এটা ছিল এ যুদ্ধের প্রথম হত্যা। এর ফলে যুদ্ধের অগ্নি প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠল। তখন নিয়ম ছিল যে, যুদ্ধের পূর্বে প্রত্যেক পক্ষের বিখ্যাত বীর পুরুষরা রণাঙ্গনে অবতীর্ণ হয়ে অন্যপক্ষকে সমরে আহবান করত। তখন ঐ পক্ষের নির্বাচিত কয়েকজন খ্যাতনামা বীর এ আহবানের উত্তর প্রদানের জন্যে বীরদর্পে অগ্রসর হতো। এ ক্ষেত্রেও তাই হলো। অভিযান ক্ষুব্ধ ‘উতবাহ ও তার সহোদর শায়বাহ ও পুত্র ওয়ালীদসহ চীৎকার করতে লাগল ‘কে আসবি আয়, আমাদের তরবারীর খেলা দেখে যা।’ তার এ আহবান শুনে তিনজন আনসার বীর উলঙ্গ তরবারী হাতে সেই দিকে ধাবিত হলেন। তারা হলেন আউয (রাঃ), মুআব্বিয (রাঃ), এরা দুজন হারিসের পুত্র ছিলেন এবং তাদের মাতার নাম ছিল আফরা-। তৃতীয় জন হলেন আব্দুল্লাহ ইবনু রাওয়াহা। কুরাইশরা তাদের জিজ্ঞেস করল, তোমরা কে? তাঁরা বললেন, ‘আমরা আনসার’। তখন তারা বলল, ‘আপনাদের আমরা চাচ্ছি না। আমরা আমাদের চাচাতো ভাইদের চাচ্ছি এবং একজন চিৎকার করে বলতে লাগল ‘হে মুহাম্মাদ (ﷺ), মদীনার এ চাষাগুলোর সাথে যুদ্ধ করা আমাদের পক্ষে অসম্মানজনক। আমাদের যোগ্য যোদ্ধা পাঠাও। তার একথা শুনে রাসূলুল্লাহ এ তিনজন আনসার বীরকে তাদের স্ব- স্ব স্থানে ফিরে যেতে বললেন। তারপর তিনি নিজের পরমাত্মীয়দের মধ্যে হতে হামযাহ (রাঃ), উবাইদাহ বিন হারিস (রাঃ) ও আলী (রাঃ)-কে সম্বোধন করে বললেন, ‘তোমরা তাদের মোকাবেলায় অগ্রসর হও। এরা অগ্রসর হলে কুরাইশগণ বলল, ‘তোমরা কে?’ তাঁরা তাদের পরিচয় দান করলেন। কাফিররা তাদেরকে আক্রমণ করল। ওয়ালীদের সাথে আলী (রাঃ)-কে, শায়বাহর সাথে হামযাহর (রাঃ) এবং ‘উতবাহর সাথে উবাইদাহ (রাঃ)-এর যুদ্ধ বেধে গেল। মুহূর্তের মধ্যে শায়বাহ ও ওয়ালীদের মস্তক ভূলণ্ঠিত হয়ে পড়লো। উবাইদাহ (রাঃ) ছিলেন তখন সবার চেয়ে বৃদ্ধ। তিনি ও ‘উতবাহ পরস্পরে তরবারীর আঘাতে গুরুতররূপে আহত হয়ে পড়ল। ইতোমধ্যে আলী ও হামযাহ (রাঃ) নিজ নিজ প্রতিদ্বন্দ্বীকে খতম করে এসে ‘উতবাহর উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তারা কাজ শেষ করেন ও উবাইদাহকে তুলে আনলেন। তার মুখে আওয়াজ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল এবং ক্রমাগতভাবে বন্ধই থাকল। শেষ পর্যন্ত যুদ্ধের ৪র্থ বা ৫ম দিন যখন মুসলিমরা মদীনা প্রত্যাবর্তনের পথে সাফরা নাম উপত্যকা অতিক্রম করছিলেন ঐ সময় উবাইদাহ (রাঃ) মৃত্যুবরণ করেন।

আলী (রাঃ) আল্লাহর নামে শপথ করে বলতেন, ‘এ আয়াতটি আমাদেরই ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়,

‏(‏هٰذَانِ خَصْمَانِ اخْتَصَمُوْا فِيْ رَبِّهِمْ‏)‏ الآية ‏[‏الحج‏:‏19‏]‏‏

‘‘এরা বিবাদের দু’টি পক্ষ, (মু’মিনরা একটি পক্ষ, আর সমস্ত কাফিররা আরেকটি পক্ষ) এরা এদের প্রতিপালক সম্বন্ধে বাদানুবাদ করে।’ (আল-হাজ্জ ২২ : ১৯)