আল-ফিকহুল আকবর মহান আল্লাহর বিশেষণ, তাকদীর ইত্যাদি ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

ফিকহ, আকীদা ও দীনের সকল বিষয়ে কুরআন ও সহীহ হাদীসের উপর নির্ভরতার বিষয়ে ইমাম আযমের কিছু বক্তব্য আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি। আমরা দেখেছি, ইমাম ইয়াহইয়া ইবন মায়ীন (১৫৮-২৩৩ হি) তাঁর সনদে ইমাম আবূ হানীফার নিম্নের বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন:

‘‘আমি আল্লাহর কিতাবের উপর নির্ভর করি। আল্লাহর কিতাবে যা না পাই সে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাত ও নির্ভরযোগ্য রাবীদের সূত্রে নির্ভরযোগ্য রাবীদের থেকে বর্ণিত সহীহ হাদীসগুলোর উপর নির্ভর করি। কিতাব ও সুন্নাতে যা না পাই সে বিষয়ে সাহাবীগণের বক্তব্যের উপর নির্ভর করি। তাঁদের মধ্য থেকে যার মত ইচ্ছা গ্রহণ করি এবং যার মত ইচ্ছা বাদ দেই, তবে তাঁদের মত ছেড়ে অন্য কারো কথার দিকে যাই না। আর যখন বিষয়টি ইবরাহীম নাখয়ী, শা’বী, ইবন সীরীন, হাসান বসরী... পর্যায়ে আসে তখন তাঁরা যেমন ইজতিহাদ করেছেন আমিও তেমন ইজতিহাদ করি।’’[1]

এখানে ইমাম আবূ হানীফা কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট করেছেন:

প্রথমত: দীনের মূল ভিত্তি কুরআন ও হাদীসের উপর। কুরআনে যে বিষয়টি সুস্পষ্ট রয়েছে তা গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক। কুরআনে কোনো বিষয় সুস্পষ্ট না থাকলে হাদীসে তা অনুসন্ধান করতে হবে। কুরআন ও হাদীসের বিদ্যমান কোনো নির্দেশনার বিষয়ে অন্য কোনো ব্যক্তির বক্তব্য, ব্যাখ্যা বা ইজতিহাদ গ্রহণ করার সুযোগ নেই।

দ্বিতীয়ত: হাদীসের ক্ষেত্রে রাবীদের নির্ভরযোগ্যতা ও সনদের পরম্পরার মাধ্যমে হাদীসের বিশুদ্ধতা যাচাই করে গ্রহণ করা জরুরী।

তৃতীয়ত: ওহী বা কুরআন-হাদীসের পরেই ‘রিজালুল ওহী’ বা ‘রিজালুল্লাহ’ বা ‘ওহীর মানুষ’: সাহাবীগণ। কুরআনে তাঁদের সঠিক অনুসরণকে মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও জান্নাতের পথ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[2] কাজেই তাঁদের মতের বাইরে যাওয়া মুমিনের জন্য বৈধ নয়। কুরআন-হাদীসে যে সকল বিষয় নেই সে সকল বিষয়ে এবং কুরআন-হাদীসের ব্যাখ্যার বিষয়ে তাঁদের ইজমা বা ঐকমত্য অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। তাঁদের মতভেদ থাকলে তাঁদের মতের মধ্যেই থাকতে হবে; নতুন কোনো মত গ্রহণ করা যাবে না।

এ প্রসঙ্গে ইমাম আযমের ছাত্র ইমাম হাসান ইবন যিয়াদ লুলুয়ী (২০৪ হি) বলেন, ইমাম আবূ হানীফা বলতেন:


ليس لأحد أن يقول برأيه مع نص عن كتاب الله أو سنة عن رسول الله أو إجماع عن الأمة وإذا اختلف الصحابة على أقوال نختار منها ما هو أقرب الى الكتاب أو السنه ونجتنب عما جاوز ذلك


