হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি

যে কোন প্রাণীর চিত্রাঙ্কন করাও কবীরা গুনাহ্’র অন্যতম। কিয়ামতের দিন এ জাতীয় চিত্রাঙ্কনকারীরা কঠিন শাস্তি ভোগ করবে।

আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস’ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন:

إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْـمُصَوِّرُوْنَ.

‘‘নিশ্চয়ই কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট সর্ব কঠিন
শাস্তির অধিকারী হবে ওরা যারা (বিনা প্রয়োজনে) ছবি তোলে বা তৈরি করে’’। (বুখারী ৫৯৫০; মুসলিম ২১০৯)

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সফর থেকে ফিরে এসে দেখলেন, আমি আমার বৈঠকখানা তথা খেলনাপাতি রাখার জায়গাকে এমন একটি পর্দা দিয়ে ঢেকে দিয়েছি যার উপর কিছু ছবি অঙ্কিত ছিলো। তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা ছিঁড়ে ফেললেন এবং বললেন:

أَشَدُّ النَّاسِ عَذَابًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ الَّذِيْنَ يُضَاهُوْنَ بِخَلْقِ اللهِ.

‘‘কিয়ামতের দিন সর্ব কঠিন শাস্তির অধিকারী হবে ওরা যারা আল্লাহ্ তা‘আলার সৃষ্টির ন্যায় কোন কিছু বানাতে চায়’’।

(বুখারী ৫৯৫৪; মুসলিম ২১০৭; বাগাওয়ী ৩২১৫ নাসায়ী : ৮/২১৪ বায়হাক্বী : ২৬৯)

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) বলেন: অতঃপর আমি সে ছিঁড়া পর্দাটি দিয়ে হেলান দেয়ার জন্য একটি বা দু’টি তাকিয়া বানিয়ে নিয়েছি।

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন:

كُلُّ مُصَوِّرٍ فِيْ النَّارِ، يُجْعَلُ لَهُ بِكُلِّ صُوْرَةٍ صَوَّرَهَا نَفْسٌ فَتُعَذِّبُهُ فِيْ جَهَنَّمَ.

‘‘প্রত্যেক ছবিকার জাহান্নামী। প্রত্যেক ছবির পরিবর্তে তার জন্য একটি করে প্রাণী ঠিক করা হবে যে তাকে সর্বদা জাহান্নামের মধ্যে শাস্তি দিতে থাকবে’’। (মুসলিম ২১১০)

‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ ‘আববাস্ (রা.) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: আমি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন:

مَنْ صَوَّرَ صُوْرَةً فِيْ الدُّنْيَا كُلِّفَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ أَنْ يَنْفُخَ فِيْهَا الرُّوْحَ، وَلَيْسَ بِنَافِخٍ.

‘‘যে ব্যক্তি দুনিয়াতে কোন ছবি এঁকেছে কিয়ামতের দিন তাকে এ ছবিগুলোতে রূহ্ দিতে বলা হবে। কিন্তু সে কখনোই তা করতে পারবে না’’।

(বুখারী ২২২৫, ৫৯৬৩, ৭০৪২; মুসলিম ২১১০; বাগাওয়ী ৩২১৯ নাসায়ী : ৮/২১৫ ইব্নু আবী শাইবাহ্ : ৮/৪৮৪-৪৮৫; আহমাদ : ১/২৪১, ৩৫০; ত্বাবারানী/কাবীর ১২৯০০)

‘আয়েশা (রাযিয়াল্লাহু আন্হা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

إِنَّ أَصْحَابَ هَذِهِ الصُّوَرِ يُعَذَّبُوْنَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، يُقَالُ لَـهُمْ: أَحْيُوْا مَا خَلَقْتُمْ، وَإِنَّ الْـمَلَآئِكَةَ لَا تَدْخُلُ بَيْتًا فِيْهِ الصُّوْرَةُ.

‘‘নিশ্চয়ই এ সকল ছবিকারদেরকে কিয়ামতের দিন কঠিন শাস্তি দেয়া হবে। তাদেরকে বলা হবে: তোমরা যা বানিয়েছো তাতে জীবন দাও। কিন্তু তারা কখনো তা করতে পারবে না। নিশ্চয়ই ফিরিশ্তারা এমন ঘরে প্রবেশ করেন না যে ঘরে ছবি রয়েছে’’। (বুখারী ২১০৫, ৫৯৫৭; মুসলিম ২১০৭)

আল্লাহ্ তা‘আলা চিত্রাঙ্কনকারীদেরকে সর্ব বৃহৎ জালিম বলে আখ্যায়িত করেছেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেন:

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ ذَهَبَ يَخْلُقُ كَخَلْـقِيْ، فَلْيَخْلُقُوْا حَبَّةً، وَلْيَخْلُقُوْا ذَرَّةً، وَلْيَخْلُقُوْا شَعِيْرَةً.

‘‘ওই ব্যক্তির ন্যায় জালিম আর কেউ হতে পারে না? যে আমার সৃষ্টির ন্যায় কোন কিছু বানাতে চায়। মূলতঃ সে কখনোই তা করতে পারবে না। যদি সে তা করতে পারবে বলে দাবি করে তাহলে সে যেন একটি দানা, একটি পিঁপড়া এবং একটি যব বানিয়ে দেখায়’’। (বুখারী ৫৯৫৩, ৭৫৫৯; মুসলিম ২১১১ বায়হাক্বী : ৭/২৬৮; বাগাওয়ী ৩২১৭ ইব্নু আবী শাইবাহ্ : ৮/৪৮৪; আহমাদ : ২/২৫৯, ৩৯১, ৪৫১, ৫২৭)

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

تَخْرُجُ عُنُقٌ مِنَ النَّارِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، لَهَا عَيْنَانِ تُبْصِرَانِ، وَأُذُنَانِ تَسْمَعَانِ، وَلِسَانٌ يَنْطِقُ، يَقُوْلُ: إِنِّيْ وُكِّلْتُ بِثَلَاثَةٍ: بِكُلِّ جَبَّارٍ عَنِيْدٍ، وَبِكُلِّ مَنْ دَعَا مَعَ اللهِ إِلَهًا آخَرَ، وَبِالْـمُصَوِّرِيْنَ.

‘‘কিয়ামতের দিন জাহান্নাম থেকে ঘাড় সহ একটি মাথা বের হবে যার দু’টি চোখ হবে যা দিয়ে সে দেখবে, দু’টি কান হবে যা দিয়ে সে শুনবে এবং একটি জিহবা হবে যা দিয়ে সে কথা বলবে। সে বলবে: তিন জাতীয় মানুষকে শাস্তি দেয়ার জন্য আমাকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে তারা হচ্ছে, প্রত্যেক প্রভাবশালী গাদ্দার, প্রত্যেক এমন ব্যক্তি যে আল্লাহ্ তা‘আলার সাথে অন্য কাউকে শরীক করেছে এবং ছবি অঙ্কনকারীরা’’। (তিরমিযী ২৫৭৪; আহমাদ ৮৪৩০)

কারোর ঘরে কোন প্রাণীর ছবি থাকলে সে ঘরে রহমতের ফিরিশতা প্রবেশ করবেন না।

আবূ ত্বাল্হা (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا تَدْخُلُ الْـمَلَائِكَةُ بَيْتًا فِيْهِ كَلْبٌ وَلَا تَصَاوِيْرُ.

‘‘যে ঘরে কুকুর এবং (কোন প্রাণীর) ছবি রয়েছে সে ঘরে (রহমতের) ফিরিশ্তা প্রবেশ করবেন না’’। (বুখারী ৫৯৪৯; মুসলিম ২১০৬)