প্রতিটিই মানুষেরই একজন প্রভুর প্রয়োজন- সে এটা স্বীকার করুক বা না-ই করুক। আর প্রভুর অবশ্যই সর্বশক্তিমত্তা, ক্ষমতা, ধনাট্যতা ও চিরঞ্জীবতা এ ধরনের কিছু গুণ থাকা উচিত। যার এসব গুণ ও অন্যান্য পরম ও নিখুঁত গুণ আছে তিনি হলেন সমগ্র বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহ। অতএব, একনিষ্ঠ সত্যান্বেষী ব্যক্তি আল্লাহ অভিমুখী হয় এবং তারপর আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসে শান্তি খুঁজে পায়। তিনি (আল্লাহ) দুর্বল ও আশ্রয়প্রার্থীদের আশ্রয়।

“তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট সাহায্য চাচ্ছিলে, তাই তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন- সে কথা স্মরণ কর।” (৮-সূরা আনফালঃ আয়াত-৯)

“তিনি সকলকে রক্ষা করেন, পক্ষান্তরে তাকে রক্ষা করতে হয় না। (আল্লাহ যদি কাউকে রক্ষা করেন তবে কেউ তাকে শাস্তি দিতে পারে না বা কেউ-তার ক্ষতি করতে পারে না। আর আল্লাহ যদি কাউকে শায়েস্তা করেন বা কারো ক্ষতি করেন তবে কেউ তাকে রক্ষা করতে পারে না।) (২৩-সূরা মূমিনুনঃ আয়াত-৮৮)

“যখন তাদের জন্য তিনি (আল্লাহ) ছাড়া অন্য কোন অভিভাবক এবং সুপারিশকারী থাকবে না।” (৬-সূরা মায়িদাঃ আয়াত-৫১)

যে ব্যক্তি আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করে, যদিও সে তাকে (আল্লাহকে) কিছু পরিমাণে ভালোবাসে তবুও সে ব্যক্তি ঐ ব্যক্তির চেয়েও অনেক বেশি খারাপ যে নাকি বিষাক্ত খাবার খেতে মজা পায়।

“যদি এতদুভয়ে (আসমানে ও জমিনে) আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ থাকত তবে অবশ্যই এতদুভয় (আসমান ও জমিন) ধবংস হয়ে যেত। অতএব তারা তার সম্বন্ধে যে মিথ্যা বর্ণনা দেয়, আরশের অধিপতি আল্লাহ তা থেকে পবিত্র।” (২১-সূরা আল আম্বিয়াঃ আয়াত-২২)

আমরা ক্ষণস্থায়ী, তিনি চিরস্থায়ী। আমরা দুর্বল তিনি সর্বশক্তিমান। আমরা গরীব, তিনি সর্বাপেক্ষা ধনী। এই কাঙ্ক্ষিত সম্পর্কের দ্বারাই দেখা যায় যে, আমাদের আল্লাহর প্রয়োজন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে তাঁর প্রতিপালক ও প্রভু হিসেবে গ্রহণ করে না, সে খুব সম্ভব আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে দেবতা হিসেবে গ্রহণ করবে। উদাহরণস্বরূপ সে নানান ছবিকে, প্রেমের বস্তুসমূহকে বা নিজের আকাঙ্ক্ষাসমূহকে নিজের দেব-দেবী হিসেবে গ্রহণ করবে এবং তখন সে মিথ্যা দেব-দেবীর গোলাম ও চাকর হয়ে যাবে।

أَرَأَيْتَ مَنِ اتَّخَذَ إِلَٰهَهُ هَوَاهُ

“তুমি কি তাকে দেখেছ যে নিজের কামনা-বাসনাকে নিজের ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছে?” (২৫-সূরা আল ফুরকানঃ আয়াত-৪৩)

“অথচ তারা তাকে (আল্লাহকে) ছাড়া অন্যান্য দেব-দেবী গ্রহণ করেছে।” (২৫-সূরা আল ফুরকানঃ আয়াত-৩)

হাদীসে বর্ণিত আছে যে,

يا حصين كم تعبد؟ قال اعبد سبعة ستة فى الارض وواحدا فى السماء قال فمن لرغبك ولرهبك قال الذى فى السماء قال فاترك التى فى الارض واعبد الذى فى السماء

