হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি
১০৫. অসিয়ত বা দানের ক্ষেত্রে সন্তানদের কাউকে প্রাধান্য দিয়ে অন্যের ক্ষতি করা

অসিয়ত বা দানের ক্ষেত্রে সন্তানদের কাউকে প্রাধান্য দিয়ে অন্যের ক্ষতি করা হারাম ও কবীরা গুনাহ্।

মূলতঃ কারোর নিজ কোন সন্তানের জন্য কোন কিছুর অসিয়ত করাই না জায়িয। কারণ, সে তো ওয়ারিশ। আর ওয়ারিশের জন্য অসিয়ত করা তো কোন প্রকারেই জায়িয নয়। সুতরাং কোন সন্তানের জন্য কোন কিছুর অসিয়ত করা মানেই অন্য সন্তানের ক্ষতি করা।

আবূ উমামাহ্ বাহিলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ اللهَ قَدْ أَعْطَى كُلَّ ذِيْ حَقٍّ حَقَّهُ، فَلَا وَصِيَّةَ لِوَارِثٍ.

‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তা‘আলা প্রত্যেক পাওনাদারকে তার পাওনা দিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং ওয়ারিশের জন্য আর কোন অসিয়ত চলবে না’’।

(আবূ দাউদ ২৮৭০ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ২৭৬৩)

তেমনিভাবে কোন ধর্মীয় ক্ষেত্র অথবা কোন ব্যক্তির জন্য সম্পদের এক তৃতীয়াংশের বেশি অসিয়ত করাও নিজ সন্তানদের ক্ষতি সাধন করার শামিল।

সা’দ্ বিন্ আবী ওয়াক্কাস্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি মক্কা বিজয়ের বছর রোগাক্রান্ত হই। এমনকি মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তেই পৌঁছে গিয়েছিলাম। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে দেখতে আসলেন। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বললাম: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমার তো অনেকগুলো সম্পদ। তবে একটি মেয়ে ছাড়া আমার আর কোন ওয়ারিশ নেই। আমি কি আমার সম্পদের দুই তৃতীয়াংশ সাদাকা করে দেবো? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না। আমি বললাম: তা হলে অর্ধেক সম্পদ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না। আমি বললাম: তা হলে এক তৃতীয়াংশ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ঠিক আছে এক তৃতীয়াংশ। তবে তাও অনেক বেশি। তিনি আরো বললেন:

أَنْ تَذَرَ وَرَثَتَكَ أَغْنِيَاءَ خَيْرٌ مِنْ أَنْ تَذَرَهُمْ عَالَةً يَتَكَفَّفُوْنَ النَّاسَ.

‘‘তুমি তোমার সন্তানদেরকে ধনী রেখে যাওয়া তোমার জন্য অনেক উত্তম তাদের গরীব রেখে যাওয়ার চাইতে যাতে তারা মানুষের কাছে হাত পাতে’’। (আবূ দাউদ ২৮৬৪; ইব্নু মাজাহ্ ২৭৫৮)

যারা জীবিত থাকতেই সময় মতো আল্লাহ্’র রাস্তায় সাদাকা করে না তারা মৃত্যু ঘনিয়ে আসলে এলোমেলোভাবে সাদাকা করে নিজ ওয়ারিশদের ক্ষতি সাধন করে।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা জনৈক ব্যক্তি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে জিজ্ঞাসা করলো: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! কোন ধরনের সাদাকা উত্তম? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

أَنْ تَصَدَّقَ وَأَنْتَ صَحِيْحٌ حَرِيْصٌ، تَأْمُلُ الْبَقَاءَ، وَتَخْشَى الْفَقْرَ، وَلَا تُمْهِلْ، حَتَّى إِذَا بَلَغَتِ الْحُلْقُوْمَ قُلْتَ: لِفُلَانٍ كَذَا، لِفُلَانٍ كَذَا، وَقَدْ كَانَ لِفُلَانٍ.

‘‘তুমি সাদাকা করবে যখন তুমি সুস্থ থাকো এবং সম্পদের প্রতি তোমার লোভ থাকে। দুনিয়ায় থাকার ইচ্ছা এবং দরিদ্রতার ভয় পাও। সাদাকা করতে দেরি করো না কিন্তু। এমন যেন না হয়, রূহ গলায় পৌঁছে গেলো। আর তুমি বললে: অমুকের জন্য এতো। অমুকের জন্য এতো; মূলতঃ তা অন্যের জন্যই’’। (আবূ দাউদ ২৮৬৫)

কোন সন্তানকে এককভাবে কোন কিছু দান করা যাবে না। বরং দিতে চাইলে সবাইকে সমানভাবেই দিতে হবে। নতুবা স্বেচ্ছায় অন্য সন্তানের ক্ষতি সাধন করা হবে।

