নবী (সা.) এর ছলাত সম্পাদনের পদ্ধতি সালাত বিষয়ে বিস্তারিত মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দিন আলবানী (রহ.) ১ টি
النظر الى موضع السجود الخشوع সাজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা ও একাগ্ৰতা

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছলাত অবস্থায় মাথা নীচু করে যমীনের দিকে দৃষ্টি রাখতেন। তিনি যখন কা'বা ঘরে প্রবেশ করেন তখন থেকে বেরিয়ে আসা পর্যন্ত তাঁর দৃষ্টি সাজদার স্থানচ্যুত হয়নি।[1]

তিনি বলেন

لا يَنْبَغِي أَنْ يَكُونَ فِي الْبَيْتِ شَيْءٌ يَشْغَلُ الْمُصَلِّي

ঘরে এমন কোন বস্তু থাকা উচিত নয় যা মুছাল্লীকে অন্যমনস্ক করতে পারে।[2]

তিনি আকাশের দিকে দৃষ্টি উঠাতে নিষেধ করতেন।[3] এমনকি এ বিষয়ে তাকিদ দিয়ে বলেছেনঃ

لینتهین أقوام يرفعون آبصارهم الی السماء في الصلاة أو لاترجع إليهم وفي رواية : أو لتخطفن أبصارهم

যারা ছলাতাবস্থায় আকাশের দিকে তাকায় তারা যেন এথেকে বিরত হয়। অন্যথায় তাদের চক্ষু ফিরে পাবে না। অপর বর্ণনানুযায়ী তাদের চক্ষু কেড়ে নেয়া হবে।[4]

অন্য হাদীছে রয়েছেঃ

فإذا صليتم فلا تلتفتوا فإن الله ينصب وجهه لوجه عبده في صلاته ما لم يلتفت

তোমরা যখন ছলাত পড়বে তখন এদিক সেদিক তাকাবে না, কেননা বান্দাহ যতক্ষণ পর্যন্ত এদিক সেদিক না তাকায় ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তার চেহারাকে বান্দার চেহারার প্রতি নিবদ্ধ রাখেন।[5] তিনি এদিক সেদিক তাকানো সম্পর্কে বলেনঃ

اخْتِلاَسٌ يَخْتَلِسُهُ الشَّيْطَانُ مِنْ صَلاَةِ الْعَبْدِ

এ হচ্ছে বান্দার ছলাতে শয়তানের ছিনতাই।[6]

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আরো বলেনঃ আল্লাহ তা’আলা ততক্ষণ পর্যন্ত বান্দাহর ছলাতাবস্থায় তার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখেন যতক্ষণ সে এদিক-ওদিক না তাকায়। তাই যখন সে মুখ ফিরিয়ে নেয় তখন আল্লাহও তার থেকে বিমুখ হয়ে যান।[7]

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তিনটি কাজ নিষেধ করেছেনঃ মোরগের মতো ঠোকর দেয়া, কুকুরের মত বসা ও শিয়ালের মতো এদিক-ওদিক তাকানো।[8]

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ চির বিদায় গ্রহণকারীর ন্যায় ছলাত পড় যেন তুমি তাঁকে (আল্লাহকে) দেখছি আর যদি তাঁকে দেখতে না পাও তবে তিনি তো তোমাকে দেখছেন।[9] তিনি আরো বলেনঃ ফরয ছলাতের সময় উপস্থিত হলে যে ব্যক্তি সুন্দরভাবে তার জন্য ওযু করে এবং সুন্দরভাবে তার একাগ্রতা ও রুকু (ইত্যাদি) পালন করে সেই ছলতে তার পূর্বেকৃত (ছাগীরা) গুনাহসমূহের কাফফারা হয়ে যায়, যতক্ষণ না কাবীরা গুনাহ করবে। আর এ ধারা সারা জীবন চলতে থাকবে।[10]

একদা তিনি রেখা অঙ্কিত একটি পশমী কাপড়ে ছলাত আদায় করেন, এর ফলে একবার তার রেখাগুলোর প্রতি দৃষ্টি পড়ে যায়। অতঃপর ছলাত শেষে বললেন, আমার এই কাপড়টি আবু জাহম এর নিকট নিয়ে যাও এবং তার রেখাবিহীন মোটা কাপড়টি নিয়ে আসা। কেননা এইমাত্ৰ কাপড়টি আমার ছলতে বিগ্নতা সৃষ্টি করেছে। অপর বর্ণনায় আছেঃ আমি ছালতাবস্থায় তার রেখার দিকে দৃষ্টি দেয়ার ফলে এটি আমাকে বিভ্রান্ত করে ফেলার উপক্রম হয়েছিল।[11]

