হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি

চুরি এমন একটি মারাত্মক অপরাধ যা মানুষের ধন-সম্পদের নিরাপত্তায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে এবং সামাজিক বিশৃঙ্খলা ঘটায়।

অভিধানের পরিভাষায় চুরি বলতে কারোর কোন জিনিস সুকৌশলে লুক্কায়িতভাবে নিয়ে নেওয়াকে বুঝানো হয়।

শরীয়তের পরিভাষায় চুরি বলতে যথাযথভাবে সংরক্ষিত কারোর কোন মূল্যবান সম্পদ লুক্কায়িতভাবে নিয়ে নেওয়াকে বুঝানো হয় যা নিজের বলে তার কোন সন্দেহ নেই।

চুরি তো চুরিই। তবে তুচ্ছ কোন জিনিস চুরি করা যা অন্যের কাছে চাইলে এমনিতেই পাওয়া যায় তা হচ্ছে নিকৃষ্টতম চুরি। এ জাতীয় চোরকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিশেষভাবে লা’নত করেন।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَعَنَ اللهُ السَّارِقَ، يَسْرِقُ الْبَيْضَةَ فَتُقْطَعُ يَدُهُ، وَيَسْرِقُ الْـحَبْلَ فَتُقْطَعُ يَدُهُ.

‘‘আল্লাহ্ তা‘আলা লা’নত করেন এমন চোরকে যার হাত খানা কাটা গেলো একটি লোহার টুপি অথবা এক খানা রশি চুরির জন্য’’।

(বুখারী ৬৭৮৩; মুসলিম ১৬৮৭)

এর চাইতেও আরো নিকৃষ্ট চুরি হচ্ছে হজ্জ কিংবা ’উমরাহ্ পালনকারীদের প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র বা পথখরচা চুরি করা। তাতে পবিত্র ভূমির সম্মানও ক্ষুণ্ণ হয় এবং আল্লাহ্ তা‘আলার মেহ্মানদেরকে কষ্ট দেয়া হয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূর্য গ্রহণ কালীন নামায পড়ার সময় তাঁর সম্মুখে জাহান্নাম উপস্থাপিত করা হলে তিনি তাতে এ জাতীয় একজন চোর দেখতে পান। তিনি বলেন:

وَحَتَّى رَأَيْتُ فِيْهَا صَاحِبَ الْـمِحْجَنِ يَجُرُّ قُصْبَهُ فِيْ النَّارِ، كَانَ يَسْرِقُ الْـحَاجَّ بِمِحْجَنِهِ، فَإِنْ فُطِنَ لَهُ قَالَ: إِنَّمَا تَعَلَّقَ بِمِحْجَنِيْ، وَإِنْ غُفِلَ عَنْهُ ذَهَبَ بِهِ.

‘‘এমনকি আমি জাহান্নামে সে মাথা বাঁকানো লাঠি ওয়ালাকে দেখতে পেলাম যে নিজ নাড়িভুঁড়ি টেনে বেড়াচ্ছে। সে নিজ লাঠিটি দিয়ে হাজীদের আসবাবপত্র চুরি করতো। ধরা পড়ে গেলে সে বলতো: এটা তো আমার আংটায় এমনিতেই লেগে গেলো। আর কেউ টের না পেলে সে জিনিসটি নিয়ে চলে যেতো’’। (মুসলিম ৯০৪)

চোর চুরি করার সময় ঈমানদার থাকে না।

আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে আরো বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:

لَا يَزْنِيْ الزَّانِيْ حِيْنَ يَزْنِيْ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَسْرِقُ حِيْنَ يَسْرِقُ وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَلَا يَشْرَبُ الْـخَمْرَ حِيْنَ يَشْرَبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ ؛ وَلَا يَنْتَهِبُ نُهْبَةً يَرْفَعُ النَّاسُ إِلَيْهِ فِيْهَا أَبْصَارَهُمْ حِيْنَ يَنْتَهِبُهَا وَهُوَ مُؤْمِنٌ، وَالتَّوْبَةُ مَعْرُوْضَةٌ بَعْدُ.

‘‘ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ পানকারী যখন মদ পান করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। লুটেরা যখন মানব জনসম্মুখে লুট করে তখনও সে ঈমানদার থাকে না। তবে এরপরও তাদেরকে তাওবা করার সুযোগ দেয়া হয়’’।

(বুখারী ২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০; মুসলিম ৫৭; আবূ দাউদ ৪৬৮৯; ইব্নু মাজাহ্ ৪০০৭)