নবী (সা.) এর ছলাত সম্পাদনের পদ্ধতি সালাত বিষয়ে বিস্তারিত মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দিন আলবানী (রহ.) ১ টি
ركنية سورة {الفاتحة} وفضلها সূরা ফাতিহার রুকন হওয়া ও তার ফযীলতসমূহ

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই সূরাটির মর্যাদা খুব বড় করে দেখাতেন। তিনি বলতেনঃ

لاصلاة لمن لا يقرأ فيها بفاتحة الكتاب فصاعدا

অর্থঃ যে ব্যক্তি সূরা ফাতিহা ও তদূর্ধ্ব কিছু পড়বে না, তার ছলাত হবে না।[1]

অন্য শব্দে আছে,

لاتجزىء صلاة لا يقرأ الرجل فيها بفاتحة الكتاب

অর্থঃ ঐ ছলাত যথেষ্ট নয় যাতে মুছলী ব্যক্তি সূরা ফাতিহা পাঠ করে না।[2]

কখনও বলতেন

من صلى صلاة لم يقرأ فيها بفاتحة الكتاب فهي خداج هي خداج هي خداج غير تمام

অর্থঃ যে ব্যক্তি এমন ছলাত পড়ল যাতে সূরা ফাতিহা পড়ে নাই সে ছলাত ত্রুটিপূর্ণ[3] ত্রুটিপূর্ণ তথা অসম্পূর্ণ।[4] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেনঃ

قال الله تبارك وتعالى: قسمت الصلاة بيني وبين عبدي نصفين: فنصفها لي ونصفها لعبدي ولعبدي ما سأل

আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তা'আলা বলেছেনঃ আমি ছলাতকে[5] আমার মধ্যে ও আমার বান্দার মধ্যে দু’ভাগে ভাগ করেছি। তাই এর অর্ধেক আমার এবং অপর অর্ধেক আমার বান্দার। আর আমার বান্দাহ যা চাইবে তাই তাকে দান করা হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ তোমরা এটি পড় (কারণ) বান্দাহ الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ বললে আল্লাহ পাক বলেনঃ আমার বান্দাহ আমার প্রশংসা করল। বান্দাহ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ বললে আল্লাহ পাক বলেনঃ আমার বান্দাহ আমার গুণকীর্তন করল। বান্দহ مَالِكِ يَوْمِ الدِّينِ বললে আল্লাহ তা'আলা বলেনঃ আমার বান্দাহ আমার মাহাত্ম্য বর্ণনা করল। বান্দাহ إِيَّاكَ نَعْبُدُ وَإِيَّاكَ نَسْتَعِينُ বললে আল্লাহ বলেনঃ এটা আমার ও আমার বান্দার মাঝে এবং আমার বান্দাহ যা চাইবে তাই পাবে। বান্দাহ اهْدِنَا الصِّرَاطَ الْمُسْتَقِيمَ صِرَاطَ الَّذِينَ أَنْعَمْتَ عَلَيْهِمْ غَيْرِ الْمَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ وَلَا الضَّالِّينَ বললে আল্লাহ পাক বলেনঃ আমার বান্দার জন্য এগুলো সবই আর সে যাই চাবে তাই পাবে।[6]

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ মহামহিম আল্লাহ তাওরাত ও ইঞ্জিলে কুরআনের মূল (ফাতিহা) সমতুল্য কোন সূরা অবতীর্ণ করেন নাই, এটাই (কুরআনের উল্লেখিত) সাবউল মাছানী বা পুনঃ পুনঃ পঠিতব্য সাত আয়াত[7] বিশিষ্ট সূরা ও সুমহান কুরআন যা আমাকে দান করা হয়েছে।[8]

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছালাতে ক্ৰটিকারীকে ছালাতে এই সূরা পড়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন।[9] তবে যে ব্যক্তি এটা মুখস্থ করতে অপারগ। তাকে বলেছেনঃ তুমি এই দু'আ পড়বে[10]

سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلا إِلَهَ إِلا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ وَلا حَوْلَ وَلا قُوَّةَ إِلا بِاللَّهِ

তিনি ছালাতে ক্ৰটিকারীকে বলেছিলেন কুরআন পড়া জানলে তা পাঠ করবে নচেৎ اللَّهُ أَكْبَرُ، الْحَمْدُ لِلَّهِلا إِلَهَ إِلا اللَّهُ পড়বে।[11]

[1] বুখারী, মুসলিম, আবু আওয়ানাহ, বাইহাকী। আর এটি “ইরওয়া” (৩০২)-তে উদ্ধৃত

হয়েছে।

[2] দারাকুতনী একে ছহীহ বলেছেন, ইবনু হিব্বানও স্বীয় “ছহীহ” গ্রন্থে। এটি পূর্বোক্ত গ্রন্থে অর্থাৎ “ইরওয়া” (৩০২)-তে রয়েছে।

[3] خداج শব্দের ব্যাখ্যা হাদীছের শেষাংশেই রয়েছে যা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) غير تمام শব্দ দ্বারা করেছেন অর্থাৎ অসম্পূর্ণ।

[4] মুসলিম ও আবূ আওয়ানাহ।

[5] এখানে ছলাত দ্বারা সূরা ফাতিহাকে বুঝানো হয়েছে এটা সম্মানার্থে পূর্ণাঙ্গ বলে একাংশ উদ্দেশ্য নেয়ার পর্যায়ভুক্ত।

[6] মুসলিম, আবু আওয়ানাহ্ ও মালিক সাহমীর লিখিত তারিখ জুরজান (১৪৪) এ জারীর রাযিআল্লাহু আনহুর বর্ণিত হাদীছ থেকে এর সহযোগী বৰ্ণনা রয়েছে।

[7] বাজী বলেনঃ একথা দ্বারা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর এই وَلَقَدْ آتَيْنَاكَ سَبْعًا مِنَ الْمَثَانِي وَالْقُرْآنَ الْعَظِيمَ অর্থঃ অবশ্যই আমি তোমাকে (হে নবী!) পুনঃ পুনঃ পঠিতব্য সাত আয়াত এবং সুমহান কুরআন দান করেছি। সাত এজন্য বলা হল যে, এতে সাতটি আয়াত রয়েছে, আর পুনঃ পঠিতব্য এজন্য বলা হল যে, একে প্রত্যেক রাকাআতে পুনঃ পুনঃ পাঠ করা হয়। আর তাকে মহান কুরআন এজন্য বলা হয় যে, এই নামে তার বিশেষত্ব প্রকাশ করা উদ্দেশ্য বস্তুত কুরআনের সবটুকুই মহান কুরআন। এর দৃষ্টান্ত যেমন কা'বা শরীফকে আল্লাহর ঘর নামে আখ্যায়িত করা হয়ে থাকে। অথচ সব ঘরই আল্লাহর। কিন্তু শুধু তার বিশেষত্ব ও মর্যাদা বুঝানোর জন্যেই (বাইতুল্লাহ) বলা হয়।

[8] নাসাঈ, হাকিম এবং তিনি একে ছহীহ বলেছেন আর যাহাবী তাতে একমত পোষণ করেছেন।

[9] বুখারী, ছহীহ সনদে “জুযুল কিরাত খালফিল ইমাম” গ্রন্থে।

[10] আবু দাউদ, ইবনু খুযাইমা (১/৮০/২), হাকিম, ত্বাবারানী, ইবনু হিব্বান- তিনি ও হাকিম একে ছহীহ বলেছেন এবং যাহাবী তাতে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। এটি ইরওয়া গ্রন্থে (৩০৩) রয়েছে।

[11] আবু দাউদ, তিরমিযী এবং তিনি একে হাসান বলেছেন, এর সনদ ছহীহ “সহীহ আবু দাউদ” (৮০৭)।