উপদেশ ২৭. জান্নাত ও জাহান্নাম আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১ টি

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ غِلْظَ جِلْدِ الْكَافِرِ اِثْنَانِ وَاَرْبَعُوْنَ ذِرَاعًا وَاِنَّ ضِرْسَهُ مِثْلُ اُحُدٍ وَاِنَّ مَجْلِسَهُ مِنْ جَهَنَّمَ مَا بَيْنَ مَكَّةَ وَالْمَدِيْنَةِ.

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করীম(সা.) বলেছেন, জাহান্নামের মধ্যে কাফেরের গায়ের চামড়া হবে বিয়াল্লিশ হাত মোটা, দাঁত হবে ওহুদ পাহাড়ের সমান এবং জাহান্নামীদের বসার স্থান হবে মক্কা-মদীনার মধ্যবর্তী ব্যবধান পরিমাণ (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৬৭৫; হাদীছ ছহীহ; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৩১)। একজন জাহান্নামীর দাঁত ওহুদ পাহাড়ের সমান হবে। গায়ের চামড়া বিয়াল্লিশ হাত মোটা বা তিনদিনের চলার পথ পরিমাণ মোটা হবে। তার দু’কাঁধের ব্যবধান তিনদিনের চলার পথ পরিমাণ হবে। আর বসার জায়গা হবে প্রায় আড়াইশত মাইল, তাহ’লে জাহান্নামী ব্যক্তি কত বড় হ’তে পারে অনুমান করা যায়। অপর দিকে নবী করীম(সা.) বলেছেন, হাজারে ৯৯৯ জন লোক জাহান্নামে যাবে এবং প্রতিজনের বসার স্থান হবে প্রায় আড়াই শত মাইল। তাহ’লে জাহান্নাম কত বড় হবে তা মানুষের হিসাব করা সম্ভব নয়।

عَن نُعْمَانَ بْنِ بَشِيْرٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُوْلُ اَنْذَرْتُكُمْ النَّارَ اَنْذَرْتُكُمْ النَّارَ فَمَازَالَ يَقُوْلُهَا حَتَّى لَوْكَانَ فِىْ مَقَامِىْ هَذَا سَمِعَهُ اَهْلُ السُّوْقِ وَحَتَّى سَقَطَتْ خَمِيْصَةُ كَانَتْ عَلَيْهِ عِنْدَ رِجْلَيْهِ.

নো‘মান ইবনে বশীর (রা.) বলেন, আমি রাসূল(সা.) -কে বলতে শুনেছি, আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন হ’তে ভীতি প্রদর্শন করছি আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের আগুন হ’তে ভীতি প্রদর্শন করছি। তিনি এ বাক্যগুলি বার বার এমনভাবে উচ্চ কণ্ঠে বলতে থাকলেন যে, বর্তমানে আমি যে স্থানে বসে আছি, যদি রাসূল(সা.) এ স্থান হ’তে উক্ত বাক্যগুলি বলতেন, তবে ঐ উচ্চ কণ্ঠ বাজারের লোকেরাও শুনতে পেত। আর তিনি এমনভাবে হেলে দুলে বাক্যগুলি বলছিলেন যে, তার কাঁধের উপর রক্ষিত চাদরখানা পায়ের উপর গড়ে পড়েছিল (দারেমী, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৪৪৩, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, তিনি মানুষকে খুব উচ্চ কণ্ঠে জাহান্নামের ভয় দেখাতেন। এমন কি বলার সময় বেখিয়াল হয়ে যেতেন। যার দরুন তার কাঁধের চাদর পড়ে যেত। অথবা শরীর ও হাত নাড়িয়ে খুব উচ্চ কণ্ঠে জাহান্নামের ভয় দেখানোর চেষ্টা করতেন।

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صِنْفَانِ مِنْ اَهْلِ النَّارِ لمَْ اَرَهُمَا قَوْمٌ مَعَهُمْ سِيَاطٌ كَاَذْنَابِ الْبَقَرِ يَضْرِبُوْنَ بِهَا النَّاسَ وَنِسَاءٌ كَاسِيَاتٌ عَارِيَاتٌ مُمِيْلاَتٌ مَائِلاَتٌ رُؤُسُهُنَّ كَاَسْنِمَةِ الْبُخْتِ الْمَائِلَةِ لاَ يَدْخُلْنَ الْجَنَّةَ وَلاَ يَجِدْنَ رِيْحَهَا وَ إِنَّ رِيْحَهَا لَتُوْجَدُ مِنْ مَسِيْرَةِ كَذَا وكَذَا.

