মক্কা অভিমুখে মুসলিমগণের অগ্রযাত্রা (الْمُسْلِمُوْنَ يَتَحَرَّكُوْنَ إِلٰى مَكَّةَ):

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এবং সাহাবীগণ (রাঃ) মক্কা অভিমুখে ছিলেন অগ্রসরমান। যখন তাঁরা যুল হোলায়ফায় গিয়ে পৌঁছলেন তখন কুরবানীর পশুকে হার পরিয়ে দিলেন।[1] উটের পিঠের উঁচু জায়গা কেটে চিহ্নিত করলেন এবং উমরাহর জন্য ইহরাম বাঁধলেন। এর প্রত্যক্ষ উদ্দেশ্য ছিল, লোকজনেরা যেন নিশ্চিন্ত থাকে যে যুদ্ধ করবেন না। কুরাইশদের খবরাখবর সংগ্রহের উদ্দেশ্যে খুযা’আহ সম্প্রদায়ের এক গোয়েন্দাকে প্রেরণ করা হল অগ্রভাগে। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) দলবলসহ উসফান নামক স্থানে যখন পৌঁছলেন তখন এ গোয়েন্দা ফিরে এসে তাঁকে অবহিত করলেন যে, মুসলিমগণের সঙ্গে মুখোমুখী যুদ্ধ করার জন্য কা‘ব বিন লুওয়ায় সাহায্যকারী আহাবীশ (মিত্র) গোত্রকে সংঘবদ্ধ করছে এবং আরও সৈন্য সংগ্রহ করার চেষ্টা করছে। সে আপনার সঙ্গে যুদ্ধ করার এবং আল্লাহর ঘর থেকে আপনাকে বিরত রাখার ব্যাপারে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়েছে।

এ সংবাদ অবগত হওয়ার পর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁর সাহাবীগণের সঙ্গে এক পরামর্শ বৈঠকে মিলিত হলেন এবং ইরশাদ করলেন,

‏(‏أَتَرَوْنَ نَمِيْل إِلٰى ذَرَارِيْ هٰؤُلَاءِ الَّذِيْنَ أَعَانُوْهُمْ فَنَصِيْبَهُمْ‏؟‏ فَإِنْ قَعَدُوْا قَعَدُوْا مُوْتُوْرِيْنَ مَحْزُوْنِيْنَ، وَإِنْ نَجَوْا يَكُنْ عُنُقٌ قَطَعَهَا اللهُ، أَمْ تُرِيْدُوْنَ أَنْ نَؤمَ هٰذَا الْبَيْتِ فَمَنْ صَدَّنَا عَنْهُ قَاتَلْنَاهُ‏؟‏‏)‏

‘আপনাদের অভিমত কি এটা যে, যে সকল লোক আমাদের বিরুদ্ধে কুরাইশদের সাহায্য করার প্রস্তুতি নিচ্ছে আমরা তাদের পরিবারবর্গের উপর আক্রমণ চালিয়ে সে সব দখল করে নেই। এর পর যদি তারা চুপচাপ বসে পড়ে তাহলে সেটা হবে মঙ্গলজনক। এতে আমরা ধারণা করব যে, যুদ্ধের ক্ষয় ক্ষতি, চিন্তা ভাবনা এবং দুঃখ-কষ্ট ভোগ করেই তারা বসে পড়েছে। আর যদি তারা পলায়ন করে তাতেও তাদের এমন এক অবস্থার মধ্যে দেখব যে আল্লাহ তাদের গর্দান কেটে দিয়েছেন অথবা আপনারা এ অভিমত পোষণ করছেন যে আমরা কা‘বা গৃহ অভিমুখে অগ্রসর হতে থাকি। আমাদের যাত্রাপথে কেউ প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করলে আমরা তার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হব।

রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কথার পরিপ্রেক্ষিতে আবূ বাকর সিদ্দীক (রাঃ) আরয করলেন যে, ‘কী করতে হবে তা আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ভাল জানেন, তবে আমরা এসেছি উমরাহ পালন করতে, যুদ্ধ করতে নয়। অবশ্য কেউ যদি আমাদের এবং আল্লাহর ঘরের মধ্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে, তাহলে আমরা তাদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে বাধ্য হব।’

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, ‘ভাল কথা, চল তোমরা সামনের দিকে অসগ্রসর হতে থাক।’ কাজেই সকলে যাত্রা শুরু করলেন।

[1] হাদী ঐ পশুকে বলা হয় যা হজ্জ এবং উমরাহ পালনকারীগণ মক্কা অথবা মদীনায় যবহ করেন। জাহেলিয়াত যুগে আববের প্রচলিত নিয়ম ছিল যে হাদীর পশু ভেড়া কিংবা বকরী হলে তার গলায় হার দেযা হত। পক্ষান্তরে তা উট হলে তার পিঠের উঁচু অংশ চিরে কিছুটা রক্ত বের করে দেয়া হত। এ পশুকে কোন ব্যক্তি বাধা দিতে না। শরীয়তে এ বিধান বহাল রয়েছে।