ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ ৩. বিভ্রান্তির তাত্ত্বিক পর্যালোচনা ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি
৩. ১১. ১. ৮. আসমানী কারণ নিয়ন্ত্রণ করুন

অনেক সময় আমরা ভাবি যে, অমুক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা অমুক অন্যায় নির্মূল করব বা উন্নয়ন নিশ্চিত করব। আমরা ভুলে যায় যে, আমাদের পরিকল্পনার বাইরে মহান আল্লাহর ইচ্ছা ও সিদ্ধান্তই আমাদের সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করে। কুরআন ও হাদীস থেকে আমরা জানতে পারি যে, কিছু কিছু পাপ সমাজে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ছড়িয়ে পড়লে আল্লাহ সে সমাজে সামাজিক অবক্ষয় ও অশান্তি ছড়িয়ে দেন। আমরা যদি অবক্ষয় ও অশান্তির এ সকল কারণ দূর করতে না পারি তবে শত পরিকল্পনা ও প্রচেষ্টার পরেও অবক্ষয় ও অশান্তি আমাদের দেশ ও সমাজকে গ্রাস করবেই। এক প্রকারের অশান্তি দূর করলে অন্য প্রকারের অশান্তি আমাদের গ্রাস করবে। আমরা মহান আল্লাহর গযব ও শাস্তি থেকে পালাতে পারব না। বিভিন্ন হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, অশ্লীলতা, দুর্নীতি, ওজন, মাপ বা পরিমাপে কম দেওয়া, ন্যায়বিচারের অনুপস্থিতি ইত্যাদি এ জাতীয় পাপের অন্যতম। মহান আল্লাহ বলেন:

وَضَرَبَ اللَّهُ مَثَلًا قَرْيَةً كَانَتْ آمِنَةً مُطْمَئِنَّةً يَأْتِيهَا رِزْقُهَا رَغَدًا مِنْ كُلِّ مَكَانٍ فَكَفَرَتْ بِأَنْعُمِ اللَّهِ فَأَذَاقَهَا اللَّهُ لِبَاسَ الْجُوعِ وَالْخَوْفِ بِمَا كَانُوا يَصْنَعُونَ

‘‘আল্লাহ দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন এক জনপদের যা ছিল নিরাপদ ও নিশ্চিত, যেথায় আসত সবদিক থেকে প্রচুর জীবনোপকরণ, অতপর তারা আল্লাহর নিয়ামতের প্রতি অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল, ফলে তারা যা করত তার কারণে আল্লাহ তাদেরক আস্বাদ গ্রহণ করালেন ক্ষুধা ও ভীতির আচ্ছাদনের।’’ কাজেই আমরা যদি আল্লাহর নিয়ামতের অকৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতেই থাকি আর পাশাপাশি ক্ষুধা ও ভয়-সন্ত্রাসের বেড়াজাল থেকে বের হতে চেষ্টা করি তবে চেষ্টা অনেক হলেও ফল আশানুরূপ হবে না। ক্ষুধা ও ভয়ের একটি জাল ছিন্ন করলে অন্য জাল আমাদের জড়াবে। আল্লাহ আরো বলেন:


إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَنْ تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ

‘‘যারা পছন্দ করে যে, মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতার প্রসার ঘটুক তাদের জন্য পৃথিবীতে এবং আখিরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আর আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।’’
কাজেই আমরা অশ্লীলতার প্রচার, প্রসার ও বিপনন অব্যাহত রেখে মহা-পরিকল্পনার মাধ্যমে সমাজ থেকে ‘যন্ত্রণা দায়ক শাস্তি ’ দূর বা প্রতিরোধ করতে সক্ষম হব বলে চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই।
এ অর্থের অন্যান্য আয়াত ও হাদীসের আলোকে আমরা বিশ্বাস করি যে, অশ্লীলতা, ভেজাল, মাপ বা পরিমাপে কম প্রদান, প্রতারণা, জুলুম, হত্যাকান্ড, ন্যায়বিচারের দুষ্প্রাপ্যতা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ না করলে বিভিন্নভাবে সমাজে আল্লাহর শাস্তি ও গযব আসবেই। এগুলি রোধ করতে এবং সকল নাগরিকের জন্য বৈষম্যহীন ন্যায়বিচার লাভের সুযোগ নিশ্চিত করতে সমাজের সকল নাগরিক ও সরকারকে সচেতন প্রচেষ্টা চালাতে হবে। এর পাশাপাশি সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও অন্যান্য সকল ‘দুনিয়াবী যন্ত্রণা দায়ক শাস্তি’ সমাজ থেকে নির্মূল বা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালাতে হবে। তাহলেই আমরা আশানুরূপ ফল পাব, ইনশা আল্লাহ।