‘‘আল্লাহর কিতাবে অথবা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সুন্নাতে কোনো বক্তব্য থাকলে অথবা উম্মাতের ইজমা বিদ্যমান থাকলে সে বিষয়ে কিয়াস বা ইজতিহাদ দ্বারা কথা বলার অধিকার কারো নেই। আর যদি সাহাবীগণ মতভেদ করেন তবে আমরা তাঁদের মতগুলোর মধ্য থেকে কুরআন অথবা সুন্নাতের অধিক নিকটবর্তী বক্তব্যটি গ্রহণ করি এবং এর ব্যতিক্রম সব কিছু পরিত্যাগ করি।’’[3]

চতুর্থত: সাহাবীগণের পর আর কারো এরূপ মর্যাদা নেই। তাবিয়ীগণ ও পরবর্তী সকল আলিমের মত বিচার ও যাচাই পূর্বক গ্রহণ বা বর্জন করতে হবে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলতেন:


ما جاء عن الله ورسوله لا نتجاوز عنه وما اختلف فيه الصحابة أخترناه وما جاء عن غيرهم أخذنا وتركنا


‘‘আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) থেকে যা বর্ণিত তার বাইরে আমরা যাই না। যে বিষয়ে সাহাবীগণ মতভেদ করেছেন সে বিষয়ে আমরা একটি গ্রহণ করি। আর অন্যদের থেকে যা বর্ণিত তা আমরা গ্রহণ এবং বর্জন করি।’’[4]

হাদীসের ক্ষেত্রে সনদ সহীহ হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন:


إِذَا جَاءَ الْحَدِيْثُ الصَّحِيْحُ الإِسْنَادِ عَنِ النَّبِيِّ ﷺ أَخَذْنَا بِهِ وَلَمْ نَعْدُهُ


‘‘রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে সহীহ সনদে হাদীস পাওয়া গেলে তাঁর উপরেই আমরা নির্ভর করব, তার বাইরে যাব না।’’[5]

আমরা দেখব যে, এ গ্রন্থে ইমাম আবূ হানীফা বলেছেন:


وَسَائِرُ عَلاَمَاتِ يَوْمِ الْقِيَامَةِ عَلَى مَا وَرَدَتْ بِهِ الأَخْبَارُ الصَّحِيْحَةُ حَقٌّ كَائِنٌ


‘‘কিয়ামতের অন্যান্য সকল পূর্বাভাস, যা সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, তা সবই সত্য এবং ঘটবেই।’’[6]

ইমাম আযম খুব স্পষ্ট করে বলেছেন যে, আকীদার ভিত্তি কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবীগণের মত। পরবর্তী যুগের নতুন বিষয়গুলো বিদআত। তিনি বলেন:


ما الأمر إلا ما جاء به القرآن، ودعا إليه النبي- صلى الله عليه وسلم -، وكان عليه أصحابه حتى تفرق الناس. فأما ما سوى ذلك فمبتدَع محدَث.


‘‘বিষয় তো শুধু তাই যা কুরআন নিয়ে এসেছে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যার দাওয়াত দিয়েছেন এবং মানুষদের দল-ফিরকায় বিভক্ত হওয়ার আগে তাঁর সাহাবীগণ যার উপরে ছিলেন। এগুলো ছাড়া যা কিছু আছে সবই নব-উদ্ভাবিত বিদআত।’’[7]

এ বিষয়ে ইমাম আবূ হানীফা (রাহ), ইমাম আবূ ইউসূফ (রাহ) ও ইমাম মুহাম্মাদের (রাহ) মত ও আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের আকীদা ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইমাম আবূ জাফার তাহাবী (৩২১ হি) বলেন:


وَجَمِيْعُ مَا صَحَّ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ مِنَ الشَّرْعِ وَالبَيَانِ حَقٌّ. ... وَكُلُّ مَا جَاءَ فِيْ ذَلِكَ مِنَ الْحَدِيْثِ الصَّحِيْحِ عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ﷺ فَهُوَ كَمَا قَالَ...


