গৃহ থেকে গুহা পর্যন্ত (مِنْ الدَّارِ إِلَى الْغَارِ):

রাসূলুল্লাহ ২৭শে সফর চতুর্দশ নবুওয়াত সাল মোতাবেক ১২/১৩ই সেপ্টেম্বর, ৬২২[1] খ্রিষ্টাব্দ মধ্যরাতের সামান্য কিছু সময় পর নিজ গৃহ থেকে বাহির হয়ে জান-মালের ব্যাপারে সর্বাধিক নির্ভরযোগ্য সঙ্গী আবূ বাকর (রাঃ)-এর গৃহে গমন করেছিলেন এবং সেখান থেকে পিছনের একটি জানালা দিয়ে বাহির হয়ে দুজনই পথ বেয়ে অগ্রসর হতে থাকেন যাতে রাতের অন্ধকার থাকতেই তারা মক্কা নগরীর বাহিরে চলে যেতে সক্ষম হন। কারণ, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জানতেন যে, কুরাইশগণ তাঁকে দেখতে না পেলে সর্বশক্তি দিয়ে তার সন্ধানে লেগে পড়বে এবং সর্বপ্রথম যে রাস্তায় দৃষ্টি দেবে তা হচ্ছে মদীনার কর্মব্যস্ত রাস্তা যা উত্তর দিকে গেছে। এ জন্য তাঁরা সেই পথে যেতে থাকলেন যে পথটি ছিল সেই পথের সম্পূর্ণ বিপরীতমুখী। অর্থাৎ ইয়ামান যাওয়ার পথ যা মক্কার দক্ষিণে দিকে অবস্থিত ছিল। এ পথ ধরে পাঁচ মাইল দূরত্ব অতিক্রম করে সুপ্রসিদ্ধ সওর পর্বতের পাদদেশে গিয়ে পৌঁছলেন। এ পর্বতটি ছিল খুব উঁচু, পর্বত শীর্ষে আরোহণের পথ ছিল অাঁকা-বাঁকা ও পাক জড়ানো। আরোহণের ব্যাপারটিও ছিল অত্যন্ত আয়াস-সাধ্য। এ পর্বত গাত্রের এখানে-সেখানে ছিল প্রচুর ধারালো পাথর যা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পদযুগলকে ক্ষত-কিক্ষত করে ফেলেছিল। বলা হয়েছে যে, তিনি পদচিহ্ন গোপন করার জন্য আঙ্গুলের উপর ভর দিয়ে চলছিলেন। এ জন্য তাঁর পা জখম হয়েছিল। যাহোক, আবূ বাকর (রাঃ)-এর সহায়তায় তিনি পর্বতের শৃঙ্গদেশে অবস্থিত গুহার পাশে গিয়ে পৌঁছলেন। এ গুহাটিই ইতিহাসে ‘গারে সওর বা সওর গুহা’ নামে পরিচিত।[2]

[1] রাহমাতুল্লিল আলামীন ১ম খন্ড ৯৫ পৃঃ। সফরের এ মাস চতুর্দশ নবুওয়াত বর্ষের ঐ সময় হবে যখন বৎসর আরম্ভ হবে মুহারম মাসে। আর যদি রাসূলুল্লাহ (সাঃ) যে মাসে নবুওয়াত প্রাপ্ত হয়েছিলেন সে মাস থেকে বৎসর গণনা করা হয়ে থাকে তাহলে তা ছিল নবুওয়াত ত্রয়োদশ বর্ষের সফর মাসে। সাধারণ ইতিহাসবিদগণ প্রথম হিসাবটি গ্রহণ করেছেন। আর যাঁরা দ্বিতীয়টি গ্রহণ করেছেন, তাঁরা ঘটনার ক্রমধারায় ভুল করেছেন। আমি মুহাররম থেকে বছরের শুরু ধরেছি।

[2] রহমাতুল্লিল আলামীন ১ম খন্ড ৯৫ পৃঃ। শাইখ আবদুল্লাহ মুখাতসারুস ১৬৭ পৃঃ।