কুরআন মাজীদ মুসলিম জীবনের জীবন-সংবিধান। এতে রয়েছে পথহারা মানুষের জন্য পথের দিশা, ইহ-পরকালে সুখ ও সমৃদ্ধির পথের সন্ধান।

এই কুরআনের যে সকল বৈশিষ্ট্য আছে তার মধ্যে কতিপয় এই যে-

এই কুরআন হল, মহান আল্লাহর মজবুত রশি।

এই কুরআন হল, সকল কিছুর বিবরণী-গ্রন্থ।

এই কুরআন হল, যুগান্তকারী আলোড়ন সৃষ্টিকারী।

এই কুরআন হল, তার অনুসারীর গৌরববৃদ্ধিকারী এবং তার বিরোধীর গৌরব ক্ষুণ্ণকারী।

এই কুরআন হল, সর্ব যুগের চ্যালেঞ্জ স্বরূপ।

এই কুরআন হল, অপরিবর্তিত ও অপরিবর্ধিত অবস্থায় কিয়ামত অবধি মানুষের পথপ্রদর্শক।

এই কুরআন হল, এমন গ্রন্থ; যার হিফাযতের দায়িত্ব নিয়েছেন খোদ তার অবতীর্ণকারী মহান আল্লাহ।

এই কুরআন হল, বিজ্ঞানময়; যার সাথে সঠিক জ্ঞান ও বিজ্ঞানের কোন সংঘর্ষ নেই।

এই কুরআন হল, সমস্ত গ্রন্থের সর্দার, গ্রন্থসম্রাট।

এই কুরআন হল, এমন গ্রন্থ; যার সত্যতায় কোন প্রকার সন্দেহ নেই।

এই কুরআন হল, মানুষের দৈহিক ও হার্দিক আধি ও ব্যাধির মহৌষধ।

এই কিতাবের দুটি আয়াত দুটি উষ্ট্রী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ! অনুরূপ ৩টি আয়াত ৩টি উষ্ট্রী, ৪টি আয়াত ৪টি উষ্ট্রী এবং এর চেয়ে অধিক সংখ্যক আয়াত ঐরূপ অধিক সংখ্যক উষ্ট্রী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ!’’[1]

নামাযের মধ্যে তিনটি আয়াত পাঠ করা তিনটি বড় বড় হৃষ্টপুষ্ট গাভিন উষ্ট্রী অপেক্ষা উত্তম!’’[2]

যখনই কোন জন-গোষ্ঠী আল্লাহর গৃহসমূহের কোন গৃহে (মসজিদে) সমবেত হয়ে আল্লাহর এই কিতাব তিলাওয়াত করে ও আপোসে অধ্যয়ন করে তখনই তাদের উপর প্রশান্তি অবতীর্ণ হয়, করুণা তাদেরকে আচ্ছাদিত করে, ফিরিশ্তাম-লী তাদেরকে বেষ্টন করে নেয়। আর আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তী ফিরিশ্তাবর্গের নিকট তাদের কথা উল্লেখ করে থাকেন----।[3]

এ কুরআন যে শিখে ও শিক্ষা দেয় সেই হল শ্রেষ্ঠ মানুষ। আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বশ্রেষ্ঠ, যে কুরআন শিখেছে এবং অপরকে শিক্ষা দিয়েছে।’’[4]

এই কুরআনের (শুদ্ধপাঠকারী ও পানির মত হিফয্কারী পাকা) হাফেয মহাসম্মানিত পূতচরিত্র লিপিকার (ফিরিশ্তাবর্গের) সঙ্গী হবে। আর যে ব্যক্তি (পাকা হিফয না থাকার কারণে) কুরআন পাঠে ‘ওঁ-ওঁ’ করে এবং পড়তে কষ্টবোধ করে তার জন্য রয়েছে দুটি সওয়াব।[5]

মানবম-লীর মধ্য হতে আল্লাহর কিছু বিশিষ্ট লোক আছে; আহ্লে কুরআন (কুরআন বুঝে পাঠকারী ও তদনুযায়ী আমলকারী ব্যক্তিরাই) হল আল্লাহর বিশেষ ও খাস লোক।’’[6]

কিয়ামতের দিন কুরআন উপস্থিত হয়ে বলবে, হে প্রভু! কুরআন পাঠকারীকে অলংকৃত করুন।’ সুতরাং তাকে সম্মানের মুকুট পরানো হবে। পুনরায় কুরআন বলবে, ‘হে প্রভু! ওকে আরো অলংকার প্রদান করুন।’ সুতরাং তাকে সম্মানের পোশাক পরানো হবে। অতঃপর বলবে, ‘হে প্রভু! আপনি ওর উপর সন্তুষ্ট হয়ে যান।’ সুতরাং আল্লাহ তার উপর সন্তুষ্ট হবেন। অতঃপর তাকে বলা হবে, ‘তুমি পাঠ করতে থাক আর মর্যাদায় উন্নীত হতে থাক।’ আর প্রত্যেকটি আয়াতের বিনিময়ে তার একটি করে সওয়াব বৃদ্ধি করা হবে।[7]

কুরআন তিলাওয়াতকারীকে বলা হবে, ‘পড়তে থাক ও মর্যাদায় উন্নীত হতে থাক। আর (ধীরে-ধীরে, শুদ্ধ ও সুন্দরভাবে কুরআন) আবৃত্তি কর; যেমন দুনিয়ায় অবস্থানকালে আবৃত্তি করতে যেহেতু যা তুমি পাঠ করতে তার সর্বশেষ আয়াতের নিকট তোমার স্থান হবে।’[8]

কুরআন তিলাওয়াতকারী যখন জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তাকে বলা হবে, ‘(কুরআন) পাঠ কর ও (জান্নাতের) মর্যাদায় উন্নীত হতে থাক। সুতরাং সে পাঠ করবে এবং প্রত্যেক আয়াতের বিনিময়ে একটি করে মর্যাদায় উন্নীত হবে। এই ভাবে সে তার (মুখস্ত করা) শেষ আয়াতটুকুও পড়ে ফেলবে।’’[9]

রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি এক রাতে একশ’টি আয়াত পাঠ করবে, সে ব্যক্তির আমলনামায় ঐ রাত্রির কিয়াম (নামাযের) সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে।’’[10]

এ কিতাবের একটি হরফ পাঠ করলে পাওয়া যায় দশটি সওয়াব।[11]

রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি চায় যে, সে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে (অধিক) ভালবাসুক অথবা আল্লাহ ও তাঁর রসূল তাকে ভালবাসুন, সে যেন কুরআন দেখে পাঠ করে।’’[12]

এই মহাগ্রন্থ তিলাওয়াত ও অধ্যয়নের বিভিন্ন আদব রয়েছে। সেই সকল আদব মান্য করা মুসলিমের কর্তব্য।

[1]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/৮০৩

[2]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/৫৫২

[3]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৬৯৯

[4]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫০২৭

[5]. একটি তিলাওয়াত ও দ্বিতীয়টি কষ্টের দরুন। মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/৭৯৮

[6]. আহমদ, নাসাঈ, বাইহাক্বী, হাকেম, সহীহুল জামে ২১৬৫

[7]. তিরমিযী, সহীহুল জামে ৮০৩০

[8]. আবু দাঊদ নাসাঈ, তিরমিযী, সহীহুল জামে ৮১২২

[9]. আহমদ, বাইহাকী, সহীহুল জামে ৮১২১

[10]. আহমদ, নাসাঈ, দারেমী, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৬৪৪

[11]. তিরমিযী, সহীহুল জা’মে হা/৬৪৬৯

[12]. সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/২৩৪২