‘‘শরয়ী বিধিবিধান এবং ঈমান-আকীদা বিষয়ক বর্ণনায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে যা কিছু সহীহভাবে বর্ণিত সবই সত্য। ... এ সকল বিষয়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে সহীহ হাদীসে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সবই তিনি যেরূপ বলেছেন সেরূপই বিশ্বাস করতে হবে।’’[8]

এভাবে আমরা দেখছি যে, দীনের সকল বিষয়ের ন্যায় আকীদার ক্ষেত্রেও মূল ভিত্তি হলো কুরআন কারীম, সহীহ হাদীস এবং এরপর সাহাবীগণের মত। আকীদা ও ফিকহের মৌলিক পার্থক্য হলো, ফিকহের ক্ষেত্রে ইজতিহাদ, কিয়াস, যুক্তি বা আকলী দলীলের প্রয়োজন হতে পারে, কিন্তু আকীদার ক্ষেত্রে এর কোনো সুযোগ নেই। এক্ষেত্রে কুরআন, সুন্নাহ ও সাহাবীগণের অনুসরণই একমাত্র করণীয়। কারণ ফিকহের বিষয়বস্ত্ত পরিবর্তনশীল। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বা সাহাবীগণের যুগে ছিল না এমন কোনো নতুন বিষয়ে ফিকহী মত জানার প্রয়োজন হতে পারে। কিন্তু আকীদার বিষয়বস্ত্ত মহান আল্লাহর সত্তা, গুণাবলি, নবী-রাসূলগণ... ইত্যাদি। এগুলো অপরিবর্তনীয়। এক্ষেত্রে মুমিনের একমাত্র দায়িত্ব রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ও সাহাবীগণের আকীদা জানা ও মানা। এ বিষয়ে ইমাম আবূ ইউসূফ বলেন:


لَيْسَ التَّوْحِيْدُ بِالْقِيَاسِ.... لأَنَّ الْقِيَاسَ يَكُوْنُ فِيْ شَيْءٍ لَهُ شِبْهٌ وَمِثْلٌ، فَاللهُ تَعَالَى وَتَقَدَّسَ لاَ شِبْهَ لَهُ وَلاَ مِثْلَ لَهُ... فَقَدْ أَمَرَكَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ أَنْ تَكُوْنَ تَابِعاً سَامِعاً مُطِيْعاً وَلَوْ يُوَسَّعُ عَلَى الأُمَّةِ الْتِمَاسُ التَّوْحِيْدِ وَابْتِغَاءُ الإِيْمَانِ بِرَأْيِهِ وَقِيَاسِهِ وَهَوَاهُ إِذَنْ لَضَلُّوا، أَلَمْ تَسْمَعْ إِلَى قَوْلِ اللهِ: (وَلَوِ اتَّبَعَ الْحَقُّ أَهْوَاءَهُمْ لَفَسَدَتِ السَّمَوَاتُ وَالأَرْضُ وَمَنْ فِيهِنَّ) فَافْهَمْ مَا فُسِّرَ بِهِ ذَلِكَ.


‘‘তাওহীদ বা আকীদা কিয়াস দ্বারা শেখা যায় না। .... কারণ কিয়াস তো চলে এমন বিষয়ে যার তুলনা ও নমুনা আছে। আর মহান মহাপবিত্র আল্লাহর তো কোনো তুলনাও নেই এবং নমুনাও নেই। মহান আল্লাহ তোমাকে নির্দেশ দিয়েছেন যে তুমি অনুসরণ করবে, শুনবে ও আনুগত্য করবে। যদি উম্মাতকে তাওহীদ সন্ধান ও ঈমান অর্জনের জন্য নিজস্ব মত, কিয়াস ও পছন্দের সুযোগ দেওয়া হয় তবে সবাই বিভ্রান্ত হয়ে যাবে। তুমি কি শুন নি? মহান আল্লাহ বলেছেন: ‘সত্য যদি এদের মতামত-পছন্দের অনুগত হতো তবে বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ত আকাশমন্ডলী, পৃথিবী এবং এতদুভয়ের মধ্যবর্তী সকল কিছু।’[9] কাজেই এ আয়াতের তাফসীর ভাল করে হৃদয়ঙ্গম কর।’’[10]

