নবী (সা.) এর ছলাত সম্পাদনের পদ্ধতি সালাত বিষয়ে বিস্তারিত মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দিন আলবানী (রহ.) ১ টি
وجوب الطمأنينة في الركوع রুকুতে ধীরস্থিরতা অবলম্বন ফরয

নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) শান্ত শিষ্টভাবে রুকু করতেন। আর ছলাতে ক্ৰটিকারীকেও এ বিষয়ে নির্দেশ দান করেছেন। যেমনটি পূর্বের অনুচ্ছেদের শুরুতে উল্লেখ হয়েছে। তিনি বলতেনঃ

أَتِمُّوا الرُّكُوعَ وَالسُّجُودَ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنِّي لَأَرَاكُمْ مِنْ بَعْدِ ظَهْرِي إِذَا مَا رَكَعْتُمْ وَإِذَا مَا سَجَدْتُمْ

তোমরা রুকু এবং সাজদা পরিপূর্ণভাবে আদায় করা। ঐ আল্লাহর শপথ যার হাতে আমার জীবন রয়েছে আমি তোমাদেরকে পিছন থেকে[1] দেখে থাকি যখন তোমরা রুকু ও সাজদাহ কর।[2]

رای رجلا لایتم رکوعه، وینقر في سجوده و هو یصلي، فقال : لومات هذا علی حاله هذه، مات علی غیر ملة محمد (ینقر صلاته کما ینقر الغراب الدم ) مثل الذي لایتم رکوعه وینقرفي سجوده، مثل الجائع الذي يأكل التمرة والتمرتين لايغنيان عنه شيئا

তিনি এক ব্যক্তিকে ছালাত রত অবস্থায় দেখতে পেলেন, সে তার রুকু পূর্ণভাবে আদায় করছে না এবং সাজদায় ঠোকর দিচ্ছে। তিনি বললেনঃ যদি এই ব্যক্তি তার এই অবস্থায় মারা যায় তবে সে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ধর্মের উপর মারা যাবে না। কাক যেমন রক্তের মধ্যে ঠোকর দিয়ে থাকে সেও তদ্রুপ তার ছালাতে ঠোকর দিচ্ছে। যে ব্যক্তি পূর্ণভাবে রুকু করে না এবং সাজদায় ঠোকর দেয় তার দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ ক্ষুধার্তের ন্যায় যে একটি অথবা দুটি খেজুর খায় কিন্তু তাতে মোটেও তার ক্ষুধা নিবারণ হয় না।[3]

আবু হুরাইরা (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ

نهاني خليلي ﷺ أن أنقر في صلاتي نقر الديك، وأن التفت التفات الثعلب، وأن أقعي كإقعاء القرد

আমার একান্ত বন্ধু (নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ছালাতে মোরগের ন্যায় ঠোকর দিতে, শিয়ালের ন্যায় এদিক ওদিক তাকাতে ও বানরের ন্যায় বসতে নিষেধ করেছেন।[4]

তিনি বলতেনঃ

أسوأ الناس سرقة الذي یسرق من صلاته، قالوا يارسول الله ! وکیف یسرق من صلاته؟ قال : لایتم رکوعها و سجودها

সর্বাপেক্ষা নিকৃষ্ট চোর হচ্ছে সেই ব্যক্তি যে ছালাতে চুরি করে। ছাহাবাগণ জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসূল! ছালাতে আবার কিভাবে চুরি করবে? উত্তরে তিনি বললেনঃ সে ছালাতের রুকু ও সাজদাগুলো পূর্ণ করেনা।[5]

وکان یصلي، فلمح مؤخرعینه الی رجل لایقیم صلبه في الرکوع والسجود، فلما انصرف قال : يامعشر المسلمين ! إنه لاصلاة لمن لايقيم صلبه في الرکوع والسجود

তিনি এক সময় ছালাত পড়া অবস্থায় আড় চোখে একটি লোককে দেখতে পেলেন যে, সে তার মেরুদণ্ডকে রুকু ও সাজদায় সোজা করছেনা। ছালাত শেষে তিনি বললেনঃ হে মুসলিম সম্প্রদায়, যে ব্যক্তি রুকু ও সাজদায় স্বীয় মেরুদণ্ডকে সোজা করেনা তার কোন প্রকারেই ছালাত হবে না।[6] অপর এক হাদীছে বলেছেনঃ ছালাত আদায়কারীর ছালাত ততক্ষণ পর্যন্ত যথেষ্ট হবে না। যতক্ষণ রুকু ও সাজদায় স্বীয় পিঠ সোজা না করবে।[7]

[1] এখানে بعد শব্দটি وراء শব্দের অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমনটি অপর হাদীছে এসেছে। আমি বলতে চাইঃ এই দেখা প্রকৃতই ছিল যা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মুজিযা ছিল। এটা শুধু সালাতাবস্থার জন্য নির্দিষ্ট। সর্বাবস্থায় এমনটি হওয়ার উপর কোন প্রমাণ বহন করে না।

[2] বুখারী ও মুসলিম।

[3] আবু ইয়ালা স্বীয় মুসনাদে’ (৩৪০,৩৪৯/১), আজুররী ‘আরবাইন’ গ্রন্থে বাইহাকী ও ত্বাবারানী (১/১৯২/১) আযযিয়া ‘আলমুনতাকা মিনাল আহাদীছিছ ছিহাহা ওয়াল হিসান’ গ্রন্থে (২৭৬/১), ইবনু আসাকির (২/২২৬/২, ৪১৪/১, ৮/১৪/১ ও ৭৬/২) হাসান সনদে। একে ইবনু খুযাইমাহ ছহীহ বলেছেন (১/৮২/১) হাদীছের অতিরিক্ত অংশ ছাড়া প্রথম অংশের উপর মুরসাল সনদে শাহিদ (সাক্ষ্যমূলক) বৰ্ণনা পাওয়া যায় যা ইবনু বাত্তাহ এর ‘আল ইবানাহ’ গ্রন্থে রয়েছে। (৫/৪৩/১)।

[4] ত্বায়ায়ালিসী, আহমাদ, ইবনু আবী শাইবাহ। এটা হাসান হাদীছ, যেমনটি হাফিয আব্দুল হাক ইশবিলীর ‘আহকাম’ নামক গ্রন্থের টীকায় আমি আলোচনা করেছি।

[5] ইবনু আবী শাইবাহ (১/৮৯/২) ত্বাবারানী, হাকিম— এবং তিনি একে ছহীহ বলেছেন ও যাহাবী তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

[6] ইবনু আবী শাইবাহ (১/৮৯/১) ইবনু মাজাহ ও আহমাদ, ছহীহ সনদে। আছ ছাহীহা (২৫৩৬)

[7] আবু আওয়ানাহ, আবু দাউদ ও সাহিমী (৬১) এবং দারাকুতনী একে ছহীহ বলেছেন।