১. তাওয়াফের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা। যেমন এরূপ বলা :

اَللَّهُمَّ إِنِّيْ نَوَيْتُ أَنْ أَطُوْفَ طَوَافَ الْعُمْرَةِ سَبْعَةَ أَشْوَاطٍ .

স্মর্তব্য যে, কোনো ইবাদাতে নিয়ত উচ্চারণের কোনো নিয়ম নেই। একমাত্র হজ বা উমরা শুরু করার সময় প্রথমবার ‘লাব্বাইকা হাজ্জান’ বা ‘লাব্বাইকা উমরাতান’ কিংবা ‘লাব্বাইকা হাজ্জান ওয়া উমরাতান’ উচ্চারণ করে নিয়ত করার ব্যাপারটি হাদীসে এসেছে; অন্য কোথাও নয়।

২. তাওয়াফের প্রত্যেক চক্করের জন্য আলাদা বিশেষ দো‘আ পড়া, শুধু দুই রুকনের মাঝখানে ছাড়া অন্য কোথাও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বিশেষ কোনো দো‘আ বর্ণিত নেই। তবে উত্তম হচ্ছে, কুরআন ও হাদীসে যেসব মৌলিক দো‘আ এসেছে সেগুলো বলে দো‘আ করা। তেমনি নিজের ভাষায় দুনিয়া-আখিরাতের কল্যাণ কামনায় যেকোনো পছন্দনীয় বিষয় প্রার্থনা করা।

৩. হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করতে গিয়ে ভিড় বৃদ্ধির মাধ্যমে মানুষকে কষ্ট দেয়া। হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা সুন্নত। পক্ষান্তরে মানুষকে কষ্ট দেয়া হারাম। আর কোনো মুসলিমের জন্য সুন্নত আদায় করতে গিয়ে হারামে লিপ্ত হওয়া বৈধ নয়। তাই সহজে চুম্বন করা সম্ভব হলে করবেন, নয়তো ডান হাতে ইশারা করে তাকবীর দিয়ে তাওয়াফ পুরো করবেন।

৪. কা‘বা ঘরের পর্দা বা মাকামে ইবরাহীম স্পর্শ করা এবং এর জন্য নির্দিষ্ট দো‘আ পড়া। এ কাজ শরীয়তসম্মত নয়, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন করেছেন বলে প্রমাণ নেই। সাহাবীরা কেউ করেছেন বলেও নজির নেই। কাজটি যদি উত্তম হত, তাহলে তারা আমাদের আগে অবশ্যই এসব করতেন। রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করার পর হাত চুম্বন করা অথবা সরাসরি রুকনে ইয়ামানীকে চুম্বন করা সুন্নাহর পরিপন্থি। রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করা সম্ভব না হলে এর দিকে ইশারা করা ও তাকবীর দেয়া শরীয়তসম্মত নয়। সুতরাং রুকনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদ ছাড়া বাইতুল্লাহ্‌র আর কিছুই স্পর্শ করবেন না। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দু’টি ছাড়া অন্য কিছু স্পর্শ করেননি। ইবন আব্বাস রা. মু‘আবিয়া রা.-এর সাথে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করছিলেন। মু‘আবিয়া রা. বাইতুল্লাহ্‌র সব রুকন অর্থাৎ সব কোণ স্পর্শ করলে ইবন আব্বাস রা. তাকে বললেন, ‘আপনি সব রুকন স্পর্শ করছেন কেন? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তো সব রুকন স্পর্শ করেননি?’ মু‘আবিয়া রা. বললেন, কা‘বার কিছুই পরিত্যাগ করার মত নয়।’ একথা শুনে ইবন আব্বাস রা. তিলাওয়াত করলেন,

﴿ لَّقَدۡ كَانَ لَكُمۡ فِي رَسُولِ ٱللَّهِ أُسۡوَةٌ حَسَنَةٞ﴾ [الاحزاب: ٢١]

‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ।’ [সূরা আল-আহযাব: ২১] মু‘আবিয়া রা. তাঁর কথা মেনে নিয়ে বললেন, ‘আপনি ঠিকই বলেছেন’।[1]

৫. অনেকে মনে করেন তাওয়াফের দুই রাকা‘আত সালাত মাকামে ইবরাহীমের পেছনেই পড়তে হবে। মনে রাখবেন, সেখানে সহজেই আদায় করা সম্ভব না হলে মসজিদে হারামের যেকোনো জায়গায় এমনকি হারামের বাইরে পড়লেও হয়ে যাবে। উমর রা. ও অন্য সাহাবীরাও এমন করেছেন।[2]

৬. তাওয়াফের সময় মহিলাদের চেহারার আবরণ খোলা রাখা এবং সৌন্দর্য প্রকাশ করা। এটি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ কাজ। এমন পবিত্র জায়গায় ও মহান ইবাদতের সময় আল্লাহর বিধান লঙ্ঘন কিভাবে করা সম্ভব?

৭. তাওয়াফের সময় কা‘বাকে বামে না রাখা। তা যে কারণেই হোক না কেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لتأخُذُوا عَنِّى مَنَاسِكَكُمْ».

‘তোমরা আমার থেকে তোমাদের হজ শিখে নাও।’[3] সুতরাং তাওয়াফ সহীহ হওয়ার জন্য কা‘বাকে বাঁমে রাখার কোন বিকল্প নেই।

৮. হিজর অর্থাৎ কা‘বাঘর সংলগ্ন ঘেরা দেওয়া স্থানের অভ্যন্তরভাগ দিয়ে তাওয়াফ করলে তা সহীহ হবে না, কারণ তা কা‘বাঘরেরই অংশ। আয়েশা রা. বলেন, ‘আমি কা‘বা ঘরে ঢুকে সালাত আদায় করতে পছন্দ করতাম। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে হিজরে ঢুকিয়ে দিয়ে বললেন,

«صَلِّى فِى الْحِجْرِ إِذَا أَرَدْتِ دُخُولَ الْبَيْتِ فَإِنَّمَا هُوَ قِطْعَةٌ مِنَ الْبَيْتِ فَإِنَّ قَوْمَكِ اقْتَصَرُوا حِينَ بَنَوُا الْكَعْبَةَ فَأَخْرَجُوهُ مِنَ الْبَيْتِ».

‘যদি কা‘বাঘরে ঢুকতে চাও তবে হিজরে সালাত আদায় কর। কারণ এটি কা‘বারই অংশ। (জাহেলী যুগে) কা‘বাঘর নির্মাণের সময় তোমার গোত্র (কুরাইশরা) একে ছোট করে ফেলেছে। তারা তা কা‘বার ঘর থেকে বাইরে রেখেছে।’[4]

৯. ইহরাম বাঁধার পর থেকে হজের সমাপ্তি পর্যন্ত ইযতিবা করতে হয় বলে যে কিছু লোক ধারণা করে, তা সঠিক নয়। অনেকে আবার সালাত আদায়ের সময়ও ইজতিবা অবস্থায় থাকেন, তাও সঠিক নয়। কেননা সালাত আদায়ের সময় কাঁধ ঢেকে রাখাই নিয়ম।

[1]. মুসনাদে আহমদ : ১৮৭৭।

[2]. বুখারী : হজ অধ্যায়।

[3]. মুসলিম : ১২৯৭।

[4]. তিরমিযী : ৭৮৬; বুখারী : ১৫৮৬; মুসলিম : ১৩৩৩।