উপদেশ ৩. আল্লাহর ক্ষমা আব্দুর রাযযাক বিন ইউসুফ ১ টি

عَنْ جُنْدَبٍ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَدَّثَ أَنَّ رَجُلًا قَالَ وَاللهِ لَا يَغْفِرُ اللهُ لِفُلَانٍ وَإِنَّ اللهَ تَعَالَى قَالَ مَنْ ذَا الَّذِي يَتَأَلَّى عَلَيَّ أَنْ لَا أَغْفِرَ لِفُلَانٍ فَإِنِّيْ قَدْ غَفَرْتُ لِفُلَانٍ وَأَحْبَطْتُ عَمَلَكَ أَوْ كَمَا قَالَ-

জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, এক ব্যক্তি বলল, আল্লাহর কসম! আল্লাহ অমুককে মাফ করবেন না। তখন আল্লাহ বললেন, কে আছে যে আমাকে কসম দিতে পারে বা আমার নামে কসম খেতে পারে যে, আমি অমুককে ক্ষমা করব না। যাও আমি তাকে ক্ষমা করলাম এবং তোমার আমল নষ্ট করে দিলাম। তিনি অনুরূপ বলেছেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/২৩৩৪; বাংলা মিশকাত হা/২২২৬)

এ হাদীছ দ্বারা বুঝা গেল যে, কোন বড় অপরাধীকে দেখে বলা যাবে না যে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন না। কারণ এতে আল্লাহ রাগান্বিত হন এবং ঐরূপ যে বলে তার আমল নষ্ট করে দেন। প্রত্যেক মাকুষের এ আশা রাখা ভাল হবে যে, যে কোন অপরাধী ক্ষমা পেতে পারে বা পাবে ইনশাআল্লাহ।

عن شَدَّادِ بْنِ أَوسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ سَيِّدُ الاسْتِغْفَارِ أَنْ يَقُولَ العَبْدُ : اللهُمَّ أَنْتَ رَبِّيْ لاَ إلهَ إلاَّ أنْتَ خَلَقْتَنِيْ وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أعُوْذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أبُوْءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وأبُوْءُ بِذَنْبِيْ، فَاغْفِرْ لِيْ، فَإنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوْبَ إلاَّ أنْتَ. مَنْ قَالَهَا مِنَ النَّهَارِ مُوْقِناً بِهَا، فَمَاتَ مِنْ يَوْمِهِ قَبْلَ أَنْ يُمْسِيَ، فَهُوَ مِنْ أهْلِ الجَنَّةِ، وَمَنْ قَالَهَا مِنَ اللَّيْلِ، وَهُوَ مُوْقِنٌ بِهَا، فَمَاتَ قَبْلَ أنْ يُصْبِحَ، فَهُوَ مِنْ أهْلِ الجَنَّةِ-

শাদ্দাদ ইবনু আওস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘ক্ষমা প্রার্থনা করার শ্রেষ্ঠ দো‘আ হল তোমার এরূপ বলা- আল্লাহ তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই, তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা, আমি আমার সাধ্যানুযায়ী তোমার চুক্তি ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার কৃতকর্মের মন্দ পরিণাম হতে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি। আমার প্রতি তোমার অনুগ্রহকে আমি স্বীকার করি এবং আমার অপরাধকে স্বীকার করি। সুতরাং তুমি আমাকে ক্ষমা কর। কেননা তুমি ব্যতীত অপরাধ ক্ষমা করার আর কেউ নেই। অতঃপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, যে ব্যক্তি এ দো‘আর প্রতি বিশ্বাস রেখে দিনে বলবে আর সন্ধ্যার আগে মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে বিশ্বাস করে রাতে বলবে এবং সকাল হওয়ার আগে মারা যাবে সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে’ (বুখারী, মিশকাত হা/২৩৩৫; বাংলা মিশকাত হা/২২২৭)

অত্র দো‘আটি ক্ষমা প্রার্থনার শ্রেষ্ঠ দো‘আ। এতে গুনাহকে স্বীকার করা হয়েছে এবং আল্লাহর অনুগ্রহকেও স্বীকার করা হয়েছে। আর চরম বিনয়ের সাথে ক্ষমা প্রার্থনা করা হয়েছে। এদো‘আ সকালে পড়ে সন্ধ্যার আগে মারা গেলে জান্নাতে যাবে এবং সন্ধ্যায় পড়ে সকালের আগে মারা গেলে জান্নাতে যাবে। কাজেই সকাল-সন্ধ্যা এ দো‘আটি পড়া একান্ত কর্তব্য।

عَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الله تَعَالَى : يَا ابْنَ آدَمَ، إنَّكَ مَا دَعَوْتَنِيْ وَرَجَوْتَنِيْ غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ مِنْكَ وَلاَ أُبَالِي. يَا ابْنَ آدَمَ ، لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوْبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ، ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِيْ غَفَرْتُ لَكَ وَلاَ أُبَالِيْ. يَا ابْنَ آدَمَ، إِنَّكَ لَوْ أتَيْتَنِيْ بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا، ثُمَّ لَقِيْتَنِيْ لاَ تُشْرِكْ بِيْ شَيْئاً، لأَتَيْتُكَ بقُرَابِهَا مَغْفِرَةً-

আনাস (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ তা‘আলা বলেন, হে আদম সন্তান! যতদিন তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার নিকট ক্ষমার আশা রাখবে আমি তোমাকে ক্ষমা করব, তোমার অবস্থা যাই হোক না কেন। আমি কারো পরওয়া করি না। আদম সন্তান তোমার গুনাহ যদি আকাশ পর্যন্তও পৌঁছে অতঃপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা চাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, আমি ক্ষমা করার ব্যাপারে কারও পরওয়া করি না। আদম সন্তান তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার দরবারে উপস্থিত হও এবং আমার সাথে কোন শরীক না করে আমার সামনে আস, আমি পৃথিবী পরিমাণ ক্ষমা নিয়ে উপস্থিত হব’ (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/২৩৩৬; বাংলা মিশকাত হা/২২২৭)

অত্র হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আমরা যদি ক্ষমা চাই আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করবেন। এতে কোন হিসাব করবেন না যে, কত বড় অপরাধীকে ক্ষমা করলাম। পৃথিবীর সমপরিমাণ পাপ হলেও তিনি কারো পরওয়া না করে ক্ষমা করবেন, যদি আমাদের শিরকের গুনাহ না থাকে। কাজেই আমরা বুক ভরা আশা ও মনে ভয়-ভীতি নিয়ে যেকোন সময় ক্ষমা চাইতে পারি।

عَنْ بِلاَلِ بْنِ يَسَارِ بْنِ زَيْدٍ مَوْلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ حَدَّثَنِيْ أَبِيْ عَنْ جَدِّي أَنَّهُ سَمِعَ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقُولُ مَنْ قَالَ : أسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِيْ لاَ إلَهَ إلاَّ هُوَ الحَيُّ القَيُوْمُ وَأتُوْبُ إلَيْهِ، غُفِرَتْ ذُنُوْبُهُ، وإنْ كانَ قَدْ فَرَّ مِنَ الزَّحْفِ-

নবী করীম (ছাঃ)-এর আযাদকৃত গোলাম যায়দের পুত্র ইয়াসার তার পুত্র বেলাল (রাঃ) বলেন, আমার পিতা আমার দাদার মাধ্যমে বলেন যে, আমার দাদা যায়েদ বলেছেন, তিনি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছেন, ‘যে ব্যক্তি বলল আস্তাগফিরুল্লাহাল্লাযী লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম ওয়াতুবু ইলাইহি-আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাই। যিনি ব্যতীত কোন মাবূদ নেই। যিনি চিরঞ্জীব চির প্রতিষ্ঠাতা এবং তাঁর নিকট তওবাকারী। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন যদিও সে জিহাদের মাঠ হতে পালিয়ে গিয়ে থাকে’ (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, আলবানী, মিশকাত হা/২৩৫৩; বাংলা মিশকাত হা/২২৪৪)। অত্র হাদীছ দ্বারা বুঝা যায় যে, অনুশোচনা করে ক্ষমা চাওয়ার জন্য এই দো‘আটি বড় মাধ্যম। এ দো‘আর মাধ্যমে যুদ্ধের মাঠ হতে পালিয়ে যাওয়ার গুনাহও ক্ষমা হয়ে যাবে যা মহাপাপ।

আল্লাহর দয়া ও রহমত কামনা করা প্রত্যেক মানুষের জন্য একান্ত আবশ্যক। আল্লাহর দয়া তাঁর ক্রোধকে অতিক্রম করেছে। এজন্য তাঁর দয়া পাওয়া অতীব সহজ। মানুষ তাঁর সন্তানের প্রতি যত দয়াশীল, আল্লাহ মানুষের প্রতি তার চেয়ে অনেকগুণ বেশী দয়াশীল।