মুযদালিফায় অবস্থানের ফযীলত

মুযদালিফায় অবস্থানকারিদের ওপর আল্লাহ তা‘আলা অনুকম্পা করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ اللهَ تَطَوَّلَ عَلَيْكُمْ فِي جَمْعِكُمْ هَذَا، فَوَهَبَ مُسِيئَكُمْ، لِمُحْسِنِكُمْ، وَأَعْطَى مُحْسِنَكُمْ مَا سَأَلَ».

‘আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের এই (মুযদালিফার) সমাবেশে তোমাদের ওপর অনুকম্পা করেছেন, তাই তিনি গুনাহ্গারদেরকে নেককারদের কাছে সোপর্দ করেছেন। আর নেককাররা যা চেয়েছে তা তিনি দিয়েছেন।’[1]

মুযদালিফার পথে রওয়ানা

১. যিলহজের ৯ তারিখ সূর্য ডুবে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর হাজী সাহেব ধীরে-সুস্থে শান্তভাবে আরাফা থেকে মুযদালিফার দিকে রওয়ানা করবেন। হাজীদেরকে কষ্ট দেয়া থেকে দূরে থাকবেন। চেঁচামেচি ও খুব দ্রুত হাঁটাচলা পরিহার করবেন। ইবন আব্বাস রা. বলেন, ‘তিনি আরাফার দিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আরাফা থেকে মুযদালিফা গিয়েছিলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পেছনে উট হাঁকানোর ধমক ও চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পেলেন। তখন তিনি তাঁর বেত দিয়ে লোকদেরকে ইশারা করে বললেন,

«أَيُّهَا النَّاسُ عَلَيْكُمْ بِالسَّكِينَةِ ، فَإِنَّ الْبِرَّ لَيْسَ بِالإِيضَاعِ»

‘হে লোকসকল! তোমাদের শান্তভাবে চলা উচিত। কেননা দ্রুত চলাতে কোনো কল্যাণ নেই।’[2]

২. রাস্তায় জায়গা পাওয়া গেলে দ্রুতগতিতে চলাতে কোনো দোষ নেই। উরওয়া রহ. বলেন, ‘উসামা রা. কে জিজ্ঞেস করা হল, ‘বিদায় হজে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কীভাবে পথ অতিক্রম করছিলেন? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মধ্যম গতিতে পথ অতিক্রম করছিলেন। আর যখন জায়গা পেয়েছেন তখন দ্রুত গতিতে চলেছেন।’[3]

৩. মাগরিবের সালাত আরাফার ময়দানে কিংবা মুযদালিফার সীমারেখায় প্রবেশের আগে কোথাও আদায় করবেন না।

৪. আরাফার সীমরেখা পার হয়ে প্রায় ৬ কি.মি. পথ অতিক্রম করার পর মুযদালিফা সীমারেখা শুরু হয়। মুযদালিফার শুরু ও শেষ নির্দেশকারী বোর্ড রয়েছে। বোর্ড দেখেই মুযদিলাফায় প্রবেশ করেছেন কিনা তা নিশ্চিত হবেন। তাছাড়া বড় বড় লাইটপোস্ট দিয়েও মুযদালিফা চিহ্নিত করা আছে। তা দেখেও নিশ্চিত হতে পারেন।

মুযদালিফায় করণীয়

১. মুযদালিফায় পৌঁছার পর ‘ইশার সময়ে বিলম্ব না করে মাগরিব ও ইশা এক সাথে আদায় করবেন। মাগরিব ও ইশা উভয়টা এক আযান ও দুই ইকামাতে আদায় করতে হবে। জাবের রা. বলেন,

«حَتَّى أَتَى الْمُزْدَلِفَةَ فَصَلَّى بِهَا الْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ بِأَذَانٍ وَاحِدٍ وَإِقَامَتَيْنِ وَلَمْ يُسَبِّحْ بَيْنَهُمَا شَيْئًا ثُمَّ اضْطَجَعَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم حَتَّى طَلَعَ الْفَجْرُ»

‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় এলেন, সেখানে তিনি মাগরিব ও ইশা এক আযান ও দুই ইকামতসহ আদায় করলেন। এ দুই সালাতের মাঝখানে কোনো তাসবীহ (সুন্নত বা নফল সালাত) পড়লেন না। অতঃপর তিনি শুয়ে পড়লেন। ফজর (সুবহে সাদেক) উদিত হওয়া পর্যন্ত তিনি শুয়ে থাকলেন।’[4]

