পায়ের লেবাস মোজা ও জুতা। ইসলাম মুসলিমকে জুতা ব্যবহার করতে উদ্বুদ্ধ করে।[1] যেহেতু জুতা পরে পথ চললে কোন সওয়ারীর উপর চড়ে থাকার মত পা নিরাপদে থাকে, পথ চলতেও আরাম লাগে। জুতা পরার আদব রয়েছে ইসলামে, যা নিম্নরূপঃ

১। জুতা (ও মোজা) পরার সময় ডান পায়েরটা আগে পরুন এবং খোলার সময় বাম পায়েরটা আগে খুলুন।

প্রিয় রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘তোমাদের যখন কেউ জুতা পরে, তখন সে যেন ডান পা থেকে শুরু করে এবং যখন খোলে, তখন সে যেন বাম পা থেকে শুরু করে। যাতে ডান পায়ের জুতা আগে পরা হয় এবং শেষে খোলা হয়।’’[2]

প্রকাশ থাকে যে, কোন হিংস্র জন্তু মোজার ভিতরে লুকিয়ে থাকতে পারে -এই আশঙ্কায় তা ঝেড়ে পরা উত্তম। তবে তা না ঝেড়ে পরা নিষিদ্ধ হওয়ার হাদীস সহীহ নয়।[3]

২। জুতা পরার সময় যদি হাত লাগাতে হয় অথবা তার ফিতা বাঁধতে হয়, তাহলে পড়ে যাওয়ার ভয়ে বসে বসে পরুন। যেহেতু আল্লাহর রাসুল (ﷺ) খাড়া হয়ে জুতা পরতে নিষেধ করেছেন।[4]

৩। এক পায়ে জুতা দিয়ে পথ চলবেন না। হয়তো বা তাতে নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্যগত কোন ক্ষতি থাকতে পারে। অন্যের চোখে অসভ্য দেখাতে পারে। আর তা ছাড়া এক পায়ে জুতা দিয়ে চলে শয়তান। অতএব পথ চলতে একটি জুতা নষ্ট হয়ে গেলে, অপর জুতাটি পায়ে না রেখে উভয় জুতা হাতে নিয়ে পথ চলুন। এ ব্যাপারে একাধিক হাদীস রয়েছে।[5]

৪। কখনো কখনো খালি পায়েও পথ চলুন।

ফাযালাহ বিন উবাইদ যখন মিসরে (বা শামে) আমীর মুআবিয়ার নায়েব ছিলেন, তখন এক সাহাবী (মদীনা থেকে গিয়ে) তাঁকে দেখলেন, তিনি এলোমেলা বেশে অবস্থান করছেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি ব্যাপার যে, আমি আপনাকে এলোমেলা বেশে দেখছি, অথচ আপনি দেশের আমীর?’ উত্তরে তিনি বললেন, ‘যেহেতু আল্লাহর রাসুল (ﷺ) আমাদেরকে অতিরিক্ত বিলাসিতা করতে নিষেধ করেছেন।’ তিনি বললেন, ‘কিন্তু আপনার পায়ে জুতা দেখছি না কেন?’ উত্তরে ফাযালাহ বললেন, ‘যেহেতু রাসুল (ﷺ) আমাদেরকে কখনো কখনো খালি পায়ে চলতে আদেশ করতেন।’[6]

বলাই বাহুল্য যে, বিশেষ করে সবুজ ঘাসের উপর চলতে আধুনিক যুগের ডাক্তারগণও উপদেশ দিয়ে থাকেন। তাছাড়া তা মানুষের মাঝে বিনয় সৃষ্টি করে।

৫। খালি ময়দানে অথবা মাটির উপর নামায পড়লে এবং জুতা পরিষ্কার থাকলে জুতা পরেই নামায পড়ুন। অবশ্য পবিত্র হলেও কার্পেট বিছানো বা মেঝে বিশিষ্ট মসজিদের ভিতরে নিয়ে গিয়ে মসজিদ নোংরা করবেন না। বরং নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে নামায পড়ুন। চুরির ভয় হলে ব্যাগে নিয়ে কাছে রেখে নামায পড়ুন।

[1]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯৬

[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৮৫৬, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯৭ প্রমুখ

[3]. সিলসিলাহ যয়ীফাহ হা/২৪৪০

[4]. আবূ দাঊদ, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৭১৯

[5]. আহমাদ ৯১৯৯, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯৮, নাসাঈ হা/ ৫৩৬৯, বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৫৮৫৫, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৯৭, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৪৮

[6]. আহমাদ ২৩৪৪৯, আবূ দাঊদ হা/৪১৬০