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একজনকে জিজ্ঞেস করলেন, “তুমি ক’জনের ইবাদত কর?” লোকটি উত্তর দিল, “আমি সাতজনের ইবাদত করি। ছয়জন জমিনে, একজন আসমানে।” নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-জিজ্ঞাসা করলেন, তাদের মধ্য থেকে কার কাছ থেকে তুমি কোন পাওয়ার আশা কর ও কাকে তুমি ভয় কর?” সে উত্তর দিল, “আকাশে যিনি আছেন।” নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “তাহলে জমিনেরগুলোকে ত্যাগ করে আসমানে যিনি আছেন, তার ইবাদত কর।”

জেনে রাখুন যে, আল্লাহর সাথে শরীক সাব্যস্ত না করে তার ইবাদত করা বান্দার যে প্রয়োজন তা বায়ু গ্রহণের প্রয়োজনের চেয়েও বেশি জরুরি।

ব্যক্তির বাস্তবতা (অস্তিত্ব) তার হৃদয়ে ও অন্তরে থাকে। আল্লাহর ইবাদত ছাড়া কারো হৃদয় সুস্থ নয়, আত্মাও সুস্থ নয়। একজন কবি বলেন-

ومن لقاء الله قد أحبا ٭ كان له الله أشد حبا

وعكسه الكاره فالله اسأل ٭ رحمته فضلاً ولا تتكل

ভাবাৰ্থঃ “যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করতে চায়, আল্লাহ তাকে অধিক ভালোবাসেন। আর যে আল্লাহকে ভালোবাসে না তার জন্য বিপরীত অবস্থা (অর্থাৎ, আল্লাহও তাকে ভালবাসেন না।) অতএব, বরকতের জন্য আল্লাহর নিকট রহমত চাও। কিন্তু বসে থেকো না (বরং আমলে সালেহ কর)।”

যদিও কেউ মহান আল্লাহ ছাড়া অন্যের মাঝে সন্তুষ্টি বা আনন্দ খুঁজে পায় তবে তা টিকবে না। কেননা যখন কেউ কোন বস্তু বা ব্যক্তির প্রতি বিরক্ত হয়ে যায় তখন সে অন্যটা তালাশ করে। সে এ লোকের নিকট এক সময় কল্যাণ খুঁজে পাবে এবং অন্য সময় একই ব্যক্তির নিকট সে বিরক্তবোধ করবে। আসলে সে এমনকি তাকে ঘৃণাও করতে পারে, যে নাকি এক সময়ে তাকে চরম আনন্দ দিয়েছে। সবার জন্য, সর্বাবস্থায় ও সব সময়ে আল্লাহর প্রয়োজন।

একজন কবি বলেন-

عساك ترضى وكل الناس غاضبة ٭ إذا رضيت فهذا منتهى أملي

ভাবাৰ্থঃ “আমি চাই যে আপনি আমার প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন। পক্ষান্তরে, সব মানুষ আমার প্রতি রাগান্বিত থাকুক (তাতে কিছু যায় আসে না)। আপনি যখন আমার প্রতি সন্তুষ্ট, তখন এটাই আমার চরম ও পরম পাওয়া (আকাঙ্ক্ষা)।”

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-

من أرضى الله بسخط الناس رضي الله عنه وأرضى عنه الناس ومن أسخط الله برضا الناس سخط الله عليه وأسخط عليه الناس

ভাবাৰ্থঃ “যে ব্যক্তি মানুষকে রাগান্বিত করে হলেও আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট হন এবং মানুষকেও তার প্রতি সন্তুষ্ট করে দেন, আর যে ব্যক্তি মানুষের সন্তুষ্টির জন্য আল্লাহকে রাগান্বিত করে আল্লাহ তার প্রতি রাগান্বিত হন এবং মানুষকেও তার উপর রাগান্বিত করে দেন।”

وَكَذَٰلِكَ نُوَلِّي بَعْضَ الظَّالِمِينَ بَعْضًا بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

“আর এভাবে আমি তাদের কৃতকর্মের ফলে জালিমদের কতককে কতকের (জন্য) অভিভাবক বানিয়ে দিই।” (৬-সূরা আল আন’আমঃ আয়াত-১২৯)