নু’মান বিন্ বাশীর (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমার মা আমার পিতার নিকট আমার জন্য কিছু বিশেষ দান চাইলে তিনি আমাকে একটি গোলাম দান করেন। তখন আমার মা বললেন: আমি এতে সন্তুষ্ট হবো না যতক্ষণ না রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে এ ব্যাপারে সাক্ষী বানাবেন। তখন আমার পিতা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট এসে বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আমি ‘আমরাহ্ বিন্তে রাওয়াহার গর্ভজাত ছেলে তথা আমারই সন্তান নু’মানকে একটি গোলাম দিয়েছি। সে এ ব্যাপারে আপনাকে সাক্ষী বানাতে চায়। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন:

أَكُلَّ وَلَدِكَ نَحَلْتَ مِثْلَهُ ؟ قَالَ: لَا، قَالَ: فَارْجِعْهُ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: فَاتَّقُوْا اللهَ وَاعْدِلُوْا بَيْنَ أَوْلَادِكُمْ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: لَا تُشْهِدْنِيْ عَلَى جَوْرٍ، وَفِيْ رِوَايَةٍ: أَلَيْسَ يَسُرُّكَ أَنْ يَّكُوْنُوْا لَكَ فِيْ الْبَرِّ سَوَاءً ؟ قَالَ: بَلَى، قَالَ: فَلَا إِذًا.

‘‘তোমার সকল সন্তানকেই এমন করে একটি একটি গোলাম দিয়েছো? তিনি বললেন: না। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সুতরাং তা ফেরৎ নিয়ে নাও। অন্য বর্ণনায় রয়েছে, আল্লাহ্কে ভয় করো এবং সন্তানদের মাঝে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করো। অন্য বর্ণনায় আরো রয়েছে, আমাকে যুলুমের সাক্ষী বানিও না। আরেকটি বর্ণনায় রয়েছে, তোমার কি মনে চায় না যে, তোমার সকল সন্তান তোমার সাথে সমানভাবেই ভালো ব্যবহার দেখাক? তিনি বললেন: অবশ্যই। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তা হলে তুমি নু’মানকে এককভাবে একটি গোলাম দিতে পারো না’’। (বুখারী ২৫৮৬, ২৫৮৭, ২৬৫০; মুসলিম ১৬২৩; ইব্নু মাজাহ্ ২৪০৪, ২৪০৫)

এ যুলুম থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই যদি কেউ তার সন্তানকে কোন কিছু এককভাবে দিয়ে দেয় তা ফেরত নেয়ার বিধান রাখা হয়েছে; যদিও তা অন্যের ক্ষেত্রে জায়িয নয়।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ ’উমর ও আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَحِلُّ لِرَجُلٍ أَنْ يُّعْطِيَ عَطِيَّةً، أَوْ يَهَبَ هِبَةً فَيَرْجِعَ فِيْهَا، إِلاَّ الْوَالِدَ فِيْمَا يُعْطِيْ وَلَدهُ، وَمَثَلُ الَّذِيْ يُعْطِيْ الْعَطِيَّةَ ثُمَّ يَرْجِعُ فِيْهَا، كَمَثَلِ الْكَلْبِ يَأْكُلُ، فَإِذَا شَبِعَ قَاءَ، ثُمَّ عَادَ فِيْ قَيْئِهِ.

‘‘কোন ব্যক্তির জন্য জায়িয নয় যে, সে কাউকে কোন কিছু দিয়ে তা আবার ফেরৎ নিবে। তবে পিতা তার সন্তানকে কোন কিছু দিয়ে তা আবার ফেরৎ নিতে পারে। যে ব্যক্তি কাউকে কোন কিছু দিয়ে তা আবার ফেরৎ নেয় সে যেন কুকুরের ন্যায়। পেট ভরে খাদ্য খেয়ে বমি করলো এবং আবারো সেই বমি খোলো’’। (আবূ দাউদ ৩৫৩৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৪০৬)

তবে কোন সন্তানকে প্রয়োজনের খাতিরে কোন কিছু দিলে তা অন্যকেও সমভাবে দিতে হবে এমন নয় যতক্ষণ না তারো প্রয়োজন দেখা দেয়। যেমন: কেউ স্কুল, কলেজ অথবা মাদ্রাসায় পড়াশুনা করে তখন তার খরচ কিংবা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার চিকিৎসা খরচ ইত্যাদি ইত্যাদি। তবে তাকে দেয়ার সময় অন্য জনেরও এমন প্রয়োজন দেখা দিলে তাকেও দিবে এ মানসিকতা থাকতে হবে।