সা’ব বিন মু’আজ দূর্গ বিজয় (فَتْحُ حِصْنِ الصَّعَبِ بْنِ مُعَاذُ):

অত্যন্ত সুরক্ষিত ও মজবুত দূর্গ হিসেবে নায়িম দূর্গের পরেই ছিল সা’ব বিন মু’আয দূর্গের স্থান। মুসলিমগণ হুবাব বিন মুনযির আনসারী (রাঃ)-এর নেতৃত্বাধীনে এ দূর্গের উপর আক্রমণ পরিচালনা করেন এবং তিন দিন যাবত তারা অবরোধ করে রাখেন। তৃতীয় দিবসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এ দূর্গের উপর বিজয় লাভের জন্য বিশেষ ভাবে প্রার্থনা করেন।

ইবনু ইসহাক্বের বর্ণনা সূত্রে জানা যায় যে, আসলাম গোত্রের শাখা বনু সাহামের লোকজন, রাসূলে কারীম (ﷺ)-এর খিদমতে উপস্থিত হয়ে আরয করলেন, ‘আমরা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে পড়েছি, আমাদের সহায় সম্পদ বলতে কিছু্ নেই।’ নাবী কারীম (ﷺ) প্রার্থনা করলেন,

‏(‏اللهم إِنَّكَ قَدْ عَرَفْتَ حَالَهُمْ، وَأَنَّ لَيْسَتْ بِهِمْ قُوَّةٌ، وَأَنْ لَّيْسَ بِيَدِيْ شَيْءٌ أُعْطِيْهِمْ إِيَّاهُ، فَافْتَحْ عَلَيْهِمْ أَعْظَمَ حُصُوْنِهَا عَنْهُمْ غَنَاءً، وَأَكْثِرْهَا طَعَامًا وَوَدَكًا‏)

‘হে আল্লাহ! তাঁদের অবস্থা সম্পর্কে আপনি সব চাইতে বেশী জানেন, আপনি অবশ্যই অবগত রয়েছেন যে, তাঁদের সহায় সম্পদ কিছু নেই এবং আমার নিকটেও এমন কিছু নেই যা দিয়ে আমি তাঁদের সাহায্য করতে পারি। অতএব, ইহুদীদের এমন এক দূর্গের উপর তাঁদেরকে বিজয় দান করুন যা তাঁদের জন্য সকল দিক দিয়ে ফলোৎপাদক হয় এবং যেখান থেকে অধিক খাদ্য ও চর্বি হস্তগত হয়।’

এরপর সাহাবীগণ (রাঃ) প্রবল পরাক্রমে আক্রমণ পরিচালনা করলেন এবং মহান আল্লাহ সা’ব বিন মোয়ায দূর্গের উপর মুসলিমগণকে বিজয় প্রদান করলেন। খায়বারে এমন কোন দূর্গ ছিল না যেখানে এ দূর্গের তুলনায় অধিক খাদ্য ও চর্বি ছিল।[1]

আল্লাহ তা‘আলার দরবারে দু‘আ করার পর নাবী কারীম (ﷺ) যখন এ দূর্গে আক্রমণ পরিচালনার জন্য মুসলিমগণকে নির্দেশ প্রদান করলেন তখন আক্রমণকারীদের মধ্যে বনু আসলাম অগ্রভাগে ছিল। এখানেও দূর্গের সামনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও সংঘর্ষ হয়। অতঃপর সূর্যাস্ত যাওয়ার পূর্বেই দূর্গটি মুসলিমগণের দখলে আসে। এ দূর্গের মধ্যে মুসলিমগণ কিছু মিনজানীক ও দাববাব[2] যন্ত্রও প্রাপ্ত হন।

ইবনু ইসহাক্বের বর্ণনায় যে কঠিন ক্ষুধার আলোচনা করা হয়েছে তার ফল হচ্ছে লোকেরা (বিজয় অর্জন হতে না হতেই) গাধা যবেহ করল এবং চুলায় চাপিয়ে দিয়ে তা রান্নার আয়োজন করল। রাসূলে কারীম (ﷺ) যখন এ ব্যাপারটি অবগত হলেন তখন গৃহপালিত গাধার মাংস খেতে নিষেধ করে দিলেন।

[1] ইবনু হিশাম ২য় খন্ড ৩৩২ পৃঃ।

[2] কাষ্ঠ নির্মিত এবং সুরক্ষিত গাড়ীর ন্যায় নীচে কয়েকজন মানুষ প্রবেশ করে দেওয়ালের নিকটে পৌঁছে শত্রু হতে আত্মরক্ষা করে দূর্গের দেওয়াল ফুটো করতো তাকে দাববাবা বলা হত। বর্তমানে ট্রাঙ্ককে দাববাবা বলা হয়। মিনজানীক এক প্রকার যুদ্ধাস্ত্র দ্বারা বড় বড় প্রস্তর নিক্ষেপ করা হয়, যাকে তোপ বলা যেতে পারে।