হারাম ও কবিরা গুনাহ গুনাহ্’র অপকার মোস্তাফিজুর রহমান বিন আব্দুল আজিজ আল-মাদানী ১ টি
গুনাহ্’র নির্ধারিত কিছু শাস্তি রয়েছে যা পরকালে গুনাহ্গারকে অবশ্যই ভুগতে হবে

২২. এ ছাড়াও কিছু গুনাহ্’র নির্ধারিত কিছু শাস্তি রয়েছে যা পরকালে গুনাহ্গারকে অবশ্যই ভুগতে হবে। তা নিম্নরূপ:

সামুরাহ্ বিন্ জুন্দুব (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বেশির ভাগ সময় ভোর বেলায় সাহাবাদেরকে জিজ্ঞাসা করতেন, তোমরা কি কেউ গত রাত কোন স্বপ্ন দেখেছো? তখন সাহাবাদের যে যাই দেখেছেন তাঁর নিকট তা বলতেন। এক সকালে তিনিই ভোর বেলায় সাহাবাদেরকে বললেন: গত রাত আমার নিকট দু’ জন ব্যক্তি এসেছে। তারা আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে বললো: চলুন, তখন আমি তাদের সাথেই রওয়ানা করলাম। যেতে যেতে আমরা এমন এক ব্যক্তির নিকট পৌঁছুলাম যে এক পেশে অথবা চিৎ হয়ে শায়িত। অন্য আরেক জন তার পাশেই দাঁড়িয়ে একটি প্রকান্ড প্রস্তর হাতে। লোকটি পাথর মেরে শায়িত ব্যক্তির মাথা গুঁড়িয়ে দিচ্ছে এবং পাথরটি মাথায় লেগে দূরে ছিটকিয়ে পড়ছে। লোকটি ছিটকে পড়া পাথর খন্ড নিয়ে ফিরে আসতে আসতেই শায়িত ব্যক্তির মাথা পূর্বাবস্থায় ফিরে যাচ্ছে। অতঃপর দাঁড়ানো ব্যক্তি আবারো শায়িত ব্যক্তির মাথায় পূর্বের ন্যায় আঘাত হানছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি আমার সাথীদ্বয়কে বললাম: আশ্চর্য! এরা কারা? আমার সাথীদ্বয় বললো: সামনে চলুন। তখন আমরা সামনে চললাম। যেতে যেতে আমরা আবারো এমন এক ব্যক্তির নিকট পৌঁছুলাম যে বসা অথবা চিত হয়ে শায়িত। অন্য আরেক জন তার পাশেই দাঁড়িয়ে একটি মাথা বাঁকানো লোহা হাতে। লোকটি বাঁকানো লোহা দিয়ে শায়িত ব্যক্তির একটি গাল, নাকের ছিদ্র এবং চোখ ঘাড় পর্যন্ত চিরে ফেলছে। এরপর সে উক্ত ব্যক্তির অন্য গাল, নাকের ছিদ্র এবং চোখটিকেও এমনিভাবে চিরে ফেলছে। লোকটি শায়িত ব্যক্তির এক পার্শ্ব চিরতে না চিরতেই তার অন্য পার্শ্ব পূর্বাবস্থায় ফিরে যাচ্ছে এবং লোকটি বসা অথবা শায়িত ব্যক্তিটির সাথে সে ব্যবহারই করছে যা পূর্বে করেছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি আমার সাথীদ্বয়কে বললাম: আশ্চর্য! এরা কারা? আমার সাথীদ্বয় বললো: সামনে চলুন। তখন আমরা সামনে চললাম। যেতে যেতে আমরা চুলার ন্যায় একটি বড় গর্তের মুখে পৌঁছুলাম। গর্ত থেকে খুব চিৎকার শুনা যাচ্ছে। তখন আমারা গর্তের ভেতরে তাকালে দেখলাম, সেখানে অনেকগুলো উলঙ্গ পুরুষ ও মহিলা। নিচ থেকে কঠিন লেলিহান আগুন তাদেরকে ধাওয়া করছে এবং তা তাদের নিকট পৌঁছুতেই তারা খুব চিৎকারে ফেটে পড়ছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি আমার সাথীদ্বয়কে বললাম: আশ্চর্য! এরা কারা? আমার সাথীদ্বয় বললো: সামনে চলুন। তখন আমরা সামনে চললাম। যেতে যেতে আমরা একটি রক্তিম নদীর পার্শ্বে পৌঁছুলাম। নদীতে জনৈক ব্যক্তি সাঁতার কাটছে। নদীর পার্শ্বে অন্য আরেক জন অনেকগুলো পাথর খন্ড সামনে নিয়ে বসে আছে। লোকটি সাঁতার কাটতে কাটতে পাথর ওয়ালার নিকট এসে হা করতেই সে তার মুখে একটি পাথর গুঁজে দেয়। অতঃপর সে আবারো সাঁতার কাটতে যায় এবং সাঁতার কাটতে কাটতে আবারো পাথর ওয়ালার নিকট আসলে সে পূর্বের ন্যায় আরেকটি পাথর তার মুখে গুঁজে দেয়। ...

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: আমি আমার সাথীদ্বয়কে বললাম: আজ রাত তো আমি অনেকগুলো আশ্চর্যজনক ব্যাপারই দেখলাম তা তোমরা আমাকে খুলে বলবে কি? তখন তারা আমাকে বললো: অবশ্যই আমরা আপনাকে ব্যাপারগুলো এখনই খুলে বলছি। তাই শুনুন। প্রথম ব্যক্তির দোষ এই যে, সে কুর‘আন মাজীদ তিলাওয়াত করে সে মতে আমল করে না এবং ফরয নামায না পড়ে সে ঘুমিয়ে থাকে। দ্বিতীয় ব্যক্তির দোষ এই যে, সে ভোর বেলায় ঘর থেকে বের হয়েই মিথ্যা কথা বলে বেড়ায় যা দুনিয়ার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। আর উলঙ্গ পুরুষ ও মহিলাদের দোষ এই যে, তারা ছিলো ব্যভিচারী ও ব্যভিচারিণী। আর চতুর্থ ব্যক্তিটি হচ্ছে সুদখোর। (বুখারী ১৩৮৬, ৭০৪৭)