১৮. মধু আহরণ কর কিন্তু মৌচাক ভেঙ্গ না

যাতে সৌম্যতা ও ভদ্রতা আছে তাই সুন্দর- আর যাতে তা নেই তাই খারাপ। কারো সাথে সাক্ষাৎকালে যখন আপনি সুন্দর হাসি দিবেন, একটি কোমল কথা বলবেন তখন আপনি একজন সত্যিকার সফল ব্যক্তির চরিত্র প্রদর্শন করবেন যে চরিত্র না কি একটি মৌমাছিও দেখায়।

যখন কোন মৌমাছি (ব্যবহারিক উদ্দেশ্যে অর্থাৎ প্রয়োজনে) কোন ফুলে বসে তখন সে এটাকে ধ্বংস (নষ্ট) করে না, কেননা, আল্লাহ তা’আলা কোমলতার বদৌলতে যা দান করেন কঠোরতার বিনিময়ে তা দান করেন না। কিছু লোক আছেন যাদের ব্যক্তিত্ব চুম্বকের মতো আশেপাশের লোকদেরকে আকর্ষণ করে, শুধুমাত্র এ কারণে যে, তারা তাদের কোমল ও ভদ্র কথা, তাদের ভালো ব্যবহার এবং তাদের মহৎ কাজের জন্য তারা (ঐ লোকদের) ভালোবাসার পাত্র হন।

অন্যের বন্ধুত্বকে জয় করে নেয়ার কৌশল মহান ও ধাৰ্মিকগণ জানেন; সর্বদা একদল লোক তাদেরকে ঘিরে থাকে। কোন সমাবেশে শুধুমাত্র তাদের উপস্থিতিটাই আশীর্বাদ, তারা অনুপস্থিত থাকলে তাদের অভাববোধ করা হয় এবং তাদের কথা জিজ্ঞাসা করা হয়।

এ ধন্য লোকদের একটি আচরণ সংহিতা আছে আর তা হল

ادْفَعْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ فَإِذَا الَّذِي بَيْنَكَ وَبَيْنَهُ عَدَاوَةٌ كَأَنَّهُ وَلِيٌّ حَمِيمٌ

“খারাপকে ভালো দিয়ে প্রতিহত কর, তাহলে তোমার আর যার মাঝে শক্ৰতা আছে সে এমন হয়ে যাবে যেন সে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।” (৪১-সূরা হা-মীম-আস-সাজদাহ: আয়াত-৩৪)

(মন্দকে ভালো দ্বারা দূর করা বলতে বুঝায় যে, আল্লাহ তা'আলা বিশ্বস্ত ঈমানদারদেরকে ক্রোধের সময় ধৈর্য ধারণ করতে এবং তাদের সাথে যারা মন্দ আচরণ করে তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে আদেশ করেছেন।)

তারা তাদের সততা, ক্ষমা ও ভদ্রতা দিয়ে অন্যের ভিতর থেকে হিংসাকে বের করে ফেলেন। তাদের সাথে যে মন্দ আচরণ করা হয়েছে তারা তা ভুলে যান আর যে দয়া তারা পেয়েছেন তারা শুধু তাই মনে রাখেন। তাদেরকে কটু ও রুক্ষ কথা বলা হয়ে থাকতে পারে, কিন্তু তারা তা শুনেন না, বরং চিরতরে পিছনে না ফিরে তারা তাদের পথে অনবরত সামনে চলতে থাকেন। তারা শান্ত ও সৌম্য অবস্থায় থাকেন। সাধারণ জনগণ বিশেষ করে মুসলমানগণ তাদের হাত থেকে নিরাপদ থাকেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

الْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ ، وَالْمُؤْمِنُ : مَنْ أَمِنَهُ النَّاسُ عَلَى دِمَائِهِمْ وَأَمْوَالِهِمْ

“প্রকৃত মুসলিম সে যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্যান্য মুসলিমগণ নিরাপদ থাকেন। আর প্রকৃত মু’মিন সে যাকে অন্য মানুষেরা তাদের রক্ত (জীবন) ও সম্পদের ব্যাপারে বিশ্বাস করে।”

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন-

إن الله أَمرني أَنْ أَصِلَ مَنْ قَطَعَنِي وَأَنْ أَعْفُوَ عَمَّنْ ظَلَمَنِي وَأَنْ أُعْطِيَ مَنْ حَرَمَنِي

“যারা আমার সাথে আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করেছে তাদের সাথে আত্মীয়তার বন্ধন রক্ষা করার জন্য, যারা আমার সাথে অন্যায় আচরণ করেছে বা আমাকে অত্যাচার করেছে তাদেরকে ক্ষমা করে দিতে এবং যারা আমাকে বঞ্চিত করেছে তাদেরকে দান করতে আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন।”

“নিশ্চয় আল্লাহ সৎকর্মশীলদের ভালোবাসেন- (বিশেষত তাদেরকে) যারা ক্রোধ সংবরণ করে এবং মানুষকে ক্ষমা করে দেয়।” (৩-সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১৩৪)

এ ধরনের লোকদেরকে এ পৃথিবীতে শান্তি ও প্রশান্তির এক আসন্ন পুরস্কারের ঘোষণা দিন। পরকালে জান্নাতে তাদের ক্ষমাশীল প্রভুর ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থাকার এক মহা সুসংবাদও তাদেরকে দিন।