আযান দেয়ার পর ইকামত দিয়ে প্রথমে মাগরিবের তিন রাক‘আত সালাত আদায় করতে হবে। এরপর সুন্নত-নফল না পড়েই ‘ইশার সালাতের ইকামত দিয়ে ‘ইশার দু’রাক‘আত কসর সালাত আদায় করতে হবে। ফরয সালাত আদায়ের পর বেতরের সালাতও আদায় করতে হবে। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর ও মুকীম কোনো অবস্থায়ই এ সালাত ত্যাগ করতেন না।

২. সালাত আদায়ের পর বিলম্ব না করে বিশ্রাম নেবেন এবং শুয়ে পড়বেন। কেননা ওপরের হাদীস দ্বারা বুঝা যায়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফায় সুবহে সাদেক পর্যন্ত শুয়ে আরাম করেছেন। যেহেতু ১০ যিলহজ হাজী সাহেবকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুযদালিফার রাতে আরাম করার বিধান রেখেছেন। সুতরাং হাজীদের জন্য মুযদালিফার রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সুন্নতের পরিপন্থি।

৩. মুযদালিফায় পৌঁছার পর যদি ইশার সালাতের সময় না হয় তবে অপেক্ষা করতে হবে। হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে,

«إِنَّ هَاتَيْنِ الصَّلاَتَيْنِ حُوِّلَتَا عَنْ وَقْتِهِمَا فِى هَذَا الْمَكَانِ الْمَغْرِبَ وَالْعِشَاءَ»

‘এ স্থানে (মুযদালিফায়) এ সালাত দু’টি মাগরিব ও ইশাকে তাদের সময় থেকে পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে।’[5]

৪. সুন্নত হলো সুবহে সাদেক উদিত হলে আওয়াল ওয়াক্তে ফজরের সালাত আদায় করে কেবলামুখী হয়ে হাত তুলে দো‘আ করা। আকাশ ফর্সা হওয়া পর্যন্ত দো‘আ ও যিকরে মশগুল থাকা। আকাশ ফর্সা হবার পর সূর্যোদয়ের আগেই মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করা। জাবের রা. থেকে বর্ণিত হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে,

«فَلَمْ يَزَلْ وَاقِفًا حَتَّى أَسْفَرَ جِدًّا فَدَفَعَ قَبْلَ أَنْ تَطْلُعَ الشَّمْسُ»

‘আকাশ ভালভাবে ফরসা হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উকূফ (অবস্থান) করেছেন। অতঃপর সূর্যোদয়ের পূর্বে তিনি (মুযদালিফা থেকে মিনার দিকে) যাত্রা আরম্ভ করেছেন।’[6]

তাই প্রত্যেক হাজী সাহেবের উচিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেভাবে মুযদালিফায় রাতযাপন করেছেন, ফজরের পর উকূফ করেছেন, ঠিক সেভাবেই রাতযাপন ও উকূফ করা।

৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায়ের পর ‘কুযা’ পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে উকূফ করেছেন। বর্তমানে এই পাহাড়ের পাশে মাশ‘আরুল হারাম মসজিদ অবস্থিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَقَفْتُ هَاهُنَا وَجَمْعٌ كُلُّهَا مَوْقِفٌ»

‘আমি এখানে উকূফ করলাম তবে মুযদালিফা পুরোটাই উকূফের স্থান।’[7]

তাই সম্ভব হলে উক্ত মসজিদের কাছে গিয়ে উকূফ করা ভাল। সম্ভব না হলে যেস্থানে রয়েছেন সেটা মুযদালিফার সীমার ভেতরে কি না তা দেখে নিয়ে সেখানেই অবস্থান করুন।’

[1]. ইবন মাজাহ্‌ : ৩০২৩।

[2]. বুখারী : ১৬৭১।

[3]. প্রাগুক্ত।

[4]. মুসলিম ১২১৮।

[5]. বুখারী : ১৬৮৩।

[6]. মুসলিম: ১২১৮।

[7]. মুসলিম : ১২১৮।