৯৭. তুচ্ছ জিনিসের জন্য দুঃখ করবেন না-পুরো পৃথিবীই নগণ্য

একবার এক ধাৰ্মিক ব্যক্তিকে এক সিংহের খাঁচায় নিক্ষেপ করা হয়েছিল আর তখন আল্লাহ তাকে এর থাবা থেকে রক্ষা করেছিলেন। পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, “সে সময়ে তুমি কী ভাবতে ছিলে?” তিনি বলেছিলেন, “আমি সিংহের লালা নিয়ে ভাবছিলাম-এটা কি (ফকীহদের মতানুসারে) পাক না নাপাক (অর্থাৎ আমার মৃত্যুর সময় আমি পাক না নাপাক অবস্থায় থাকব- এ নিয়ে ভাবছিলাম)।

আল্লাহ তায়ালা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবী (রাঃ) তাদের উদ্দেশ্য অনুসারে তাদের গুণাগুণ বর্ণনা করেছেন-

“তোমাদের মাঝে কেউ কেউ দুনিয়া কামনা করে আর তোমাদের মাঝে এমনও কিছু লোক আছে যারা আখিরাত চায়।” (সূরা-৩ আলে ইমরান: আয়াত-১৫২)

ইবনুল কাইয়েম (রহঃ) বলেছেন- “মানুষের উদ্দেশ্য অনুপাতেই মানুষের মূল্য।”

একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছেন- “আমাকে কোনো লোকের উদেশ্য সম্বন্ধে অবহিত করলে আমি বলে দিতে পারব সে কোন ধরনের লোক৷”

সাগরে একটি জাহাজ ডুবে একজন আবেদ লোক পানিতে পড়ে গিয়েছিল। সে অজু করতে শুরু করে দিয়েছিল-এক সময়ে একটি করে অঙ্গ ধৌত করছিল। সে তীরে পৌছতে পেরেছিল এবং বেঁচে গিয়েছিল। তাকে অজু প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল- কেন সে অজু করেছিল? আর সে উত্তর দিল, “আমি এজন্য অজু করেছিলাম-যাতে আমি পবিত্র অবস্থায় মৃত্যুবরণ করতে পারি।”

ইমাম আহমদ (রহঃ) যখন মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতর ছিলেন তখন অন্যেরা তাকে অজু করাচ্ছিল আর তিনি তাদেরকে তার দাড়ি দেখিয়ে এক বিন্দু পরিমাণ স্থানও যাতে অধৌত না থাকে সে কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলেন।

“অতএব আল্লাহ তাদেরকে পার্থিব পুরস্কার এবং চমৎকার পারলৌকিক পুরস্কার দান করলেন।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৪৮)

যখন আপনার সাথে প্রকাশ্য শক্রতা প্রদর্শন করা হয় তখন মনঃক্ষুন্ন হবেন না; কেননা, আপনি যদি ক্ষমা করে দেন ও ভুলে যান তবে এ দুনিয়ায় মাহাত্ম্য ও পরকালে সম্মান অর্জন করবেন।

فَمَنْ عَفَا وَأَصْلَحَ فَأَجْرُهُ عَلَى اللَّهِ

“কিন্তু যে ব্যক্তি ক্ষমা করে দিল ও আপস করে নিল, আল্লাহর পক্ষ হতে তার জন্য পুরস্কার রয়েছে।” (৪১-সূরা আশ শুরা আয়াত ৪০)

হিংসার আগুন সম্বন্ধে শেক্সপিয়ার বলেছেন “Don't light the oven too much for your enemy in order not to burn yourself by the flame.”

“অগ্নিশিখায় তুমি নিজেই যাতে পুড়ে না যাও এজন্য শক্রর জন্য চুলার আগুন খুব বেশি প্রজ্জ্বলিত করিও না।”

প্রাথমিক ইসলামী যুগের একজন পণ্ডিত সালিম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে উমার'-কে এক লোক বলেছেন, “তুমি একজন খারাপ লোক,” তিনি তৎক্ষণাৎ উত্তর দিলেন, “তুমি ছাড়া আমাকে কেউ জানে না।”

এক লোক আবু বকর (রাঃ)-কে মৌখিক আক্রমণ করে বলে- “আল্লাহর কসম, আমি আপনাকে এমন গালিগালাজ করব যা আপনার সাথে আপনার কবরে প্রবেশ করবে। তিনি শান্তভাবে উত্তর দিলেন, “না, বরং তোমার গালি তোমার সাথে তোমার কবরেই প্রবেশ করবে।”

কেহ আমর ইবনুল আসকে (রাঃ) বলেছিলেন- “আমি আপনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিব।” আমর (রাঃ) উত্তর দিলেন, “এখন তুমি অন্য সবার স্থলাভিষিক্ত হলে এবং একাজই তোমার উদ্বিগ্নতার (দুর্দশার) কারণ হবে।”

একদা জেনারেল এইসেনহাউয়ার বিস্ময়ের সাথে বলেছিলেন- “আমরা যাদেরকে ভালোবাসি না তাদের নিয়ে চিন্তা করে আমরা যাতে এক মিনিটও নষ্ট না করি।”

মশা গাছকে বলেছিল- “শক্ত হয়ে থাক; কেননা, আমি তোমাকে ছেড়ে উড়ে যেতে চাই। গাছ উত্তর দিয়েছিল, “আল্লাহর শপথ, আমি আমার উপর তোমার অবতরণ করা টের পাইনা! তবে কেন তোমার উড়ে যাওয়া টের পাব?"

হাতেম তাই বলেছেন- “ভদ্র ব্যক্তি যদি কিছু সম্পদ জমা করে তবে আমি তার দোষ ক্ষমার চোখে দেখব। আর অসভ্যের গালিকে আমি ভদ্রতার সাথে এড়িয়ে যাব।”

وَإِذَا مَرُّوا بِاللَّغْوِ مَرُّوا كِرَامًا

এবং তারা নিরর্থক কার্যকলাপের সম্মুখীন হলে ভদ্রভাবে ও বিনয়ীভাবে তা এড়িয়ে চলে।” (২৫-সূরা আল ফুরকান: আয়াত-৭২)

“এবং মূর্খরা যখন তাদেরকে (মন্দভাবে) সম্বোধন করে, তখন তারা ভদ্রতার সাথে উত্তর দেয়।” (২৫-সূরা আল ফুরকান: আয়াত ৬৩)

কনফুসিয়াস বলেছেন- “ক্রুদ্ধ ব্যক্তি সর্বদা বিষে পরিপূর্ণ।”

এক ব্যক্তি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে তিনবার উপদেশ দান করার জন্য অনুরোধ করেছিল, প্রতিবারই তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) উত্তর দিয়েছিলেন, “রাগ করিও না বা ক্রুদ্ধ হয়ো না।”

নিম্নোক্ত হাদীসে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামই রাগ বা ক্রোধ সম্বন্ধে বলেছেনঃ “ক্রোধ হলো দোজখের একটি জ্বলন্ত অঙ্গার।”

শয়তান মানুষকে তিন অবস্থায় পরাজিত করে : প্রবৃত্তির তাড়নায়, ক্রোধ ও অমনোযোগ অবস্থায়।