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, দু’প্রকারের লোক জাহান্নামী। অবশ্য আমি তাদেরকে দেখতে পাব না। তাদের এক শ্রেণী এমন লোক হবে, যাদের হাতের মধ্যে থাকবে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক। তা দ্বারা তারা মানুষকে মারধর করতে থাকবে। আর দ্বিতীয় শ্রেণী হবে এমন সব নারী, যারা কাপড় পরেও উলংগ থেকে অপরকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করতে এবং নিজেও অপরের দিকে আকৃষ্ট হবে। তাদের মাথার চুল হবে বুখতি উটের হেলিয়ে পড়া কুঁজের ন্যায়। তারা কখনও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। এমনকি তারা জান্নাতের সুঘ্রাণও পাবে না। যদিও তার সুঘ্রাণ অনেক অনেক দূর হ’তে পাওয়া যাবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৩৩৬৯)। যে সব নারী বেহায়া-বেপর্দা হয়ে মাথার চুল প্রকাশ করে মাথা হেলিয়ে দুলিয়ে চলে, পুরষদেরকে নিজের দিকে আকৃষ্ট করে এবং তারাও পুরষদের দিকে আকৃষ্ট হয়, এরা সকলেই জাহান্নামে যাবে। এরা জান্নাতের গন্ধও পাবে না, যে গন্ধ অনেক অনেক দূর থেকে পাওয়া যাবে।

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ الْحَارِسِ بْنِ جَزْءٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اِنَّ فِى النَّارِ حَيَّاتٍ كَاَمْثَالِ الْبُخْتِ تَلْسَعُ اِحْدَهُنَّ الْلَسْعَةَ فَيَجِدُ حمَْوَتَهَا اَرْبَعِيْنَ خَرِيْفًا وَاِنَّ فِى النَّارِ عَقَارِبَ كَاَمْثَالِ الْبِغَالِ الْمُؤْكَفَةِ تَلْسَعُ اِحْدَهُنَّ الْلَسْعَةَ فَيَجِدُ حَمْوَتَهَا اَرْبَعِيْنَ خَرِيْفًا.

আব্দুল্লাহ ইবনে হারেস ইবনে জাযয়ে (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জাহান্নামের মধ্যে ‘খোরাসানী’ উটের ন্যায় বিরাট বিরাট সাপ আছে। সে সাপ একবার দংশন করলে তার বিষ ও ব্যাথা চল্লিশ বছর পর্যন্ত থাকবে। আর জাহান্নামের মধ্যে এমন সব বিচ্ছু আছে যা পালান বাঁধা খচ্চরের মত। যা একবার দংশন করলে তার বিষ ব্যথার ক্রিয়া চল্লিশ বছর পর্যন্ত অনুভব করবে (আহমাদ, মিশকাত হা/৫৬৯১)। জাহান্নামের সাপ থাকবে, যারা সর্বদা জাহান্নামীকে দংশন করতে থাকবে। আর একবার দংশনের ব্যথা থাকবে ৪০ বছর।

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلاَ أُنَبِّئُكُمْ بِاَهْلِ الْجَنَّةِ الضُّعَفَاءُ الْمَظْلُوْمُوْنَ وَاَهْلُ النَّارِ كُلُّ شَدِيْدٍ جَعْظَرِىٍّ جَوَّاظٍ مُسْتَكْبِرٍ.

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি কি তোমাদেরকে জান্নাতের অধিবাসীদের সংবাদ দিব না? যারা দুর্বল, অত্যাচারিত তারাই জান্নাতের অধিবাসী। আর জাহান্নামের অধিবাসী হচ্ছে প্রত্যেক যারা শক্তিশালী, কঠোর, কর্কশ ভাষী ও অহংকারী (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৪৪৪)

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الحَمِيْمُ لَيُصَبُّ عَلَى رُؤُسِهِمْ فَيَنْفُذُ الْحَمِيْمُ حَتَّى يَخْلُصَ اِلَى جَوْفِهِ فَيَسْلُتُ مَا فِىْ جَوْفِهِ حَتَّى يَمْرُقَ مِنْ قَدَمَيْهِ وَهُوَ الصَّهْرُ ثُمَّ يُعَادُ كَمَا كَانَ.

