নবী (সা.) এর ছলাত সম্পাদনের পদ্ধতি সালাত বিষয়ে বিস্তারিত মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দিন আলবানী (রহ.) ১ টি
قراءته ﷺ بعد (الفاتحة) সূরা ফাতিহা পাঠের পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কিরা'আত

তিনি সূরা ফাতিহা পাঠান্তে অপর একটি সূরা পাঠ করতেন। কখনও তিনি কিরা’আত দীর্ঘ করতেন আবার কখনও কারণ বশত সংক্ষিপ্ত করতেন। যেমন সফর, কাশি, রোগ অথবা (ছালাতে উপস্থিত মহিলার) শিশুর কান্নার কারণে। আনাস বিন মালিক (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা ফজরের ছালাত সংক্ষেপ[1] করলেন। অপর এক হাদীছে আছেঃ তিনি ফজরের ছালাতে কুরআনের সর্বাপেক্ষা সংক্ষিপ্ত দু'টি সূরা পাঠ করলেন, জিজ্ঞাসা করা হল- হে আল্লাহর রাসূল! আপনি কেন এরূপ সংক্ষেপ করলেন? প্রতি উত্তরে তিনি বললেনঃ আমি একটি শিশুর কান্না শুনতে পেয়ে অনুমান করলাম যে, তার মা হয়ত আমাদের সাথে ছালাত পড়ছে, এজন্য শিশুটির মাকে তার জন্য অবসর দেয়ার ইচ্ছায় এরূপ করলাম।[2] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ আমি ছালাতে প্ৰবেশকালে তাকে দীর্ঘ করার ইচ্ছা রাখি, অতঃপর শিশুর কান্না শুনে সংক্ষিপ্ত করে ফেলি। কেননা আমি তার প্রতি মায়ের গভীর উদ্বিগ্নতার কথা জানি।[3] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সূরার প্রথম থেকে কিরা’আত শুরু করতেন এবং অধিকাংশ সময়ে তা পূর্ণ করতেন।[4] তিনি বলতেনঃ রুকু ও সাজদার পূর্বে প্রত্যেক সূরাকে তার অংশ (পূর্ণাঙ্গতা) দাও (অর্থাৎ শেষ করে)।[5] অপর শব্দে আছে; প্রত্যেক সূরার জন্য রাকাআত রয়েছে।[6] কখনো তিনি এক সূরাকে দুই রাকা’আতে ভাগ করে পড়তেন।[7] আবার কখনো এক সূরাকেই দ্বিতীয় রাকাআতে পুনরাবৃত্তি করতেন।[8]

কখনো তিনি একই রাকাআতে দুই বা ততোধিক সূরা পাঠ করতেন।[9] জনৈক আনছারী ছাহাবী কুবা মসজিদে তাদের (কুবাবাসীদের) ইমামত করতেন। তিনি কিরা’আত পাঠের[10] পূর্বে قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ (ইখলাছ) সূরাটি

পাঠ করতেন। অতঃপর তার সাথে অপর আরেকটি সূরা পাঠ করতেন। প্রত্যেক রাকাআতে এরূপ করতেন। ছাহাবাগণ এই নিয়ে তাঁর সাথে কথা বললেন যে, আপনি সূরা ইখলাছ দ্বারা কিরা'আত শুরু করেন অতঃপর যথেষ্ট মনে না করে অপর আরেকটি সূরা পাঠ করেন। (বরং) হয় আপনি সূরা ইখলাছই পড়বেন আর না হয় এ ছাড়া অন্য সূরা পাঠ করবেন। তিনি বললেনঃ আমি তা ছাড়তে পারবনা। এই সূরাসহ (ছালীতু পড়ানো) যদি তোমাদের ভাল লাগে তবে আমি তোমাদের ইমামত করতে পারি, আর যদি তোমাদের খারাপ লাগে তবে আমি তোমাদের থেকে বিদায় গ্ৰহণ করব। বস্তুতঃ তাদের দৃষ্টিতে ওদের মধ্যে এই ছাহাবীই সর্বোত্তম ব্যক্তি ছিলেন। তাই তিনি ছাড়া অন্য কেউ তাদের ইমাম হওয়াকে তাঁরা অপছন্দ করতেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাদের কাছে আগমন করলে তাঁরা বিষয়টি খুলে বললেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ হে অমুক ব্যক্তি! তোমার সাথীদের নির্দেশ মানতে তোমার বাধা কী? এবং প্রত্যেক রাকাআতে তোমাকে এই সূরা পড়তে কোন জিনিসটি উদ্ধৃদ্ধ করেছে? তিনি উত্তরে বললেনঃ আমি সূরাটিকে ভালবাসি। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ ঐ সূরাটির ভালবাসা তোমাকে জান্নাতী বানিয়ে দিয়েছে।[11]

[1] এখানে جوز শব্দের অর্থ হচ্ছে হালকা করলেন, এ হাদীছ ও এর অর্থবহ হাদীছগুলো শিশুদেরকে মসজিদে নিয়ে আসার বৈধতার প্রমাণ বহন করে। পক্ষান্তরে সচরাচর মানুষের মুখে যে হাদীছ শুনা যায়- جنبوا مساجدكم صبيانكم অর্থঃ তোমরা তোমাদের শিশুদেরকে মসজিদ থেকে দূরে রাখো। এ হাদীৰ্ছটি দূর্বল বা অশুদ্ধ। সবার ঐকমত্যে এটা প্রমাণ যোগ্য নয়। যারা একে যাঈফ বলেছেন তাদের মধ্যে আল-আসকালানী, আল-বূসিরী। আব্দুল হক আর-ইশবিলী বলেন- এর কোন ভিত্তি নেই।

[2] বিশুদ্ধ সনদে আহমাদ, অপর হাদীছটি বর্ণনা করেছেন ইবনু আবী দাউদ “আল-মাছহিফ” গ্রন্থে (৪/১৪/২)।

[3] বুখারী ও মুসলিম।

[4] এর উপর অনেক হাদীছ প্রমাণ বহন করে যেগুলো পরবর্তীতে আসবে।

[5] ইবনু আবী শাইবাহ (১/১০০/১) আহমদ, আব্দুল গানী আল মাকদিসী, বিশুদ্ধ সুনদে “সুনান” গ্রন্থে (৯/২)।

[6] বিশুদ্ধ সনদে ইবনু নছর ও তহাবী। আমার (আলাবানীর) নিকট হাদীছের অর্থ হচ্ছে- প্রত্যেক রাকাআতে একটি সূরা পাঠ করা যাতে রাকাআতের পূর্ণ হক্ আদায় হয়। এখানে আদেশ দ্বারা শ্রেয়মূলক আদেশ উদ্দেশ্য, অনিবাৰ্যমূলক নয়। অর্থাৎ এরূপ করাই শ্ৰেয় | যার প্রমাণ পরবর্তীতে আসছে।

[7] আহমাদ ও আবু ইয়ালা দুটি সূত্রে। “ফজরের ছালাতে কিরাত" অধ্যায় দ্রষ্টব্য।

[8] যেমনটি করেছিলেন ফজরের ছলতে, আর তা অনতি দূরেই আসছে।

[9] এর ব্যাখ্যা ও উদ্ধৃতি অনতিদূরেই আসছে।

[10] অর্থাৎ ফাতেহা পাঠের পর যে সূরাটি পাঠ করতে চাইতেন তার পূর্বে।

[11] বুখারী সনদ বিহীনভাবে, তিরমিযী অবিচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণনা করে একে ছহীহ বলেছেন।