خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ

“ক্ষমা কর, সৎ কাজের আদেশ দাও এবং মুর্খদেরকে উপেক্ষা কর। (অর্থাৎ তাদেরকে শাস্তি দিও না)” (৭-সূরা আল আ'রাফঃ আয়াত-১৯৯)

আপনার ভাইয়ের দু’একটি ভুলের জন্য তাকে ত্যাগ করা আপনার উচিত নয়; বিশেষ করে, যদি তার বাদ বাকি চরিত্রাবলী প্রশংসনীয় হয়। যেহেতু আমরা জানি, আমাদের যে কোন লোকের পক্ষেই একেবারে নিখুঁত চরিত্রের অধিকারী হওয়া অসম্ভব। আলকিন্দি বলেছেন- “তুমি কিভাবে আশা কর যে তোমার বন্ধু এক বিশেষ চরিত্রের অধিকারী হোক যখন নাকি তোমার নিজের আত্মাই—যা নাকি তোমার সবচেয়ে নিকটতম সে-ই তোমার কথা সবৰ্দা মানে না। তাহলে অন্যের আত্মা তোমার ইচ্ছার অনুসরণ করুক এ আশা করার কী অধিকার তোমার আছে?”

كَذَٰلِكَ كُنتُم مِّن قَبْلُ فَمَنَّ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَتَبَيَّنُوا

“তোমরা তো পূর্বে এমনই ছিলে, অতপর আল্লাহ তোমাদেরকে করুণা করেছেন (তোমাদেরকে ইসলামের পথ প্রদর্শন করেছেন)। (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-৯৪)

“অতএব নিজের পবিত্রতা বর্ণনা করো না। তিনি জানেন কে তোমাদের মধ্যে অধিক মোত্তাকী।” (৫৩-সূরা আন নাজমঃ আয়াত-৩২)

এটাই আপনার জন্য যথেষ্ট যে আপনি আপনার ভাইয়ের চরিত্রের প্রধান অংশের প্রতি সন্তুষ্ট।

আবু দারদা (রাঃ) বলেছেন-

مُعَاتَبَةُ الأَخِ خَيْرٌ مِنْ فَقْدِهِ

“কোন দোষের কারণে তোমার ভাইকে একেবারে পরিত্যাগ করার চেয়ে তাকে বরং তিরস্কার করাই ভাল।”

কোন কোন অভিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছেন- “আমরাই আমাদের প্রতি সন্তুষ্ট নই, সুতরাং অন্যের প্রতি সন্তুষ্ট হওয়ার আশা আমরা কিভাবে করতে পারি?”

একথাও বলা হয়েছে যে, “যে ব্যক্তির কোন ভালো চরিত্র ও বিচক্ষণ বিচার আপনাকে প্রভাবিত করে তার ছোট খাটো এমন কোন কোন ভুলের জন্য তার থেকে দূরে থাকবেন না, যা নাকি গুণের মহাসাগর দ্বারা পরিবেষ্টিত (তার এসব ছোট খাটো দোষ ছাড়া ও তার মহাসাগরের মতো বিশাল গুণ আছে। সুতরাং তাকে পরিত্যাগ করা বোকামী -অনুবাদক) আপনি যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন এমন সংস্কৃতি, ভদ্র ও উন্নত একটি লোকও খুঁজে পাবেন না, যে নাকি সকল কলঙ্ক ও পাপ থেকে মুক্ত। নিজের আত্মা সম্বন্ধে ভেবে দেখুন যে, এটা কত বেশি ভুল করে ও বিচ্যুত হয়। এ ধরনের অন্তর্দর্শন (আত্মদর্শন) অন্যের প্রতি আপনার চাহিদাকে অধিকতর ভারসাম্যপূর্ণ করবে এবং আপনাকে পাপীদের প্রতি সহনশীল করে তুলবে।”

একজন আরব কবি বলেছেন-

مَن ذا الَّذي تُرضى سَجاياهُ كُلُّها ٭ كَفى المَرءَ نُبلاً أَن تُعَدَّ مَعايِبُهْ

ভাবাৰ্থঃ “এমন কে আছে যে, যার গোটা চরিত্র নিষ্কলুষ? যার দোষ গণনা করা যায় (যার দোষ হাতে গোনা গুটিকতক বা যার দোষ গুণের তুলনায় কম।) এটাই তার মহত্বের জন্য যথেষ্ট। (অর্থাৎ গুণের তুলনায় দোষ কম হওয়াই (তার) মহত্বের (পরিচয়ের) জন্য যথেষ্ট)।

বলা হয়েছে যে, ভাইয়ের প্রতি সন্দেহ যেন বহুদিনের বিশ্বস্ততাকে ধ্বংস না করে। জাফর ইবনে মুহাম্মদ তার ছেলেকে বলেছেন, “বৎস! তোমার যে ভাই তোমার প্রতি তিনবার রাগ করেছে এবং প্রতিবারই সে তোমার সম্বন্ধে সত্য কথা বলেছে, তাকে তুমি ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে গ্রহণ কর।”

হাসান ইবনে ওহাব বলেছেনঃ “পারস্পরিক ভালোবাসার অর্থ হলো ক্ষমা করা এবং ক্রটি-বিচ্যুতি ও অক্ষমতাকে উপেক্ষা করা।”

“অতএব তুমি মহান ক্ষমার মাধ্যমে তাদের ভুল-ত্রুটিসমূহকে উপেক্ষা কর।” (১৬-সূরা আন নাহলঃ আয়াত-৮৫)

ইবনে রুমী বলেছেন-

هُمُ الناس والدنيا ولا بد من قذى ٭ يلم بعين أو يكدر مشربا

ومن قلة الإنصاف أنك تبتغي ٭ المهذب في الدنيا ولست المهذبا

ভাবাৰ্থঃ এ-ই হলো মানুষ ও দুনিয়া, ধুলি-ময়লা লোপ করা অসম্ভব। (ধুলি) চোখে যাতনা দেয় ও (ময়লা) পানিকে ময়লা করে। দুনিয়াতে তুমি অবিবেচনার মাধ্যমে ভদ্র-সভ্য মানুষ তালাশ করছ অথচ তুমি নিজেই সংস্কৃত ও উন্নত নও।”

وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَتُهُ مَا زَكَىٰ مِنكُم مِّنْ أَحَدٍ أَبَدًا

“তোমাদের ওপর আল্লাহর অনুগ্রহ ও দয়া না থাকলে তোমাদের কেউ কখনও (পাপ থেকে) পবিত্র হতে পারবে না।’ (২৪-সূরা আন নূরঃ আয়াত-২১)

একজন কবি বলেছেন-

تريدُ مُهذَّبًا لا عيبَ فيه٭ وهل عُودٌ يفوحُ بلا دُخانِ

ভাবাৰ্থঃ তুমি নিষ্কলুষ এক সভ্য মানুষ খুঁজছ! কিন্তু মুসব্বর (ঘৃতকুমারী) কি ধুঁয়া ছাড়া সুগন্ধি ছড়ায়?”

“অতএব নিজেদের পবিত্রতা বর্ণনা করো না, তিনি জানেন কে অধিক মুত্তাকী।” (৫৩-সূরা আন নাজমঃ আয়াত-৩২)