প্রশ্ন ৩৫: মহিলাদের সাদা বা হলদে যে পদার্থ বের হয়, সেটা কি পবিত্র নাকি অপবিত্র? উহা অবিরামভাবে বের হওয়া সত্ত্বেও কি অযু করা আবশ্যক হবে? আর বিচ্ছিন্নভাবে বের হলেই বা তার হুকুম কি? কেননা বেশীরভাগ মহিলা -তম্মধ্যে শিক্ষিত মহল উল্লেখযোগ্য- মনে করে যে, এটা স্বাভাবিক সিক্ততা, যাতে অযু করা জরূরী নয়?

উত্তরঃ গবেষণার পর আমার কাছে স্পষ্ট হয়েছে যে, মহিলাদের এই তরল পদার্থ যদি মূত্রাশয় থেকে না এসে গর্ভাশয় থেকে আসে, তাহলে তা পবিত্র। তবে পবিত্র হলেও তা অযু ভঙ্গ করবে। কেননা অযু ভঙ্গকারী হওয়ার জন্য অপবিত্র হওয়া শর্ত নয়। যেমন এই যে বায়ূ- যা পশ্চাদভাগ দিয়ে বের হয়, তার তো কোন দোষ নেই; অথচ তা অযু ভঙ্গ করে। অতএব, অযু অবস্থায় যদি মহিলার এরূপ তরল পদার্থ বের হয়, তাহলে তা অযু ভঙ্গ করবে এবং তাকে নতুনভাবে অযু করতে হবে।

তবে যদি তা অবিরামভাবে চলে, তাহলে অযু ভঙ্গ করবে না। কিন্তু নামাযের সময় হলে সে নামাযের জন্য অযু করবে এবং ঐ অযুতে ঐ ওয়াক্তের ফরয ও নফল নামাযসমূহ আদায় করবে। অনুরূপভাবে কুরআন তেলাওয়াত করতে পারে এবং তার জন্য বৈধ সব কাজ সে করতে পারে। যেমনিভাবে মূত্রবেগ ধারণে অক্ষম ব্যক্তির ক্ষেত্রেও বিদ্বানগণ এ বক্তব্যই পেশ করেছেন। এটাই হলো তরল ঐ পদার্থের বিধান। অর্থাৎ পবিত্রতার দিক বিবেচনায় সেটা পবিত্র। কিন্তু অযু ভঙ্গের দিক বিবেচনায় সেটা অযু ভঙ্গকারী- যদি না সেটা অবিরাম বের হয়। আর অবিরাম বের হলে অযু ভঙ্গ করবে না; তবে মহিলাকে নামাযের সময় হলে নামাযের জন্য অযু করতে হবে- নামাযের সময়ের আগে নয় এবং অযু ধরে রাখতে হবে। পক্ষান্তরে যদি তা অবিরাম না চলে এবং নামাযের সময়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া তার অভ্যাস হয়, তাহলে যে সময়ে বন্ধ থাকে নামাযের সময় চলে যাওয়ার ভয় না থাকলে নামাযকে সেই সময় পর্যন্ত বিলম্বিত করবে। আর নামাযের সময় চলে যাওয়ার ভয় থাকলে অযু করে নামায আদায় করে নিবে। এক্ষেত্রে কম-বেশীর মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। কেননা এর সবই একই রাস্তা দিয়ে বের হয়। সুতরাং কম হোক, বেশী হোক অযু ভঙ্গ করবে। তবে যা শরীরের অন্যান্য অঙ্গ দিয়ে বের হয়- যেমন রক্ত, বমি, তা কম হোক, বেশী হোক অযু ভঙ্গ করবে না।

এদিকে এগুলো অযু ভঙ্গ করবে না মর্মে কতিপয় মহিলার যে বিশ্বাস, ইবনু হাযম (রাহিমাহুল্লাহ)-এর অভিমত ছাড়া তার কোন ভিত্তি আমার জানা নেই। তিনি বলেন, “ইহা অযু ভঙ্গ করে না।” কিন্তু তিনি এর স্বপক্ষে কোন প্রমাণ পেশ করেননি। যদি কুরআন-সুন্নাহ থেকে বা ছাহাবীগণের কথা থেকে এর পক্ষে কোন দলীল থাকত, তাহলে তা দলীল হিসাবেই গৃহীত হত।

যাহোক, মহিলাদের উচিৎ আল্লাহকে ভয় করা এবং নিজেদের পবিত্রতা অর্জনের প্রতি যত্নবান হওয়া। কেননা অপবিত্র অবস্থায় নামায পড়লে তা গৃহীত হবে না- যদিও তারা একশত বার নামায পড়ে। এমনকি কতিপয় আলেম বলেছেন, যে অপবিত্র অবস্থায় নামায পড়ে, সে কুফরী করে। কেননা ইহা আল্লাহর সাথে ঠাট্টার শামিল।