১০৫- জাবের রা. বলেন, ‘আয়েশা রা. ঋতুবতী হলেন, তিনি হজের সমস্ত আমল সম্পন্ন করলেন। কিন্তু বায়তুল্লাহ্‌র তাওয়াফ করেননি।’[1]

১০৬- তিনি বললেন, ‘যখন তিনি পবিত্র হলেন, কা‘বার তাওয়াফ করলেন এবং সাফা-মারওয়ায় সাঈ করলেন।’

১০৭- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

«قَدْ حَلَلْتِ مِنْ حَجِّكِ وَعُمْرَتِكِ جَمِيعًا»

‘তুমি তো তোমার হজ ও উমরা উভয় থেকে হালাল হয়েছে।’[2]

১০৮- আয়েশা রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, ‘তোমরা সবাই হজ ও উমরা করে যাবে আর আমি কি শুধু হজ করে যাব?’[3] তিনি বললেন,

«إِنَّ لَكِ مِثْلَ مَا لَهُمْ»

‘তোমারও তো তাদের মত হজ ও উমরা হয়ে গিয়েছে।’[4]

১০৯- আয়েশা রা. বললেন, ‘আমি মনে কষ্ট পাচ্ছি, কেননা, আমি তো শূধু হজের পরে বায়তুল্লাহ্‌র তাওয়াফ করেছি।’[5]

১১০- জাবের রা. বললেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নরম স্বভাবের লোক ছিলেন। যখন আয়েশা. কিছু কামনা করতেন, তিনি সেদিকে লক্ষ্য রাখতেন।’[6]

১১১- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

«فَاذْهَبْ بِهَا يَا عَبْدَ الرَّحْمَنِ فَأَعْمِرْهَا مِنَ التَّنْعِيمِ»

‘হে আব্দুর রহমান তুমি তাকে নিয়ে যাও এবং তাকে তানঈম থেকে উমরা করাও।’[7]

১১২- অতএব, ‘আয়েশা রা. হজের পরে উমরা করলেন।’[8] ‘এরপর ফিরে এলেন।’[9] ‘এই ঘটনাটি ছিল হাসবার রাতে[10][11]

১১৩- জাবের রা. বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিদায়ী হজে নিজের বাহনে আরোহন করে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করলেন আর নিজের বাঁকা লাঠি দিয়ে হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করলেন, যাতে মানুষেরা তাঁকে দেখতে পায় এবং উপরে হয়ে তাদের তত্বাবধান করতে পারেন। আর যাতে তারা তাঁর নিকট জিজ্ঞাসা করতে পারে। কেননা, মানুষেরা তাঁকে ঘিরে রাখছিল।’[12]

১১৪- জাবের রা. বলেন, ‘একজন মহিলা তার একটি বাচ্চা তাঁর সামনে উঁচু করে ধরে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, এই বাচ্চা কি হজ করতে পারবে? তিনি বললেন,

«نَعَمْ وَلَكِ أَجْرٌ»

হ্যাঁ। আর তোমার জন্য রয়েছে পুরস্কার।’[13]

[1]. বুখারী, মুসনাদে আহমদ।

[2]. মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসাঈ।

[3]. বুখারী, মুসনাদে আহমদ।

[4]. মুসনাদে আহমদ।

[5]. মুসলিম, আবূ দাউদ, নাসাঈ, মুসনাদে আহমদ।

[6]. মুসলিম।

[7]. ইবন আববাস রা. বলেন ‘আল্লাহর শপথ মুশরিকদের প্রথা বাতিল করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আয়েশা রা. কে যিলহজ মাসে ওমরা করিয়েছেন। কুরাইশ গোত্র ও তাদের অনুসারীরা বলতো, ’যখন উটের লোম গজিয়ে বেশি হবে এবং পৃষ্ঠদেশ সুস্থ হবে এবং সফর মাস প্রবেশ করবে তখনই ওমরাকারীর ওমরা সহীহ হবে’। তারা যিলহজ ও মুহররম শেষ হওয়ার পূর্বে ওমরা হারাম মনে করত।’ (আবূ দাউদ : ১৯৮৭)

[8]. বুখারী, মুসনাদে আহমদ।

[9]. মুসনাদে আহমদ।

[10]. সেটি হচ্ছে আইয়ামে তাশরীকের পরের রাত্রী। অর্থাৎ ১৪ তারিখের রাত। এটাকে মুহাস্সাবের রাতও বলা হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও সাহাবীগণ ১৪. তারিখের রাতে এই জায়গায় রাত যাপন করেছিলেন। যেসব জায়গায় পূর্বে শিরক বা কুফর কর্ম অথবা আল্লাহর শত্রুতা প্রকাশ করা হয়েছে সেসব জায়গায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইচ্ছাকৃতভাবে ইসলামের নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেছেন। এই মর্মে তিনি মীনায় বলেন, ‘আমরা আগামীকাল বনু কিনানার খায়ফে (অর্থাৎ মুহাস্সব তথা হাসবা নামক জায়গায়) যেতে যাচ্ছি, যেখানে তারা কুফরকর্মের ওপর অঙ্গীকারাবদ্ধ হয়েছিল, আর তা ছিল এই যে কুরাইশ ও কিনানাহ, বনু হাশীম ও বনু আব্দুল মুত্তালিব এর বিরুদ্ধে এই মর্মে শপথ করেছিল যে, তাদের সাথে তারা বৈবাহিক সম্পর্ক কায়েম করবে না, বেচাকেনা করবে না, যতক্ষণ না নবীকে তাদের কাছে সোপর্দ করা হয়। (বুখারী : ১৫৯০।) ইবনুল কাইয়্যিম বলেছেন, ‘এটাই ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অভ্যাস যে তিনি কুফরের নিদর্শনের স্থানসমূহে তাওহীদের নিদর্শন প্রকাশ করতেন। (যাদুল মা‘আদ)

[11]. মুসলিম।

[12]. মুসলিম, আবূ দাউদ, মুসনাদে আহমদ।

[13]. তিরমিযী, ইবন মাজাহ্‌।