বস্ত্তত কিয়াস, ইজতিহাদ, আলিমগণের মত, যুক্তি ইত্যাদির ক্ষেত্র ইলমুল ফিকহ। গাইব বা আকীদার ক্ষেত্রে কুরআন ও সুন্নাহর নির্দেশনাকে আক্ষরিকভাবে বিশ্বাস করাই নিরাপত্তার একমাত্র পথ। নিজের পছন্দ, বুদ্ধি বা অন্যের মতের উপর নির্ভর করে ওহীর বক্তব্যের সহজ অর্থকে ব্যাখ্যা করে ঘুরানো বিভ্রান্তির দরজা খুলে দেয়। পরবর্তীতে আমরা দেখব যে, ইমাম আবূ হানীফা এরূপ ব্যাখ্যার কঠোর প্রতিবাদ করেছেন। সকল ক্ষেত্রে কুরআনের বক্তব্যের স্বাভাবিক আক্ষরিক অর্থ গ্রহণ করতে ও ব্যাখ্যার নামে আক্ষরিক অর্থ বাতিল করতে নিষেধ করেছেন। হানাফী মাযহাবের ইমাম-ত্রয় ও আহলুস সুন্নাতের মূলনীতি উল্লেখ করে ইমাম তাহাবী বলেন:


لا نَدْخُلُ فِي ذَلِكَ مُتَأَوِّلِينَ بِآرَائِنَا، وَلا مُتَوَهِّمِينَ بِأَهْوَائِنَا ، فَإِنَّهُ مَا سَلِمَ فِي دِينِهِ إِلا مَنْ سَلَّمَ لِلَّهِ عَزَّ وَجَلَّ وَلِرَسُولِهِ ﷺ.


‘‘আমরা আমাদের রায়, মত বা ইজতিহাদ দিয়ে ব্যাখ্যা করে বা আমাদের পছন্দ-অপছন্দের উপর নির্ভর করে এ বিষয়ে প্রবেশ করি না। কারণ দীনের বিষয় মহান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (ﷺ) উপর পরিপূর্ণভাবে ন্যস্ত না করা পর্যন্ত কেউই নিজের দীনকে নিরাপদ করতে পারবে না।’’[11]

এ প্রসঙ্গে মোল্লা আলী কারী হানাফী ‘আল-ফিকহুল আকবার’ গ্রন্থের ব্যাখ্যায় বলেন: ‘‘আমাদের রবব মহান আল্লাহ আমাদেরকে তাওহীদ বা দীনের ভিত্তির বিষয়ে অমুকের মত, তমুকের অনুভূতি, কারো পছন্দ বা কারো আবেগ-চিন্তার মুখাপেক্ষী করেন নি। (এ বিষয়ে কুরআন-সুন্নাহর বাইরে কোনো কিছুরই প্রয়োজন আমাদের নেই।) এজন্য আমরা দেখি যে, যারা কুরআন ও সুন্নাহ-এর ব্যতিক্রম করেছেন তারা মতভেদ ও দ্বিধার মধ্যে নিপতিত হয়েছেন। আল্লাহ বলেছেন:


الْيَوْمَ أَكْمَلْتُ لَكُمْ دِينَكُمْ وَأَتْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي وَرَضِيتُ لَكُمُ الإِسْلامَ دِينًا


‘‘আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পূর্ণ করলাম, তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম।’’[12]

কাজেই দীনকে পূর্ণ করার জন্য আমাদের কুরআন ও সুন্নাহর বাইরে আর কোনো কিছুরই প্রয়োজন নেই। আর আল্লাহ বলেছেন:


أَوَلَمْ يَكْفِهِمْ أَنَّا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ يُتْلَى عَلَيْهِمْ


‘‘তাদের জন্য কি এ-ই যথেষ্ট নয় যে, আমি তোমার উপর কিতাব নাযিল করেছি যা তাদের উপর পঠিত হয়?’’[13]

আল্লাহ আরো বলেছেন[14]:


وَمَا آَتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا


‘‘রাসূল তোমাদেরকে যা দিয়েছেন তোমরা তা গ্রহণ করো, আর তিনি যা নিষেধ করেছেন তা থেকে তোমরা বিরত থাক।’’[15]