“আইশা (রাযিয়াল্লাহু আনহা)-এর একটি কাপড়ে ছবি ছিল সে কাপড়টি سهوة ছোট্র কামরা[12] পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর দিকে মুখ করে ছলাত পড়ছিলেন তাই তিনি বলেছিলেন একে আমার সম্মুখ থেকে সরিয়ে ফেল। কেননা এ ছবিগুলো ছলাতের ভিতর আমার সামনে ভেসে উঠে।[13]

তিনি আরো বলতেনঃ খাবারের উপস্থিতিতে কোন ছলাত নেই, আর নেই মলমূত্রের চাপের অবস্থায়।[14]

[1] বাইহাকী, হাকিম-এবং তিনি একে ছহীহ বলেছেন আর তা যথার্থই। প্রথম হাদীছের পক্ষে দশজন ছাহাবীর হাদীছ সাক্ষ্য বহন করে যা ইবনু আসাকির বর্ণনা করেছেন (১৭/২০২/২) আরো দেখুন ইরওয়া কিতাবে (৩৫৪)। জ্ঞাতব্যঃ এই হাদীছদ্বয় থেকে বুঝা যায় যে, যমীনে সাজদার স্থানে দৃষ্টি রাখা সুন্নাত। অতএব কিছু সংখ্যক মুছল্লী যারা চক্ষু বন্ধ করে ছলাত পড়ে, এ হচ্ছে ঠাণ্ডা পরহেযগারী। বস্তুতঃ মুহাম্মদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াল্লাম)-এর আদর্শই হচ্ছে সর্বোত্তম আদর্শ।

[2] ছহীহ সনদে আবু দাউদ ও আহমাদ। এটি “ছহীহ আবু দাউদ” গ্রন্থে রয়েছে (১৭৭১) হাদীছে। উল্লেখিত الْبَيْت তথা ঘর শব্দ দ্বারা কা'বা ঘর বুঝানো উদ্দেশ্য। যেমন হাদীছের প্ৰেক্ষাপট নির্দেশ করছে।

[3] বুখারী, আবু দাউদ।

[4] বুখারী, মুসলিম ও সাররাজ।

[5] তিরমিযী, হাকিম, তারা উভয়ই একে ছহীহ বলেছেন। “ছহীহ আত-তারগীব” (৩৫৩)।

[6] বুখারী ও আবু দাউদ।

[7] আবু দাউদ ও অন্যান্যগণ, একে ইবনু হিব্বান ও ইবনু খুযাইমা ছহীহ বলেছেন। “ছহীহ আত-তারগীব” (৫৫৫)

[8] আহমদ, আবু ইয়ালা “সহীহ আত-তারগীব” (৫৫৬)।

[9] আল মুখাল্লাছ কী আহাদীছ মুনতাকাহ, ত্বাবরানী, রুয়ানী, যিয়া “আল মুখতারাহ” ইবনু মাজাহ, আহমাদ, ইবনু আসাকির ফকীহ হাইসামী “আসনাল মাত্বা-লিব” গ্রন্থে একে ছহীহ বলেছেন।

[10] মুসলিম।

[11] বুখারী, মুসলিম ও মালিক, এটি উদ্ধৃত হয়েছে আল-ইরওয়াতে (৩৭৬)।

[12] سهوة বলা হয় যমীনের সামান্য ঢালু অবস্থানে অবস্থিত ছোট্র ঘরকে যা সামগ্ৰী ভাণ্ডার ও গুদাম সদৃশ “নিহায়াহ”।

[13] বুখারী, মুসলিম, আবু ‘আওয়ানাহ। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এই ছবিগুলোকে ছিড়ে ফেলা ও নস্যাৎ করার আদেশ না দিয়ে কেবল সরিয়ে নিতে বলার কারণ এই যে, এগুলো প্রাণীর ছবি ছিল না। (আল্লাহই অধিক জ্ঞাত)। বুখারী ও মুসলিমের বিভিন্ন বর্ণনায় অন্যান্য ছবি নস্যাৎ করে ফেলার কথা এসেছে। বিস্তারিত জানার জন্য “ফাতহুল বারী” (১০/৩২১) ও “গাইয়াতুল মারাম ফী তাখরীজি আহাদীছিল হালালি ওয়াল হারাম” (১৩১-১৪৫নং) হাদীছের পর্যালোচনা দ্রষ্টব্য।

[14] বুখারী ও মুসলিম।