“আর তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য চাও।” (২-সূরা আল বাকারাঃ আয়াত-৪৫)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোন সংকটে পড়তেন অমনি সালাতে দাঁড়িয়ে যেতেন। তিনি বেলাল (রাঃ)-কে মাঝে মাঝে বলতেন, “হে বেলাল! আযান দিয়ে আমাদেরকে শান্তি দাও।” [বেলাল (রাঃ)-এর দায়িত্ব ছিল আযান দেয়া]

যখন আপনি মানসিক চাপ অনুভব করেন, সমস্যায় পড়েন বা যখন আপনি নিজেকে প্রতারিত বোধ করেন তখন তাড়াতাড়ি মসজিদে যেয়ে সালাত পড়ুন।

বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালাতে শান্তি পেতেন। যেমন- বদর ও আহযাবের যুদ্ধে। বুখারী শরীফের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাখ্যাকার ইবনে হাজার একবার ডাকাত দল পরিবেষ্টিত এক প্রাসাদে আটকা পড়েন। যখন তিনি সালাতে দাঁড়ালেন তখন আল্লাহ তাকে রক্ষা করলেন।

ইবনে আসাকির ও ইবনুল কায়্যিম উভয়েই একটি ঘটনা বর্ণনা করেছেন। এক ধাৰ্মিক লোক শাম দেশে (বর্তমানে সিরিয়া ও ফিলিস্তিন) যাত্রা করেন। পথিমধ্যে এক ডাকাত তার সঙ্গী হয়, ডাকাতটি তাকে হত্যা করতে চায় কিন্তু তার নিকটে আসার আগে ধাৰ্মিক লোকটি ডাকাতের কাছে সালাত পড়ার জন্য কয়েক মিনিট সময় চায়। সে সালাতে দাঁড়িয়ে আল্লাহর নিম্নোক্ত বাণী স্মরণ করল-

أَمَّن يُجِيبُ الْمُضْطَرَّ إِذَا دَعَاهُ

“(তোমাদের দেবতাগণ ভালো?) না কি তিনি যিনি সংকটাপন্ন লোকের ডাকে সাড়া দেন যখন সে তাকে ডাকে?” (২৭-সূরা আন নামল : আয়াত-৬২)

সে এ আয়াত তিনবার পড়ল। তারপর আকাশ থেকে একজন ফেরেশতা বর্শা নিয়ে এসে ডাকাতকে হত্যা করে ফেলল। ফেরেশতা বলল, “আমি তার ফেরেশতা যিনি সংকটাপন্ন লোকদের ডাকে সাড়া দেন যখন তারা তাকে ডাকে।”

“এবং তোমার পরিবার-পরিজনকে সালাত পড়ার আদেশ দাও এবং তুমি তাতে অবিচলিত থাক।” (২০-সূরা ত্বাহাঃ আয়াত-১৩২)

إِنَّ الصَّلَاةَ تَنْهَىٰ عَنِ الْفَحْشَاءِ وَالْمُنكَرِ

নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও অপছন্দীয় কাজ থেকে বিরত রাখে।” (২৯-সূরা আল আনকাবূতঃ আয়াত ৪৫)

“নিশ্চয় নির্ধারিত সময়ে সালাত আদায় করা মু'মিনদের উপর ফরয।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-১০৩)

নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ শরীফ পৌছালেও তা সংকট দূর করতে সাহায্য করে।

“হে মু’মিনগণ! তোমরা তার (মুহাম্মদের) উপর দরূদ পৌছাও এবং সালাম দেয়ার নিয়ম অনুযায়ী তাকে সালাম দাও।” (৩৩-সূরা আল আহযাবঃ আয়াত-৫৬)

উবাই ইবনে কা'ব (রাঃ) আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞাসা করলেন, “আপনার উপর আমি কত সংখ্যক দরূপ পড়ব? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তোমার যত ইচ্ছা।” উবাই (রাঃ) বললেন, “এক-চতুর্থাংশ?” তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “তোমার যত ইচ্ছা, যদি আরো বেশি পড় তবে তোমার জন্য তা ভালো।” তিনি (রাঃ) জিজ্ঞাসা করলেন, “দুই-তৃতীয়াংশ? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, “তোমার যত ইচ্ছা, যদি আরো বেশি পড় তবে তা ভাল।” তারপর তিনি বললেন, সুব দুরূদ আপনার জন্য পড়ব” নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দিলেন, “তাহলে তোমাকে ক্ষমা করে দেয়া হবে এবং তোমার দুশ্চিন্তার প্রতি খেয়াল রাখা হবে।”

উপরোক্ত হাদীসের শেষ কথা দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর উপর দরূদ শরীফ পৌছালে দুশ্চিন্তা দূর হয়।

اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا صَلَّيْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ، اللَّهُمَّ بَارِكْ عَلَى مُحَمَّدٍ، وَعَلَى آلِ مُحَمَّدٍ، كَمَا بَارَكْتَ عَلَى إِبْرَاهِيمَ، وَعَلَى آلِ إِبْرَاهِيمَ، إِنَّكَ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

“হে আল্লাহ! আপনি ইব্রাহীম (আঃ) ও তার অনুসারীদের উপর যেমন শান্তি বর্ষণ করেছেন তেমনি মুহাম্মদ ও তার অনুসারীদের উপর শান্তি বর্ষণ করুন। নিশ্চয় আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত। হে আল্লাহ! আপনি ইব্রাহীম ও তার

পরিবার পরিজনের উপর যেমন কল্যাণ বর্ষণ করেছেন তেমনি মুহাম্মদ ও তার পরিবার পরিজনের উপর কল্যাণ বর্ষণ করুন। নিশ্চয়ই আপনি প্রশংসিত ও সম্মানিত।”