَلِمَ شَيْئًا فَلْيَقُلْ بِهِ وَمَنْ لَمْ يَعْلَمْ فَلْيَقُلِ اللهُ أعْلَمُ فَإِنَّ مِنَ الْعِلْمِ أَنْ يَّقُوْلَ لِمَا لاَ تَعْلَمُ اللهُ أَعْلَمُ. قَالَ اللهُ تَعَالَى لِنَبِيِّهِ (قُلْ مَا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ مِنْ أَجْرٍ وَمَا أَنا مِنَ الْمُتَكَلِّفِيْنَ).

আব্দুল্লাহ ইবনু মাসঊদ (রাঃ) বলেন, হে লোকসকল! (তোমাদের মধ্যে) যে যা জানে সে যেন তাই বলে, আর যে জানে না সে যেন বলে, (আমি এ বিষয়ে জানি না, এ বিষয়ে) আল্লাহই অধিকতর জ্ঞাত। কেননা যে বিষয়ে তোমার জ্ঞান নেই সে বিষয়ে ‘আল্লাহই অধিকতর জ্ঞাত আছেন’ এ কথা বলাই তোমার জ্ঞান। (কুরআনে) আল্লাহ পাক তাঁর নবীকে বলেছেন, ‘আপনি বলুন, আমি (দ্বীন প্রচারের বিনিময়ে) তোমাদের নিকট কোন পারিশ্রমিক চাই না। আর কষ্ট করে যারা (না জানা) কথা বলে, আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত নই’ (মুত্তাফাক্ব ‘আলাইহ, মিশকাত হা/২৫৪)।

عَنْ أَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَتَقَارَبُ الزَّمَانُ وَيُقْبَضُ الْعِلْمُ وَتَظْهَرُ الْفِتَنُ وَيُلْقَى الشُّحُّ وَيَكْثُرُ الْهَرْجُ. قَالُوا وَمَا الْهَرْجُ قَالَ الْقَتْلُ.

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, সময় সংকীর্ণ হয়ে যাবে। ইলম উঠিয়ে নেওয়া হবে। ফিতনা-ফাসাদ বৃদ্ধি পাবে, কৃপণতা দেখা দিবে এবং ‘হারজের’ আধিক্য হবে। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হারজ কী? তিনি বললেন, হত্যা’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৩৮৯)

عَنْ أَنَسٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ إِنَّ مِنْ أَشْرَاطِ السَّاعَةِ أَنْ يُرْفَعَ الْعِلْمُ، وَيَكْثُرَ الْجَهْلُ وَيَكْثُرَ الزِّنَا، وَيَكْثُرَ شُرْبُ الْخَمْرِ، وَيَقِلَّ الرِّجَالُ، وَيَكْثُرَ النِّسَاءُ حَتَّى يَكُونَ لِخَمْسِينَ امْرَأَةً الْقَيِّمُ الْوَاحِدُ. وَفِى رِوَايَةٍ : يَقِلَّ الْعِلْمُ وَيَظْهَرَ الْجَهْلُ.

আনাস (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, ক্বিয়ামতের আলামতসমূহের মধ্যে রয়েছে, ইলম উঠিয়ে যাবে, মূর্খতা বৃদ্ধি পাবে, ব্যাভিচার বেড়ে যাবে, মদ্যপান বৃদ্ধি পাবে, পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে এবং নারীর সংখ্যা বেশী হবে। এমনকি পঞ্চাশ জন মহিলার পরিচালক হবে একজন পুরুষ। অপর এক বর্ণনায় আছে, ইলম কমে যাবে এবং মূর্খতা প্রকাশ পাবে (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৩৭)

عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِنَّ مِمَّا يَلْحَقُ الْمُؤْمِنَ مِنْ عَمَلِهِ وَحَسَنَاتِهِ بَعْدَ مَوْتِهِ عِلْمًا علمه ونشره وَولدا صَالحا تَركه ومصحفا وَرَّثَهُ أَوْ مَسْجِدًا بَنَاهُ أَوْ بَيْتًا لِابْنِ السَّبِيلِ بَنَاهُ أَوْ نَهْرًا أَجْرَاهُ أَوْ صَدَقَةً أخرجهَا من مَاله فِي صِحَّته وحياته يلْحقهُ من بعد مَوته.

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.)বলেছেন, মুমিনের মৃত্যুর পরও তার আমল ও নেক কাজসমূহের মধ্যে যার ছওয়াব তার নিকট বরাবর পৌঁছতে থাকবে তা হচ্ছে- (১) ইলম, যা সে শিক্ষা করেছে অতঃপর তা বিস্তার করেছে, (২) নেক সন্তান, যাকে সে দুনিয়ায় রেখে গিয়েছে, অথবা (৩) কুরআন, যা মীরাছরূপে রেখে (অথবা ওয়াকফ করে) গিয়েছে, অথবা (৪) মসজিদ, যা সে নির্মাণ করে গিয়েছে, অথবা (৫) মুসাফিরখানা, যা সে মুসাফিরদের জন্য তৈরী করে গিয়েছে, অথবা (৬) খাল, (কূপ, পুকুর প্রভৃতি) যা সে খনন করে গিয়েছে, অথবা (৭) দান, যা সে সুস্থ ও জীবিত অবস্থায় তার মাল হতে করে গিয়েছে (এগুলোর ছওয়াব)। তার মৃত্যুর পরও তার নিকট পৌঁছতে থাকবে (ইবনু মাজাহ, বায়হাক্বী, মিশকাত হা/২৫৪)