হারাম ও কবিরা গুনাহ হারাম ও কবীরা গুনাহ্ পরিচিতি মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি

কারোর ব্যাপারে মদ অথবা মাদকদ্রব্য পান কিংবা সেবন করে নেশাগ্রস্ত হওয়া প্রমাণিত হয়ে গেলে তাকে আশিটি বেত্রাঘাত করা হবে। সে যতবারই পান করে ধরা পড়বে ততবারই তার উপর উক্ত দন্ডবিধি প্রয়োগ করা হবে। তবে তাকে এ জন্য কখনোই হত্যা করা হবে না। যা সকল গবেষক ’উলামাদের ঐকমত্যে প্রমাণিত।

মু‘আবিয়া ও আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) থেকে বর্ণিত তাঁরা বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদখোর সম্পর্কে বলেন:

إِذَا سَكِرَ وَفِيْ رِوَايَةٍ: إِذَا شَرِبَ الْـخَمْرَ فَاجْلِدُوْهُ، فَإِنْ عَادَ فَاجْلِدُوْهُ، فَإِنْ عَادَ فَاجْلِدُوْهُ، ثُمَّ قَالَ فِيْ الرَّابِعَةِ: فَإِنْ عَادَ فَاضْرِبُوْا عُنُقَهُ.

‘‘যখন কেউ (কোন নেশাকর দ্রব্য সেবন করে) নেশাগ্রস্ত হয় অন্য বর্ণনায় রয়েছে, যখন কেউ মদ পান করে তখন তোমরা তাকে বেত্রাঘাত করবে। আবারো নেশাগ্রস্ত হলে আবারো বেত্রাঘাত করবে। আবারো নেশাগ্রস্ত হলে আবারো বেত্রাঘাত করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চতুর্থবার বললেন: আবারো নেশাগ্রস্ত হলে তার গর্দান উড়িয়ে দিবে’’।

(আবূ দাউদ ৪৪৮২; তিরমিযী ১৪৪৪; ইব্নু মাজাহ্ ২৬২০; নাসায়ী ৫৬৬১; আহমাদ ৪/৯৬)

ইমাম তিরমিযী (রাহিমাহুল্লাহ্) জাবির ও ক্বাবীস্বাহ্ (রা.) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট চতুর্থবার মদ পান করেছে এমন ব্যক্তিকে নিয়ে আসা হলে তিনি তাকে মেরেছেন। তবে হত্যা করেননি।

আনাস্ বিন্ মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:

أُتِيَ بِرَجُلٍ عِنْدَ النَّبِيِّ  قَدْ شَرِبَ الْـخَمْرَ، فَجَلَدَهُ بِجَرِيْدَتَيْنِ نَحْوَ أَرْبَعِيْنَ، وَفَعَلَهُ أَبُوْ بَكْرٍ، فَلَمَّا كَانَ عُمَرُ اسْتَشَارَ النَّاسَ، فَقَالَ عَبْدُ الرَّحْمَنُ بْنُ عَوْفٍ: أَخَفُّ الْحُدُوْدِ ثَمَانُوْنَ، فَأَمَرَ بِهِ عُمَرُ.

‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট একদা জনৈক মদ্যপায়ীকে নিয়ে আসা হলে তিনি তাকে পাতা বিহীন দু’টি খেজুরের ডাল দিয়ে চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। আবূ বকর (রাঃ) ও তাঁর খিলাফতকালে তাই করেছিলেন। তবে ’উমর (রাঃ) যখন খলীফা হলেন তখন তিনি সাহাবাদের সঙ্গে পরামর্শ করলেন। তখন আব্দুর রহ্মান বিন্ ‘আউফ্ (রাঃ) বললেন: সর্বনিম্ন দন্ডবিধি হচ্ছে আশিটি বেত্রাঘাত। তখন ’উমর (রাঃ) তাই বাস্তবায়নের আদেশ করেন। (বুখারী ৬৭৭৩; মুসলিম ১৭০৬; আবূ দাউদ ৪৪৭৯)

আনাস্ (রাঃ) থেকে এও বর্ণিত তিনি বলেন:

كَانَ رَسُوْلُ اللهِ  يَضْرِبُ فِيْ الْـخَمْرِ بِالنِّعَالِ وَالْـجَرِيْدِ.

‘‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদ্যপানের শাস্তি স্বরূপ মদ্যপায়ীকে জুতো ও খেজুরের ডাল দিয়ে পেটাতেন’’। (আবূ দাউদ ৪৪৭৯; ইব্নু মাজাহ্ ২৬১৮)

’হুযাইন্ বিন্ মুন্যির আবূ সাসান্ (রাহিমাহুল্লাহ্) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: একদা আমি ’উস্মান (রাঃ) এর নিকট উপস্থিত হলাম। তখন ওয়ালীদ্ বিন্ ’উক্ববাহ্কেও তাঁর নিকট উপস্থিত করা হলো। সে মানুষকে ফজরের দু’ রাক‘আত্ নামায পড়িয়ে দিয়ে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলো: তোমাদেরকে আরো কয়েক রাক্‘আত্ বেশি পড়িয়ে দেবো কি? তখন দু’জন ব্যক্তি তার ব্যাপারে সাক্ষ্য দিলো। তাদের একজন তার ব্যাপারে এ বলে সাক্ষ্য দিলো যে, সে মদ পান করেছে। অপরজন এ বলে সাক্ষ্য দিলো যে, সে তাকে বমি করতে দেখেছে। তখন ’উস্মান (রাঃ) বললেন: সে মদ পান করেছে বলেই তো বমি করেছে? তখন তিনি ‘আলী (রাঃ) কে বললেন: হে ‘আলী! দাঁড়াও। ওকে বেত্রাঘাত করো। ‘আলী (রাঃ) তাঁর ছেলে হাসান্ (রাঃ) কে বললেন: হে হাসান! দাঁড়াও। ওকে বেত্রাঘাত করো। তখন হাসান্ (রাঃ) রাগাম্বিত স্বরে বললেন: বেত্রাঘাত সেই করুক যে উক্ত সিদ্ধান্ত দিয়েছে। তখন ‘আলী (রাঃ) ‘আব্দুল্লাহ্ বিন্ জা’ফর (রাঃ) কে বললেন: হে ‘আব্দুল্লাহ্! দাঁড়াও। তাকে বেত্রাঘাত করো। তখন ‘আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) বেত্রাঘাত করছিলেন আর ‘আলী (রাঃ) তা গণনা করছিলেন। চল্লিশটি বেত্রাঘাতের পর ‘আলী (রাঃ) বললেন: বেত্রাঘাত বন্ধ করো। অতঃপর তিনি বললেন:

جَلَدَ النَّبِيُّ  أَرْبَعِيْنَ، وَجَلَدَ أَبُوْ بَكْرٍ أَرْبَعِيْنَ، وَعُمَرُ ثَمَانِيْنَ، وَكُلٌّ سُنَّةٌ، وَهَذَا أَحَبُّ إِلَيَّ.

‘‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। আবূ বকর (রাঃ) ও চল্লিশটি বেত্রাঘাত করেন। কিন্তু ’উমর (রাঃ) আশিটি বেত্রাঘাত করেন। তবে চল্লিশটি বেত্রাঘাতই আমার নিকট বেশি পছন্দনীয়’’। (মুসলিম ১৭০৭; আবূ দাউদ ৪৪৮১; ইব্নু মাজাহ্ ২৬১৯)