আমরা দেখেছি, ইমাম তাহাবী বলেছেন: ‘‘শরীয়ত ও ব্যাখ্যায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে সহীহভাবে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সবই সত্য।’’[16] ইমাম তাহাবীর এ কথার ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবন আবিল ইয্য হানাফী বলেন: ‘‘প্রত্যেক বিদআতী ফিরকার মূলনীতি এই যে, কুরআন ও হাদীসের বক্তব্যকে তারা তাদের বিদআতের মানদন্ডে অথবা যাকে তারা ‘আকলী’ বা ‘বুদ্ধিবৃত্তিক দলিল’ ও ‘যুক্তি’ বলে কল্পনা করে তার মানদন্ডে বিচার করে। যদি কুরআন-হাদীসের বক্তব্য তাদের বিদআত বা ‘যুক্তি’র সাথে মিলে যায় তবে তারা সে বক্তব্যটিকে ‘মুহকাম’ বা দ্ব্যর্থহীন ও সুস্পষ্ট বলে দাবি করে, তা গ্রহণ করে এবং তাকে দলীল হিসেবে পেশ করে। আর কুরআন-হাদীসের যে বক্তব্য তাদের বিদআত বা ‘যুক্তি’-র সাথে না মিলে সে বক্তব্যকে তারা ‘মুতাশাবিহ’ বা দ্ব্যর্থবোধক ও অস্পষ্ট বলে উল্লেখ করে এবং তা প্রত্যাখ্যান করে। ... অথবা তারা এ বক্তব্যের অর্থ বিকৃত করে এবং এরূপ বিকৃতিকে তারা ‘ব্যাখ্যা’ বলে আখ্যায়িত করে। এজন্যই আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত কঠিনভাবে তাদের এ সকল কর্মের প্রতিবাদ করেছেন। আহলুস সুন্নাতের রীতি এই যে, কোনো ভাবেই তাঁরা কুরআন বা সহীহ হাদীসের কোনো বক্তব্য পরিত্যাগ করেন না বা তার বাইরে যান না। কুরআন বা সহীহ হাদীসের মুকাবিলায় কোনো ‘আকলী দলীল’ বা কোনো ব্যক্তির বক্তব্য তাঁরা পেশ করেন না। ইমাম তাহাবী এ বিষয়টির দিকেই ইঙ্গিত করেছেন।’’[17]


[1] ইবনু মায়ীন, তারীখ (দূরীর সংকলন) ৪/৬৩; সাইমারী, আখবারু আবী হানীফাহ, পৃ. ৪২।

[2] সূরা (৯) তাওবা: ১০০ আয়াত।

[3] কুরাশী, আব্দুল কাদির, তাবাকাতুল হানাফিয়্যাহ ২/৪৭৩।

[4] কুরাশী, আব্দুল কাদির, তাবাকাতুল হানাফিয়্যাহ ২/৪৭৩।

[5] ইবনু আব্দিল বার, আল ইনতিকা ফী ফাযাইলিস সালাসাতিল আইম্মা, পৃ ১৪৪।

[6] মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ১৯০-১৯২ ও ৩২৭।

[7] সায়িদ নাইসাপূরী, আল-ই’তিকাদ, পৃষ্ঠা ৯১।

[8] তাহাবী, ইমাম আবূ জাফর, মাতনুল আকীদাহ আত-তাহাবিয়্যাহ, পৃ. ১০, ১৪।

[9] সূরা (২৩) মুমিনূন: ৭১ আয়াত।

[10] ইবন মানদাহ, আত-তাওহীদ ৩/৩০৪-৩০৬; যাকারিয়্যা, আশ-শিরক ১/৮৬-৮৮।

[11] ইমাম তাহাবী, আল-আকীদাহ আত-তাহাবিয়্যাহ, পৃ. ১০।

[12] সূরা (৫) মায়িদা: ৩ আয়াত।

[13] সূরা (২৯) আনকাবূত: ৫১ আয়াত।

[14] সূরা হাশর ৭ আয়াত।

[15] মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ২৩।

[16] তাহাবী, ইমাম আবূ জাফর, মাতনুল আকীদাহ আত-তাহাবিয়্যাহ, পৃ. ১৪।

[17] ইবনু আবিল ইয্য হানাফী, শারহুল আকীদাহ আত-তাহাবিয্যাহ, পৃ. ৩৫৪-৩৫৫।