ইসলামী জীবন-ধারা সালামের আদব আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

সালামের সবচেয়ে উত্তম বাক্য হলঃ

আস্-সালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ।

অতঃপরঃ আস্-সালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহ।

অতঃপরঃ আস্-সালামু আলাইকুম।

এক ব্যক্তি রাসুল (ﷺ)-এর নিকট এসে বলল, ‘আসসালা-মু আলাইকুম।’ তিনি তার জওয়াব দিলেন। অতঃপর লোকটি বসলে রসূল (ﷺ) বললেন, ‘‘১০টি সওয়াব এর জন্য। অতঃপর দ্বিতীয় এক ব্যক্তি এসে বলল, ‘আসসালা-মু আলাইকুম অরাহমাতুল্লা-হ।’ তিনি তার উত্তর দিলেন। অতঃপর লোকটি বসলে তিনি বললেন, ‘‘২০টি (সওয়াব এর জন্য।)’’ অতঃপর তৃতীয় আর একজন এসে বলল, ‘আসসালা-মু আলাইকুম অরাহমাতুল্লা-হি অবারাকা-তুহ।’ (অর্থাৎ আপনার উপর শান্তি, আল্লাহর করুণা ও তাঁর অনেক বরকত বর্ষণ হোক।) অতঃপর লোকটি বসলে তিনি বললেন, ‘‘৩০টি (সওয়াব এর জন্য।)’’[1]

মহান আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করে বললেন, ‘যাও ঐ সকল ফিরিশ্তাকে সালাম জানাও এবং মনোযোগ সহকারে শুনে দেখ, তারা কি উত্তর দেয়। সেটা হল তোমার ও তোমার বংশধরদের অভিবাদন।’ সুতরাং আদম গিয়ে তাঁদেরকে সালাম জানালেনঃ ‘আসসালামু আলাইকুম।’ উত্তরে তাঁরা বললেন, ‘আস্সালামু আলাইকা অরাহমাতুল্লাহ।’ উত্তরে তাঁরা ‘অরাহমাতুল্লাহ’ অতিরিক্ত করলেন।[2]

প্রকাশ থাকে যে, যাকে সালাম দেওয়া হয় সে একা হলে ‘আসসালামু আলাইকা’ এবং মহিলা হলে ‘আসসালামু আলাইকি’ অথবা উভয়ের জন্য ‘আসসালামু আলাইক’ বলা বৈধ। পক্ষান্তরে একা পুরুষ অথবা মহিলার ক্ষেত্রে এবং একাধিক লোকের ক্ষেত্রেও ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলে সালাম দেওয়া বিধেয়।

পক্ষান্তরে সালামদাতার জন্য ‘অবারাকাতুহ’র পরে অতিরিক্ত অন্য কোন শব্দ বলা বৈধ নয়।

যেমন ‘আলাইকাস সালাম’ বলে সালাম দেওয়া বৈধ নয়। কারণ, তা মৃতের জন্য অভিবাদন।[3] অর্থাৎ, সে যুগের কবিরা সাধারণতঃ ঐ বলে মৃতকে সম্বোধন করে সালাম জানাতো।

উত্তরের বাক্যাবলী হবে সালামের থেকে উত্তম; বাক্যে, গলার স্বরে, ভাবে ও ভঙ্গিতে। তা না হলে সালামের অনুরূপ হওয়া জরুরী। যেহেতু মহান আল্লাহ বলেন, ‘‘যখন তোমাদেরকে অভিবাদন করা হয়, তখন তোমরাও তা অপেক্ষা উত্তম অভিবাদন করবে অথবা অনুরূপই করবে। (সূরা নিসা-৪:৮৬)

অতএব ‘আস্-সালামু আলাইকুম’-এর জবাবে ‘অআলাইকুমুস্-সালামু অরাহমাতুল্লাহ’ এবং ‘আস্-সালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহ’-এর জবাবে ‘অআলাইকুমুস্-সালামু অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ’ বলা উত্তম। নচেৎ সালামদাতা যে বাক্যে সালাম দেবে, সেই বাক্য দিয়েই তার উত্তর দেওয়া জরুরী। সালাম অপেক্ষা তার উত্তর যেন নিকৃষ্টতর না হয়, নচেৎ সম্প্রীতির স্থানে বিদ্বেষ জন্ম নেবে।

পক্ষান্তরে ‘আস্-সালামু আলাইকুম অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ’র জবাবে অনুরূপ বাক্যই বলতে হবে। কারণ, অনেকের মতে এই শব্দাবলীর উপর বাড়তি কোন শব্দ (যেমনঃ ‘অমাগফিরাতুহ, অরিযওয়ানুহ, অইহসানুহ’ ইত্যাদি) অতিরিক্ত করা যাবে না। যেহেতু রাসুল (ﷺ) কর্তৃক সেরূপ কোন প্রমাণ নেই। মহান আল্লাহও আহলে বায়তের জন্য কেবল ‘অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহ’ শব্দ ব্যবহার করেছেন। (সূরা হূদ ৭৩ আয়াত দ্রঃ) তাছাড়া ইবনে উমার (রাঃ) ও ইবনে আব্বাস (রাঃ) ‘অবারাকাতুহ’র পর অন্য শব্দ বাড়তি বলতে অপছন্দ করতেন।[4]

কিন্তু সালামের জবাবে ‘অবারাকাতুহ’র পর ‘অমাগফিরাতুহ’ অতিরিক্ত করা সাহাবী যায়দ বিন আরকাম থেকে প্রমাণিত আছে। তিনি বলেন, ‘নবী (ﷺ) যখন আমাদেরকে সালাম দিতেন, তখন আমরা তার উত্তরে বলতাম, অআলাইকাস সালামু অরাহমাতুল্লাহি অবারাকাতুহু অমাগফিরাতুহ।’[5]

[1]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ১৯৪৪৬, তিরমিযী হা/২৬৮৯, সহীহ আবু দাঊদ ৪৩২৭, দারেমী আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ২৬৪০

[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৩৩২৬, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৮৪১

[3]. আবূ দাঊদ হা/৫২০৯, তিরমিযী হা/২৭২২, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১৪০৩

[4]. তামহীদ, ইবনু আব্দুল বার্র ৫/২৯৩

[5]. বুখারীর তারীখ কাবীর, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/১৪৪৯