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, নবী করীম(সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই ফুটন্ত গরম পানি জাহান্নামীদের মাথায় ঢেলে দেওয়া হবে। সে পানি তাদের পেটে পৌঁছে যাবে ফলে যা কিছু পেটে আছে সব টেনে বের করে ফেলবে। এমনকি নাড়ি ভুঁড়ি দু’পায়ের মধ্য দিয়ে গলে গলে বের হয়ে যাবে। তারপর লোকটি পুনরায় ঠিক হয়ে যাবে, যেমন পূর্বে ছিল (সিলসিলা ছাহীহাহ ১৪৫৫)। হাদীছে বুঝা গেল যখন জাহান্নামীদের মাথায় গরম পানি ঢেলে দেওয়া হবে তখন মাথাসহ পেটের নাড়ি ভুড়ি সব গলে নীচে পড়ে যাবে। আর এটাই তার শেষ নয়। পুনরায় তার শরীরে মাংস দিয়ে আবার মাথায় গরম পানি ঢেলে দেওয়া হবে। এভাবেই তার শাস্তি হ’তে থাকবে।

عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ كُنَّا مَعَ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذْ سَمِعَ وَجْبَةً فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَتَدْرُوْنَ مَا هَذَا قَالَ قُلْنَا اللهُ ورَسُوْلُهُ أَعْلَمُ، قَالَ هَذَا حَجَرٌ رُمِيَ بِهِ فِي النَّارِ مُنْذُ سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا فَهُوَ يَهْوِى فِي النَّارِ الأَنْ حَتَّى اِنْتَهَى إِلَى قَعْرِهَا وَفِي رِوَايَةٍ قَالَ هَذَا وَقَعَ فِي أَسْفَلِهَا فَسَمِعْتُمْ وَجْبَتَهَا.

আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একদা আমরা রাসূল(সা.) -এর সঙ্গে ছিলাম। হঠাৎ তিনি একটি শব্দ শুনলেন এবং বললেন, তোমরা কি বলতে পার এটা কিসের শব্দ? আমরা বললাম, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলই ভাল জানেন। নবী করীম (সা.) বললেন, এটা একটা পাথর। আজ থেকে ৭০ বছর পূর্বে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। সেটা এখন জাহান্নামের শেষ প্রান্তে পৌঁছল। অন্য এক বর্ণনায় রয়েছে, নবী করীম(সা.) বললেন, পাথরটি জাহান্নামের নিম্নে পৌঁছল, তোমরা তার শব্দ শুনতে পেলে’ (মুসলিম, ২য় খন্ড, ৩৮১ পৃঃ)

عَنْ عُتْبَةَ بْنِ غَزْوَانَ عَنِ النَّبِىِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنَّ الصَّخْرَةَ الْعَظِيْمَةَ لَتُلْقَى مِنْ شَفِيْرِ جَهَنَّمَ فَتَهْوِى فِيْهَا سَبْعِيْنَ عَامًا مَاتُفْضِى اِلَى قَرَارِهَا-

উতবা ইবনে গায্ওয়ান (রা.) হ’তে বর্ণিত নবী করীম(সা.) বলেছেন, একটি বড় পাথর যদি জাহান্নামের কিনারা হ’তে নিক্ষেপ করা হয়, আর সে পাথর ৭০ বছর নীচে যেতে থাকে তবুও জাহান্নামের শেষ প্রান্তে পৌঁছতে পারবে না (সিলসিলা ছাহীহা হা/১৪৬০)

عَنْ عُتْبَةَ بْنِ غَزْوَانَ قَالَ ذُكِرَ لَنَا اَنّ الْحَجَرَ يُلْقَى مِنْ شَفَةِ جَهَنّمَ فَيَهْوِىْ فِيْهَا سَبْعِيْنَ خَرِيْفًا لَايُدْرِكُ لَهَا قَعَرًا واللهِ لَتُمْلَأَنّ وَلَقْد ذُكِرَ لَنَا اَنّ مَا بَيْنَ مِصْرَاعَيْنِ مِنْ َمَصارِيْعِ الْجَنّةِ مَسِيْرَةُ اَرْبَعِيْنَ سَنَةً وَليَأْتِيَنَّ عَلَيْهَا يَوْمٌ وَهُوَ كَظِيْظٌ مِنَ الزِحَامِ.

উত্বা ইবনে গাযওয়ান হ’তে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমাদের সামনে নবী করীম(সা.) -এর হাদীছ বর্ণনা করা হয় যে, যদি জাহান্নামের উপর হ’তে একটি পাথর নিক্ষেপ করা হয়, সত্তর বছরেও জাহান্নামের নীচে পৌঁছতে পারবে না। আল্লাহর কসম! জাহান্নামের এ গভিরতা কাফের-মুশরিক জিন ও মানুষ দ্বারা পরিপূর্ণ করা হবে এবং এটাও বলা হয়েছে যে, জান্নাতের দরজার উভয় কপাটের মধ্যবর্তী জায়গা ৪০ বছরের দুরত্ব হবে। নিশ্চয়ই একদিন এমন আসবে যে, জান্নাতের অধিবাসী দ্বারা জান্নাতও পরিপূর্ণ হয়ে যাবে (মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮৭)। অত্র হাদীছে জান্নাতের দরজার প্রশস্ততা বুঝা যায় এবং জাহান্নামের গভীরতা অনুভাব করা যায়।