হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি
৬৩. আল্লাহ্ তা‘আলার পাকড়াও থেকে নিজকে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ মনে করা

আল্লাহ্ তা‘আলার পাকড়াও থেকে নিজকে সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ মনে করাও আরেকটি কবীরা গুনাহ্। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন:

«أَفَأَمِنُوْا مَكْرَ اللهِ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ اللهِ إِلاَّ الْقَوْمُ الْـخَاسِرُوْنَ»

‘‘তারা কি নিজেদেরকে আল্লাহ্ তা‘আলার সূক্ষ্ম পাকড়াও থেকে নিরাপদ মনে করে? বস্ত্তত: একমাত্র ক্ষতিগ্রস্তরাই আল্লাহ্ তা‘আলার পাকড়াও থেকে নি:শঙ্ক হতে পারে’’। (আ’রাফ : ৯৯)

আল্লাহ্ তা‘আলা আরো বলেন:

«إِنَّ الَّذِيْنَ لَا يَرْجُوْنَ لِقَآءَنَا وَرَضُوْا بِالْـحَيَاةِ الدُّنْيَا وَاطْمَأَنُّوْا بِهَا، وَالَّذِيْنَ هُمْ عَنْ آيَاتِنَا غَافِلُوْنَ، أُوْلَآئِكَ مَأْوَاهُمُ النَّارُ بِمَا كَانُوْا يَكْسِبُوْنَ»

‘‘যারা (পরকালে) আমার সাথে সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না এবং যারা পার্থিব জীবন নিয়েই পরিতৃপ্ত ও নিশ্চিন্ত থাকে এবং যারা আমার নিদর্শনাবলী সম্বন্ধেও গাফিল তাদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম। তা একমাত্র তাদেরই কার্যকলাপের কারণে’’। (ইউনুস : ৭-৮)

আল্লাহ্ তা‘আলার পাকড়াও থেকে নিজকে নিরাপদ মনে করা এটাও যে, বান্দাহ্ গুনাহ্ করতে থাকবে এবং আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ক্ষমার আশা করবে।

ইসমাঈল বিন রাফি’ (রাহিমাহুল্লাহ্) বলেন:

مِنَ الَامْنِ مِنْ مَكْرِ اللهِ إِقَامَةُ الْعَبْدِ عَلَى الذَّنْبِ يَتَمَنَّى عَلَى اللهِ الْـمَغْفِرَةَ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলার সূক্ষ্ম পাকড়াও থেকে নির্ভয় হওয়ার মানে এও যে, বান্দাহ্ গুনাহ্ করতে থাকবে এবং আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট ক্ষমার আশা করবে’’। (আল্ ইরশাদ্ : ৮০)

আমি বা আপনি যতই নেক আমল করি না কেন তাতে গর্বের কিছুই নেই এবং তাতে আল্লাহ্ তা‘আলার পাকড়াও থেকে নিজকে নিরাপদ মনে করারও কোন যৌক্তিকতা নেই। কারণ, আমরা এ ব্যাপারে নিশ্চিত নই যে, আমাদের আমলগুলো আল্লাহ্ তা‘আলা সর্বদা কবুল করছেন। আর কবুল করে থাকলেও আমরা এ ব্যাপারেও নিশ্চিত নই যে, আমরা সর্বদা এ জাতীয় আমল করার সুযোগ পাবো। এ কারণে সর্বদা আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট নেক আমলের উপর টিকে থাকার দো‘আ করতে হবে।

আবার কেউ কেউ তো এমনো আছে যে, সে আমল ততো বেশি করে না ঠিকই এরপরও আরেক জনের ব্যাপারে এতটুকু বলতে দ্বিধা করে না যে, আমরা তো অন্তত এতটুকু হলেও করছি। অমুক তো এতটুকুও করছে না। আপনি কি নিশ্চিত যে, আপনার এতটুকু আমলই আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে কবুল হয়ে যাচ্ছে। বরং সবারই উচিৎ সর্বদা আল্লাহ্ তা‘আলাকে ভয় করা এবং নিজের গুনাহ্’র কথা স্মরণ করে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্বদা কান্নাকাটি করা। সাথে সাথে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট দ্বীনের উপর অটল থাকার দো‘আ করা।

’উক্ববাহ্ বিন্ ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে উদ্দেশ্য করে বললাম: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! নাজাত পাওয়া যাবে কিভাবে? তিনি বললেন:

أَمْسِكْ عَلَيْكَ لِسَانَكَ، وَلْيَسَعْكَ بَيْتُكَ، وَابْكِ عَلَى خَطِيْئَتِكَ.

‘‘জিহবাকে নিয়ন্ত্রণ করো, নিজ ঘরেই অবস্থান করো এবং গুনাহ্’র জন্য আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট কান্নাকাটি করো। (তিরমিযী ২৪০৬)

শাহ্র বিন্ ’হাউশাব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

قُلْتُ لِأُمِّ سَلَمَةَ: يَا أُمَّ الْـمُؤْمِنِيْنَ! مَا كَانَ أَكْثَرُ دُعَاءِ رَسُوْلِ اللهِ إِذَا كَانَ عِنْدَكِ؟ قَالَتْ: كَانَ أَكْثَرُ دُعَائِهِ: يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ! ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلَى دِيْنِكَ، قَالَتْ: فَقُلْتُ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! مَا أَكْثَرَ دُعَاءَكَ: يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوْبِ! ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلَى دِيْنِكَ ؟! قَالَ: يَا أُمَّ سَلَمَةَ! إِنَّهُ لَيْسَ آدَمِيٌّ؛ إِلاَّ وَقَلْبُهُ بَيْنَ أُصْبُعَيْنِ مِنْ أَصَابِعِ اللهِ ؛ فَمَنْ شَاءَ أَقَامَ، وَمَنْ شَاءَ أَزَاغَ، فَتَلَا مُعَاذٌ: «رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوْبَنَا بَعْدَ إِذْ هَدَيْتَنَا»

‘‘আমি উম্মে সালামাহ্ (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) কে বললাম: হে উম্মুল মু’মিনীন! আপনার নিকট থাকাবস্থায় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অধিকাংশ সময় কি দো‘আ করতেন? তিনি বললেন: অধিকাংশ সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেন: হে অন্তর পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনি ইসলামের উপর অটল অবিচল রাখুন। উম্মে সালামাহ্ (রাঃ) বললেন: আমি বললাম: হে আল্লাহ্’র রাসূল! আপনাকে দেখছি আপনি অধিকাংশ সময় উপরোক্ত দো‘আ করেন। মূলতঃ এর রহস্য কি? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: হে উম্মে সালামাহ্! প্রতিটি মানুষের অন্তর আল্লাহ্ তা‘আলার দু’টি আঙ্গুলের মধ্যে অবস্থিত। ইচ্ছে করলে তিনি কারোর অন্তর সঠিক পথে পরিচালিত করেন। আর ইচ্ছে করলে তিনি কারোর অন্তর বক্র পথে পরিচালিত করেন। বর্ণনাকারী মু‘আয বলেন: এ জন্যই আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরকে সর্বদা তাঁর নিকট নিম্নোক্ত দো‘আ করতে আদেশ করেন যার অর্থ:

হে আমার প্রভু! আপনি আমাদেরকে হিদায়াত দিয়েছেন। অতএব আমাদের অন্তরকে আর বক্র পথে পরিচালিত করবেন না। (তিরমিযী ৩৫২২)